পুলিৎজার বিজয়ী অ্যাডাম জনসনের সাক্ষাৎকার

adam jonsonঅ্যাডাম জনসন পুলিৎজার বিজয়ী লেখক। ২০১২ সালে ‘দি অরফ্যান মাস্টার’স সন’-এর জন্য তিনি এই পুরস্কার লাভ করেন। ঢাকা লিট ফেস্টে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি উপন্যাসটি লিখতে গিয়ে যে ধরনের গবেষণা পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন সেগুলো এবং উপন্যাস ও বাস্তবের ভেতরকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করছেন।

ঢাকা লিটফেস্টে অংশগ্রহণ করে কেমন বোধ করছেন? বাংলাদেশে এটাই কি আপনার প্রথম ভ্রমণ?

হ্যাঁ, এটাই প্রথম বাংলাদেশে আসা। ঢাকা অপূর্ব সুন্দর শহর। আমি এই ধরনের সাহিত্য আসর খুব পছন্দ করি। আমি মনে করি, এই ধরনের সম্প্রদায়কে একসঙ্গে জড়ো করে তাদের বক্তব্যের উপর জোর ও সত্য উচ্চারণে সুযোগ করে দেওয়া একটা বিরাট সম্পদ হয়ে থাকবে। এটার অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত।

এবার আপনার উপন্যাস দি অরফ্যান মাস্টারস সনএর প্রসঙ্গে আসি। উত্তর কোরিয়া এটার বিষয়বস্তু। এক নির্জনবাসী রাজ্যের ঝামেলাপূর্ণ দিকের কথা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে এখানে। উপন্যাসটি লিখতে কোন প্রেরণা আপনাকে উৎসাহিত করেছে?

আচ্ছা। এখানে বলবো যে, আমি শুরু করেছিলাম পাঠক হিসেবে। পৃথিবীর সবচেয়ে নিশ্চুপ ও উৎপীড়িত এই দেশটি নিয়ে আমি বরাবরই কৌতূহলি ছিলাম। হতে পারে পৃথিবীর অনেক জায়গা শারীরিক, আবেগীয় ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভয়ংকর অবস্থানে আছে কিন্তু আমি বলবো উত্তর কোরিয়া তাদের পূর্ণ অস্তিত্বের প্রশ্নে মানবিকতার দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু পাঠক হিসেবে আমি আবিষ্কার করলাম যে, উত্তর কোরিয়াতে মানুষের পূর্ণ প্রতিকৃতি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, কারণ সেখানে বই লেখা অনুমোদিত নয়। উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে থাকা মানুষগুলোও তৎক্ষণাৎ তাদের গল্প বলতে প্রস্তুত নয়। সুতরাং আমি এক বিস্ময় নিয়ে তাদের পক্ষে আমার কণ্ঠে আওয়াজ তুললাম।

আপনি উত্তর কোরিয়ার এক প্রান্তে অবস্থান করেছিলেন পাঁচ দিন। আপনি কীভাবে অন্যান্য নিষিদ্ধ অঙ্গরাজ্যে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিলেন?

কীভাবে টাকার প্রয়োজন মেটানো যায় এটা চিন্তা করাও তাদের রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ। পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে তারা টাকা আয় করেন। কোনো লেখককে প্রবেশ করানোর কোনো ইচ্ছে তাদের ছিল না। কিন্তু তারা যখন আমার সম্পর্কে গুগল করলো, তারা দেখলো যে আমি একজন লেখক। তবুও তারা রাজি হলো। আমি বিশ্বাস করি যে, আমার পরিদর্শনটা খুব স্বচ্ছ ছিল এবং রাষ্ট্রীয় প্রচলিত শাসনব্যবস্থায় আমার বিষয়ে কোনো নেতিবাচক দিক তারা খুঁজে পায়নি। তবে অবশ্যই এটা সবার ক্ষেত্রে সত্য নাও হতে পারে।

উত্তর কোরিয়ার সংস্কৃতি নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছেন আপনি। আপনার বইয়ে কোরিয়ান ফোক গান (আরিরাং) এর উল্লেখ দেখি। অ্যালকোহলের (মদ) স্থানীয় পরিবর্তনও দেখা যায়। উপন্যাসটি লিখতে আপনার কতদিন সময় লেগেছিল এবং কী ধরনের গবেষণা পদ্ধতি আপনি প্রয়োগ করেছেন?

