কয়েকটি কবিতা

nonameনারী-দেবী

আসবি জেনেই ঘুঙ্গুরে তাল, অন্তরে তান, বুকে মায়াঘাস

ইথারে বিথারে ঝুলে লালফুল, হরিৎ বাগানে বাড়ছে কল্পতরু।

পালকে জমিয়েছি নীল মেঘ, মধ্য আষাঢ়ে ময়ূরের মতো নাচি,

কুড়াবো কুয়াশা, সোনালি পারদ, কাঠগোলাপের ঘ্রাণ, জাদু এলি!

রংধনু ঠোঁটে গেঁথে পাড়ি দেই হিমাচল, মুঠোভর্তি মালতি রেণু।

ঘনায় দিন, সন্ধ্যার শাঁখ বাজে, সিঁথানে জড়াই দুধ নাগমনি কবজ,

জাদু-ই! পাপড়ি নির্যাস মাখা দেবশিশু এক জীবন্ত দুর্গা আমার। 

 

নারী-আগুন

শুধু ধোঁয়ার তোপে ঘোর ঘোলাটে হয় এইসব দিন-রাত্রি

কর্তার আয়েশী কপালে পড়ে চিন্তার চিকন রেখা

অনেকাংশে পণ্ড হয় পানশালার জমকালো আসর। আর,

যদিবা প্রকাশিত হও স্বয়ম্বরে, সে বছর বারোমাস বর্ষা হয়,

বিতানসমূহের দৈনন্দিন আলোকসজ্জায় বিদ্যুৎহীনতার অভিযোগ ওঠে,

আদতে অন্ধকার মুখে ঔদ্ধত্য করা যায় না, তাই এমনতর বাহানা বানায়!

অন্ধ দানব...

 

নারী-সময়

বারংবার ব্যর্থ হলে পরাজিত হয় না শুধু সভ্য সময়,

অর্থ হারায় পূর্ণাঙ্গ এবং চূড়ান্ত জীবন-বিধানসহ অন্যান্য

সব পবিত্র দস্তাবেজের নীতিমালা! পৃথিবী কি পুনরায়

আবর্তন করছে নিজস্ব আয়ুষ্কালের নিকৃষ্টতম সময়ে?

যদি হয় তবে শ্রেষ্ঠতরের কাছে আবেদন—‘সভ্যতা’সহ

কিছু শব্দের প্রয়োগ আবর্তনান্ত পর্যন্ত স্থগিত রাখা হোক।

 

নারী-চক্র

ফেলে দেয়ার জন্য খনন করেছো যে কূপ

আমি তার তলদেশ থেকে মেলে ধরি ডানা,

সে কি রূপময় আর শক্তিধর, যেন মাঞ্জাসুতো,

লেজওয়ালা ঘুড়ি, উর্ধ্বের দিকে উড্ডিন।

সমতলে শল্লা করে নাটাইয়ের গুরু,

ক্ষনেক ভোগের খাতিরে বোকাট্টায় কাটে

ঘুড়ি থেকে সুতা, লেজ আর উড়বার ডানা,

আমি যেন ধপ করে ধসে পড়ি ভূতলের বুকে

তোমাদের পুতে রাখা নারীধরা ফাঁদে।

হায় সনাতনী কূপ! আমি যে লক্ষীট্যারা,

তোমাদের জারিজুরি সব দেখি না দেখার ছলে।

 

বৃক্ষপুরাণ

ফিরতি পথের রবি, দয়া ভরে একবার চেয়েছিলো চোখে,

তারপর পথগুলো ভুলে গেলো পথ! ইটভাটা হয়ে কাঁচামাটি

জ্বালিয়েছি উদরের অতলে, দলা-দলা উগরেছি কালো শ্বাস।

বন্ধ্যাবৃক্ষ! পারে না গজাতে নব-কিশলয়, দূরকথা ফুলফল!

এদিকে,

ভয়গুলো শ্লোগান ধরে মিছিলের মতো, উপড়ে নেবে মূল!

 

আলোর দিকে মুখ করে তালবৃক্ষ যেন, দাড়িয়ে আছি বহুযুগ,

সে অবধি একটিও বাবুই বাসা বোনেনি গায়ে, আবাসনের

আস্থাহীনতায় সবপাখি ফিরিয়েছে মুখ! হতাশাপোক্ত পাতা

ভায়োলিনে ব্যাথাসুর সাঁধে! আহা, মায়ামুখ! মোম চোখ!

স্রষ্টার মতো অস্পৃশ্য! নিস্ফলা হয়ে দাড়িয়ে আছি কতযুগ!

 

ঘুমদেবী তবু স্নেহময়ী, আদরে আগলে রাখে গতিময় ঘড়ি।