পাঁচটি কবিতা

noname

 

সরে থাকি মিলিত দূরত্বে

বিকেল হলেই

ছাদের উল্টো দিকে আরেকটা ছাদ উপুড় হয়ে ঝুলতে থাকে রোজ

তবুও পাশাপাশি বসি, গল্প করি, চা খাই

আমার সাথে আমি

বারান্দা মানেই ঘরের সাথে ঝুলে থাকা মায়া

অথচ ঘর বলতে যা বোঝায় তা আমার নেই

নেই বললেই লজ্জায় মুখ ঢাকে আত্মীয়-স্বজন

বন্ধুরা

স্বীকার করলে জাত যায় না;

অথচ অস্বীকারে বিশ্বাস বেঁধে নেতা হতে চায়

মিথ্যেরা

বন্ধুরা ভয়াবহ ব্রত নিয়েছে সংসারের

ওদের সুখ সাশ্রয়ী মূল্যের

মূলত মুখোশ

সরে থাকি মিলিত দূরত্বে

 

বারান্দার দিকে এগিয়ে আসে উল্টো দিকের

ঝুলন্ত ছাদ

বারান্দাটা ছেড়ে দিলাম তার জন্যই

আমার কেবল ছাদটুকুই থাকুক।

 

যৌবনবতী মৃত জোনাক

ফেরার সময় না হতেই—ফুরিয়ে যায় পথ

হাতের রেখায় ফুটে থাকা আয়ু

স্রোতের ডানকুণি

যৌবনবতী মৃত জোনাক

কতকিছু

গামছায় মুড়িয়ে রেখেছিলাম

ছেড়ে দিয়েছি ঘৃণায়।

পুবের ছাতিম গাছের নিচে,

ভালোবাসার একমুঠো বসন্ত আর সরব বর্ষা ছিলো

কৃষ্ণপক্ষের সন্ধে, বড় বেশি থমথমে

আবছায়া

মুগ্ধজীবন পাবো বলে একাকিত্বকে পরোয়া করিনি

জানা ছিলো না, জীবনের সবটুকুই একাকি

নির্বাসন।

তোমার সাথে আমার

অথবা আমার সাথেই আমার

মাঝের পথটুকুই ফুটে থাকা বসন্ত

স্মরণীয় বর্ষা এবং

বাকিটা

মৃত্যুর জলাশয়

 

এসো, মৃত্যুকে বরং আনন্দে আলিঙ্গন করি

ভয় কীসের!

সহস্র জোনাকে আলোকিত হোক আগামীর পথ...

 

ঘুমের কাছে লুকিয়ে ফেলি কদর্য সবকিছু

প্রতিটি ভাঙন আমাদের শীর্ণ হয়ে বেঁচে উঠতে বলে

পরিচিত পথের ওপারে আর কোনো পথ থাকে না—এটাই সত্য।

কতটা অমানবিক আর অপরিচিত ছিলো পরিচিত সাঁকোটি—

এটা বুঝতেই দুপুর পেরিয়ে সন্ধে!

কতটা পাশবিক নির্যাতন ছিলো বিচ্ছিন্ন বন্দরে

আলো আর মানুষের কোলাহল ডিঙিয়ে

কতগুলো নিমফুল প্রতিদিন খুন হয়, জানি না!

রাত গভীর হলে বুঝে নিতে হয়, কতটা নির্মমতায়, কতটা অনাদৃত জীবনে

শোধ করে যেতে হয়—পৃথিবীর ঋণ!

রাত গভীর হলে

ঘুমের কাছে লুকিয়ে ফেলি কদর্য সবকিছু

 

কোভিড ১৯, এতোটা কাছে না এলেও পারতো

অপেক্ষায় আছি সবুজের সাথে

কিছু কথা রয়ে গেছে বলে

সন্ধ্যা তারায়, জ্যোৎস্নায়

যৌবনবতী মাছিদের সংসার দেখবো বলে।

 

ফলবতী বৃক্ষ, দেবদারু, ঘাস-ফুল

আমাকে ছোঁবে না কেউ

পাখিদের ডাক, সকালের সুখ

সবাই এতো অন্ধকার কেন?

কোভিড ১৯

পশমের মত লেগে আছে দেহে

গাছের তলায়

কুয়াশায় ফেরি করা শীত

মায়াবতী মেঘ

অনেক দূরে সরে গেছে।

সমুদ্র সৈকতে হাঁটা হবে না সন্ধেয়

আযানের সাথে শঙ্খের প্রেম

গেরুয়া দুপুর, হলুদ বিকেল

ডলফিনের শিশুতোষ নাচ

বিলিকাটা নখে মাখনের চাষবাস

বড় সাধ ছিলো দেখার,

হবে না?

কোভিড ১৯, এতোটা কাছে না এলেও পারতে!

পশমী বাতায়নে সব হতো…

 

অধরা মাধুরী

আমাদের ঘরবাড়ি পথঘাট

ঢেকে গেছে অকারণ ক্রোধে

আমাদের প্রাণপণ যুদ্ধ ঘোষণা নিজেদের মধ্যে

ভীরুতা খুঁড়লে

হাড় কাঁপানো শীত মৌসুম দেখা যায়

পাতা ঝরে

গাছের একাকি জীবন যাপন

পথের দু'ধারে বিষণ্ন বেদনার নীল রঙ

ছুঁয়ে যায় কানায় কানায়

ভরে ওঠে পিয়ানোর লাল সুর

আমাদের টেবিল চেয়ার থেকে

কঙ্কালের ছায়া নেমে আসে দেয়ালে

ঘরভরা দেবদারু দূত

অদ্ভুত

মিথ্যের দূত

পৃথিবী পোড়ায়

ধূপকাঠি জ্বেলে।