কবির নির্বাচনী সাক্ষাৎকার

noname

কবি নির্মলেন্দু গুণ ১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোণা-বারহাট্টা আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁর ছিলো কুমির মার্কা। প্রথমে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে ব্যর্থ হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই সময় এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন লেখক গবেষক আনোয়ার কবির। লেখাটি পুনর্মুদ্রণ করা হল আজ কবির জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানিয়ে। 



প্রশ্ন : নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
উত্তর : মারাত্মক প্রশ্ন। নির্বাচনের পূর্বে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। এরশাদের আমলে হয়তোবা এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব হতো। কিন্তু এখন এরশাদের আমল নয়। সুতরাং এখন এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। শুধু আশাবাদী এইটুকু বলতে পারি।
প্রশ্ন : নির্বাচনে জয়ী হলে আপনার পরবর্তী লক্ষ্য কী হবে?
উত্তর : পরবর্তী লক্ষ্য হবে আমার অবহেলিত এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত করা এবং জাতীয় সংসদে সাংবিধানিক সমস্যাগুলোর সমাধাকল্পে ভূমিকা রাখা। পাশাপাশি আমার ইচ্ছা আছে নির্বাচনী অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি চমৎকার গ্রন্থ রচনার।
প্রশ্ন : আপনি যেহেতু মূলত একজন কবি সুতরাং গ্রন্থটি কি পদ্যে লিখিত হবে না গদ্যে?
উত্তর : গ্রন্থটি হবে গদ্যে এবং রাজনীতি ভিত্তিক।
প্রশ্ন : তাহলে পাঠকরা আশা করতে পারেন আপনার কাছ থেকে ভবিষ্যতে তারা পদ্য ব্যতীত অন্যান্য লেখাও পাবে?
উত্তর : পাবেন, ইনশাল্লাহ্।
প্রশ্ন : আমরা জানি আপনি একজন বিশিষ্ট কবি। সুতরাং নির্বাচনে জয়ী হলে সংসদে আপনি কি কবিদের কথা বলবেন?
উত্তর : আমি কবিদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য পেশাজীবী হিসেবে সংসদে যাচ্ছি না। সুতরাং কবিদের প্রতি আমার বিশেষ কোন দায়িত্ব থাকার কথা নয়। আমি সেখানে আমার এলাকার মানুষের প্রতিনিধি হিসাবে যাবো। সুতরাং সংসদে এলাকার সমস্যার কথাই বলব। তবে কবিদের সমস্যাকেও আমি নিশ্চয় তুলে ধরার চেষ্টা করব।
প্রশ্ন : আপনার নির্বাচনী প্রতীক কুমির নেয়ার মধ্যে কি কোন উদ্দেশ্য আছে?
উত্তর : আমি নিজে অত্যন্ত নিরীহ মানুষ। তার উপর স্বতন্ত্র। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা আমাকে করুণার দৃষ্টিতে দেখুক এমন কোনো নিরীহ প্রতীক বেছে নেয়াটা বোকামী হবে ভেবেই আমি এই প্রতীক বেছে নিয়েছি। আপনারা সবাই জানেন যে কুমির সমীহ আদায় করার মতো প্রাণি। জলের রাজা এবং প্রয়োজনে স্থলেও উঠে আসতে পারে। সুতরাং...
প্রশ্ন : আপনার প্রিয় দল আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পাওয়াতে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
উত্তর : প্রথমে কষ্ট পেয়েছিলাম। এখন এ নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমার এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবাসে। এই ভালোবাসা কোনো রাজনৈতিক দলের ভালোবাসার চেয়েও বড়। সুতরাং প্রতিক্রিয়াটা বুঝতেই পারছেন।
প্রশ্ন : আপনি লেখক হিসাবেই পাঠকদের কাছে সবচেয়ে প্রিয়। কিন্তু এখন লেখা ছেড়ে রাজনীতিতে নামলেন কেনো?
উত্তর : লেখা ছেড়ে আসিনি। লেখা ছেড়ে এসেছি কে বললো? আরো নতুন করে লেখার প্রস্তুতিপর্ব হচ্ছে আমার এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ। এর ভেতর দিয়ে আমি আরো অনেক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করছি।
প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?
উত্তর : হত্যাকারীদের আমি অন্য সকল মানুষের মতোই ঘৃণা করি। বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার হবেই হবে...। খুনিরা ও তাদের সহযোগীরা এই হত্যাকাণ্ডে দণ্ড এড়াতে পারবে না।
প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সর্বপ্রথম প্রতিবাদকারী বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর গ্রেফতারে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
উত্তর : আমি তার মুক্তির দাবি করেছি। আমি মনে করি পুরস্কারের যোগ্য একজন বীরকে আমরা তিরস্কার করেছি। এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়।
প্রশ্ন : স্বৈরাচারি এরশাদের বিচারের ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
উত্তর : দেশের প্রচলিত আইনে দেশের সকল নাগরিকই বিচারযোগ্য, সেক্ষেত্রে এরশাদ সাহেবেরও নিশ্চয় বিচার হবে। তার এমন কিছু অপরাধ আছে যা প্রচলিত আইনের আওতায় পড়ে না। সেসব বিচার করার জন্য প্রয়োজনবোধে নতুন আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। মোট কথা সমাজ ও রাজনীতিকে কলুষমুক্ত রাখার প্রয়োজনে আমাদের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের নমনীয়তা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য হবে অত্যন্ত ক্ষতিকর।