প্রাণবন্ত, উচ্ছ্বাসময়, আনন্দপূর্ণ বইমেলা চাই

[জাকির তালুকদারের জন্ম ২০ জানুয়ারি ১৯৬৫ নাটোরে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতক। সমকালীন মূলধারার বাংলা কথাসাহিত্যে তাঁর অপরিহার্যতা ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত। তাঁর গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৫০টি। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২২ নিয়ে এই কথাসাহিত্যিকের সঙ্গে কথা বলেন শ্যাম পুলক।]

প্রশ্ন : অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২২ কেমন চান?
উত্তর : প্রাণবন্ত, উচ্ছ্বাসময়, আনন্দপূর্ণ বইমেলা চাই। করোনা যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে এবারের বইমেলা হবে খুবই জমজমাট। সেটাই চাই। কারণ বইমেলা এখন জাতীয় উৎসব। সেই উৎসবে সারা দেশের লেখক-পাঠকরা আসেন। বিদেশি লেখক-কবিরাও আসেন। প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঈদ-পর্বের মতোই বইমেলার সময়টিকেও দেশে আসার জন্য বেছে নেন। সবার অংশগ্রহণে একটি সফল বইমেলা আমি চাই। চাই আগের ত্রুটিগুলো বাংলা একাডেমি এবার কাটিয়ে উঠবেন। স্টল বরাদ্দ নিয়ে স্বজনপ্রীতি করবেন না। লিটল ম্যাগাজিন চত্বরকে যথাযথ মর্যাদা দেবেন। মেলায় শব্দদূষণ এখন ঘটায় মূলত বাংলা একাডেমি। পুরো সময় মাইকে ঘোষণা চালাতে থাকে। চাই সেটি এবার যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

প্রশ্ন : এ বছর আপনার কি কি বই আসবে? কোন প্রকাশনা থেকে?
উত্তর : একটি উপন্যাস ‘আমার বন্ধু শবনম’ আসবে প্রসিদ্ধ প্রকাশনী থেকে। আর একটি প্রবন্ধের বই আসবে ঐতিহ্য থেকে।

প্রশ্ন : প্রকাশিতব্য বই সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : উপন্যাসটি মূলত ঢাকার একজন ভাসমান পতিতার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা একজন লেখককে নিয়ে লেখা। তবে শুধু কয়েকটি ঘটনা নয়। বরং উপন্যাসে ঘটনা পরম্পরা এবং কথোপকথনের মাধ্যমে উঠে আসবে দেশের জনচিন্তার মানসিকতা, সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বেসামাল অবস্থা, ইতিহাস ধর্ম-বিতর্কসহ অনেককিছুই।

প্রবন্ধের বইটিতে বেশি থাকবে বিভিন্ন বই নিয়ে লেখা আমার প্রবন্ধ। আমি পুস্তক সমালোচনাকে প্রবন্ধের পর্যায়ে তুলে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি কয়েক বছর ধরে। সেই চেষ্টা কতখানি সফল হয়েছে, আদৌ সফল হয়েছে কি না, তা বোঝা যাবে এই বই থেকে।

প্রশ্ন : অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১-এর অভিজ্ঞতা কেমন?
উত্তর : খুব করুণ। খুব বিষণ্ন। কোনো সময়সূচি ছিল না পুরো মেলায়। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মাস শেষের আগেই। লেখক-কবি-পাঠকরা মিলতে পারেননি পরস্পরের সাথে। আর প্রকাশকদের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি যদি এ বছরেও হয়, তাহলে অনেক প্রকাশনী বন্ধ হয়ে যাবে বলে অনুমান করা যায়। সেটি এদেশের প্রকাশনাশিল্পের জন্য অশনি সঙ্কেত।

প্রশ্ন : বইমেলার পর আমাদের বই খুঁজে পাওয়া যায় না এবং বইয়ের দোকানও স্বল্প। এই পরিস্থিতিতে বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে আপনার ভাবনা যদি জানাতেন।
উত্তর : আমি ব্যক্তিগতভাবে সবসময় পাঠকের সাথে সংযুক্ত থাকি। সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের সভা-সমিতিতে যোগ দেই। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, বিদেশ থেকেও আমন্ত্রণ আসে। চেষ্টা করি সবকটাতে অংশ নেবার।

এখন অনলাইনে বই বিক্রি করেন তরুণ উদ্যমী প্রকাশকরা। তারা চেষ্টা করেন সারা বছর অনলাইনের মাধ্যমে পাঠকের কাছে বই পৌঁছে দেওয়ার।

তবে বেশিরভাগ প্রকাশক প্রথাগতভাবে চলেন। তারা বইমেলাকে সামনে রেখে বই প্রকাশ করেন। বিনা খরচে ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় কিছুটা প্রচার পান। সেটুকুই যথেষ্ট মনে করেন। তাদের উচিত অনলাইনে সব ভালো বইয়ের প্রচারণা চালানো। নিজেদের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজ থেকে বইয়ের পরিচিতি তুলে ধরা। উচিত দেশের বিভিন্ন জেলায় একক প্রকাশনীর বইমেলার আয়োজন করা। পত্র-পত্রিকায় বইগুলোর আলোচনা প্রকাশের ব্যবস্থা করা।

আর সবচেয়ে বেশি দরকার, মেলা ছাড়াও সারাবছর ভালো বই প্রকাশ করা। বইমেলাতে পাঁচ বা ছয় হাজার বই প্রকাশিত হয়। শতকরা ৯৫টি বই পাঠযোগ্য নয়। লেখক-কবি নামধারীরা কোনোরকম প্রস্তুতি বা অনুশীলন ছাড়াই টাকার বিনিময়ে বই বের করেন। এইসব বই পড়লে পাঠকের রুচি নিম্নগামী হতে বাধ্য। তাছাড়া যারা প্রাপ্তমনস্ক পাঠক, এতসব আগাছার ভিড়ে তাদের পক্ষেও ভালো বই খুঁজে পেতে অসুবিধা হয়। তাই সারাবছর বই প্রকাশ করা, এবং প্রচারের ব্যবস্থা করার বিকল্প নেই।