আমি জানি এই উৎসবটি বাংলাদেশে যারা ইংরেজিতে লেখেন তাদেরকে অনেকখানি প্রমোট করে, কিন্তু বাংলা সাহিত্যকেও তুলে ধরছে যথাযথভাবে। এবার থেকে অধিকাংশ সেশন সঙ্গে সঙ্গেই বাংলা বা ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করে দেওয়া হবে, এটা শুনে বেশ আশান্বিত হলাম। এতে সবার সঙ্গে একটা ভাষিক যোগাযোগ গড়ে উঠবে। বাংলা ভাষার সাহিত্য সম্পর্কে বিদেশীরা আরো কৌতুহলী হবেন। আমরা সবাই সমকালীন বৈশ্বিক সাহিত্য সম্পর্কে ধারণা পাবো।
হ্যাঁ, লিট ফেস্টকে আমি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মনে করি। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে বাইরের লেখক যারা আসছেন তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ স্থাপন হচ্ছে। তাদের মনোভাব আমরা জানতে পারছি, তারা সাহিত্য নিয়ে কী ভাবছেন, আমরা কী ভাবছি- এই যে আদান-প্রদান হচ্ছে এটা গুরুত্বপূর্ণ। এই জরুরি কাজটা ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’ থেকে শুরু হয়েছে, এটা খুবই আশার কথা।
এবার যেহেতু নোবেলজয়ী ভি. এস. নাইপল আসছেন সেহেতু এই উৎসবটা অন্য একটা বাড়তি উপভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তবে ভি. এস. নাইপলকে আমার খুব বেশি পড়া হয়নি। তাঁর সামান্য কিছু লেখা আমি পড়েছি। যেমন, ‘এ হাউজ ফর মি. বিশ্বাস’ বলে তাঁর একটা বিখ্যাত বই আছে। এছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে তাঁর কিছু গল্প পড়েছিলাম। সম্ভবত বইটার নাম ছিলো ‘মিগেল স্ট্রিট’। তাঁর ভারত ভ্রমণ নিয়ে যে বইটা ছিল তা আমি পড়েছি অনেক আগে। ভি. এস. নাইপল বর্তমান সময়ে জীবিত লেখকদের মধ্যে উঁচু মানের একজন লেখক তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং এরকম একজন লেখক যদি এই উৎসবে আসেন তাহলে তা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের বিষয় বলে আমি মনে করি।
আমার কেনো যেনো মনে হয়, বাইরের দেশের লেখকদের বাংলাদেশের সাহিত্য বিষয়ে ধারণাটা পরিষ্কার না। যদিও রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, তারাশঙ্কর, মানিকের দু-একটি গল্প নিয়ে কিছুটা ধারণা আছে। এর বাইরে কিন্তু এদের কোনো ধারণা নেই। এর বাইরেও যে বাংলা ভাষায় অনেক ভালো লেখক আছেন, অনেক ভালো লেখা হয়েছে। বিশেষ করে অনেক অনেক অসাধারণ উপন্যাস এবং ছোটগল্প লেখা হয়েছে। অসাধারণ কিছু কবিতা লেখা হয়েছে রবীন্দ্র, নজরুল, জীবনানন্দের পরেও। কিন্তু এই ধারণাটা তো এখনকার লেখকদের মধ্যে নেই। আমার মনে হয় এই ধারণা তাঁদের কাছে পৌঁছানো দরকার যে, তোমরা যাদের যাদের জানো তাদের বাইরেও অনেক অনেক ভালো লেখক এই ভাষায় আছেন। এই বার্তাটা ভি. এস. নাইপলের মতো বড় মাপের লেখকের কাছে পৌঁছাবে বলে আমি মনে করি।
শ্রুতিলিখন : আমিনুল ইসলাম ও ইয়াসমিন ইতি
আরো পড়ুন-