আমেরিকান কবি, ঔপন্যাসিক ও প্রবন্ধকার আনা কাস্তিলোর জন্ম ১৫ জুন, ১৯৫৩। চিকানা নারীবাদ নিয়ে লেখা তার গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস 'সো ফার ফ্রম গড' আমেরিকান বুক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে।
আমার অসম্ভব চাওয়া
“আমি অসম্ভবকে বলেছি: আমাকে ভালোবেসো চিরকাল।
ভালোবেসো তখনও—যখন সব আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা শেষ হয়ে যাবে।
ভালোবেসো এক ধ্যানে, ধ্যানী সন্ন্যাসীর মতো।
যখন পৃথিবী তার পূর্ণতা পাবে,
আর তুমি যে-সব পবিত্র মনে করো, সে-সব কিছুও
তোমাকে বিরুদ্ধে পরামর্শ দেয়: তবু আমাকে আরো বেশি করে ভালোবেসো।
যখন নামহীন—খুব রাগ হয় তোমার: তবুও আমাকে ভালোবেসো।
যখন তোমার দরজা থেকে আমাদের কাজের জায়গা পর্যন্ত প্রতি পদক্ষেপ তোমাকে ক্লান্ত করে
ভালোবেসো আমাকে; আর কাজ থেকে বাড়ি ফিরে, আমাকে ভালোবেসো, ভালোবেসো আমাকে।
ভালোবেসো আমাকে যখন তুমি একঘেয়ে হয়ে ওঠো—
যখন তুমি কোনো সুন্দরী মেয়েকে দেখো, যে পূর্ব-দেখা মেয়েটির চেয়েও আরো সুন্দর,
অথবা আরও দুঃখী, আমাকে ভালোবেসো যেমন তুমি সবসময় ভালোবাসো:
কোনো পূজারি বা বিচারক হিসেবে নয়, বরং
তোমার গহনে যে মায়া তুমি নিজে নিজের জন্য অনুভব করো,
সে মায়ার সাথে ভালোবেসো নীরব একাকিত্বে।
ভালোবেসো আমায় যেমন তুমি তোমার একাকিত্ব উপভোগ করো,
তোমার মৃত্যুর পূর্বাভাস,
দেহের রহস্যে, যা ছিঁড়ে এবং আবার বুনট হয়ে যায়।
ভালোবেসো আমাকে তোমার সবচেয়ে প্রিয় শৈশবের স্মৃতি হিসেবে—
এবং যদি এমন কিছু মনে করতে না পারো—
তবে কল্পনা করো তেমন একটি, আর সেখানে তোমার সাথে আমাকেই রেখো।
ভালোবেসো সব ফুরিয়ে গেলও যেমন তুমি ভালোবাসতে আমাকে প্রথম বেলাতে,
ভালোবেসো আমাকে যেন আমি চিরকাল ছিলাম—
এবং আমি, অসম্ভবকে
এমন সহজ করে দিব,
ভালোবাসা দিয়ে, যেমন সহজে আমি তোমাকেই ভালোবাসি।”
হুইটম্যান
আমার কল্পনায় তিনি পিঠে হেলান দিয়ে শুয়ে,
নীরব নীল-আকাশের পানে তাকিয়ে, সাদা মেঘ—তেমন নয়
এমন এই ধূসর নিউইয়র্ক বৃষ্টি ভেজা দিনে।
পাশে নোটবুক, কাগজে কালির দাগ লেগে আছে,
হাতে পাইপ, খোলা টুপি, ঝাপসা বাতাসে হালকা চুল তার উড়ছে।
ভেজা ড্যান্ডেলিয়নের উপর কনুইয়ে ভর দিয়ে সে মাছিটি দেয় তাড়িয়ে।
কবি যেন শব্দের খোঁজে আছে
যতক্ষণ না সন্ধ্যা নামে।
অবশেষে সে উঠে দাঁড়ায়,
প্যান্টের ধুলো ঝেড়ে, পাবের দিকে পা বাড়ায়। এক-দুই গ্লাস পান শেষে,
“আমার কাছে এসো,” ফিসফিস করে বলে তাঁর সোনালি চুলের বন্ধুকে,
“গ্যাসলাইটগুলো ম্লান হয়ে গেলে।”
এটাই ছিল—তখন জীবন, কোনো পরিণতি নয়।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে, নীল আকাশের ব্যাপ্তি নিয়ে ভাবতে ভাবতে,
কবি প্রেমে পড়ে,
যেভাবে বুড়োরা প্রেমে পড়ে, অব্যক্ত ইচ্ছার
এবং হৃদয়, যা ভেঙে গিয়ে তারার গুচ্ছ হয়ে যায়;
ঝাপসা দৃষ্টিতে, চশমা পরা চোখে উঁকি দিয়ে তাকায়।
আলোকিত রাস্তাগুলো নতুন ছিল।
সব কিছু ঝকঝক— অগ্রগতির দীপ্তিতে,
রেলপথ এবং মোটর গাড়ি—
গণতন্ত্রের মহাযজ্ঞ যেন চারিপাশে। দেশ ছিল উচ্চাকাঙ্ক্ষী পুরুষদের,
মহিলাদের এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের দখলে। তিনি, তার ছন্দহীন কবিতা নিয়ে, যেন ছিল না কারো,
অথবা সে ঘোষণা করেছিল দৃঢ়ভাবে
এক সুন্দর দিনে সে আর তার এক বন্ধু হাইকিংয়ে গিয়েছিল
বনে,
সাহসী ভাবনা চিন্তায় দীপ্ত এবং দৃঢ় অধ্যবসায়ে।
তারা খেয়েছিল পানীয় আর রুটি, সাথে ধী-চতুর কথোপকথন। হয়ত
নদীতেও সাঁতার কেটেছিল তাঁরা সেদিন,
এবং একে অপরকে পড়ে শুনিয়েছে আর
শরীর শুকিয়েছে সূর্যের তাপে।
তেমন দিনগুলিতে কবি আবার তারুণ্য বোধ করেছিল,
সে অনুভূতির সম্পদ
সংরক্ষিত হয়েছিল চিঠিতে, চিঠিতে।
সেসবে অমর থাকবেন তিনি,
রোমান্টিকদের প্রাজ্ঞ মনের গহন মননে—
যুক্তিযুক্ত প্রশ্নগুলি থাকবে সাধারণের মনে।
সত্যিকারের আনন্দ ছিল তাঁর কেটলিতে করা স্যুপে
তিনি নিজেই টার্কি অথবা হাঁস শিকার শেষে,
পালক ছাড়িয়ে, লিভার, যকৃৎ বের করে
উষ্ণ হৃদয় নিজের জিভে নিয়ে
বাকি সব কিছু গরম পানিতে দিয়ে
অবশেষে, তিনি বললেন, “সবকিছু হয়ে গেছে!”
হাড় থেকে মাংস গলে ছিন্ন, আলু আর গাজর
নাকি ভালোবাসা— কোনটা?