আমি লেখা শুরু করেছিলাম একজন সাংবাদিক হিসেবে। আমার পড়াশুনা সাংবাদিকতায় সুতরাং আমি ভালোবাসতাম সাক্ষাৎকার ও গবেষণা করে সঠিক প্রতিকৃতি পেতে। যেহেতু আমি কোরিয়া থেকে আসেনি সুতরাং কোরিয়ান সংস্কৃতিকে বিশ্বস্থভাবে আমার লেখায় তুলে আনতে অনেক দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় দিতে হয়েছে। তারা দুর্ভিক্ষ, উৎপীড়ন ও গুলাগ (গুলাগ এক ধরনের শ্রমিক ক্যাম্প যেটা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বারা (১৯৩০-১৯৫৫) গঠিত। এই ক্যাম্পে বহু মানুষ মারা গিয়েছিল)-এর স্বীকার।  সেখান থেকে অল্পসংখ্যক মানুষের প্রতিকৃতি আমি আঁকতে চেষ্টা করেছি। এই ধরনের গবেষণায় আমি সন্তুষ্ট। মানুষের সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছিল। তারা আমার বইয়ের কাঠামোতে এনেছিল বিরাট পরিবর্তন। গবেষণা কিংবা অনুসন্ধানের সময়ে যে কোরিয়ানের সঙ্গে আমি প্রথম দেখা করি সে ছিল উত্তর কোরিয়ার এক এতিম বালক। সে তার পছন্দের অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করেছিল এবং আমি সেটা জেনে নিয়ে নিজস্ব কণ্ঠস্বর ব্যবহার করে তাদেরকে এঁকেছি।

আপনি অনলাইনে স্বদলত্যাগীদের (ধর্মীয় বিষয়ক) প্রতিকৃতি নিয়ে প্রচুর পড়াশুনা করেছেন। ঠিক কিনা?

একদম ঠিক। খ্রিষ্টান মিশনারিজদের যেসব গল্প প্রকাশিত সেগুলো আমি পাঠ করেছি। ইন্টারনেটে এনজিও কর্মী, সহায়তা কর্মীদের যন্ত্রণাকর অভিজ্ঞতা বিষয়ক পাঠ নিয়েছি। বই লেখার আগে কোরিয়ানদের গল্প বলতে রাজি করাতে এগুলো পাঠ কাজে দিয়েছে। উপন্যাসটি বের হবার পর আমি অনেক উত্তর কোরিয়ানদের সঙ্গে দেখাও করেছি।

আপনার উপন্যাসে একটি লাইন ঠিক এরকম আপনার মাথার ভেতর যে অংশটি অন্ধকারে ভরা, সেটার কিছু অংশ কল্পনার গল্প পূরণ করে কিন্তু চারপাশের বাস্তব অন্ধকারের কাছে সেগুলো কিছুই না।কল্পনার পৃথিবীর গল্প ও বাস্তব পৃথিবীর গল্পের ভেতর কতটা পার্থক্য দেখতে পান?

উপন্যাসের একটি দিক হলো এটি বাস্তব হতে হবে। নন ফিকশন অবিশ্বাস্য হতে পারে কিন্তু উপন্যাস হবে অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য। উত্তর কোরিয়াতে অসংখ্য অন্ধকার দিক আছে, সেগুলোর অনেকটা ছেড়ে গেছি আমি। এটার ভেতর একটি হল, গুলাগের সত্য অন্ধকার এবং শাসন ব্যবস্থার কিছু পাগলামি। কারণ এটা আনলে উপন্যাসটি কম বিশ্বাসযোগ্যতা পেত। কিন্তু আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলি, আমি মনে করি মানুষ বহু আখ্যানে তৈরি। আমাদের মনে উপন্যাস লেখার শক্তি সবসময় থাকে। আগামীকাল কাজে কিংবা একটি নির্দিষ্ট তারিখে কী ঘটবে এরকম দৃশ্য কল্পনা করতে পছন্দ করি আমরা। অন্ধকার জিনিস কল্পনা করা ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য খুবই সহজ। এবং সেই কল্পিত জিনিস ইতোমধ্যে ঘটে গেছে।

আপনি কি কোনো বাংলাদেশি লেখকের বই পড়েছেন?

না। তবে এখানে এসে কিছু বাংলাদেশি লেখকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। তাদের সঙ্গে আলাপ করতে পারা আমার কাছে সত্যিই আনন্দের ছিল।

 

ভাষান্তর : মিলন আশরাফ

সূত্র : ঢাকা ট্রিবিউন

ছবি: সৈয়দ জাকির হোসাইন