বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব স্মরণে

জীবনে-মরণে মহীয়সী

শৈশবেই পিতৃ-মাতৃহারা যে শিশুর প্রতিচ্ছবি দেখি টুঙ্গিপাড়া গ্রামে
তুমি সেই জন্মদুখী, ভাবিকালে সর্বংসহা জননী বাংলার।
তোমাকে নিবিড় করে জানে দেশ, ইতিহাস, তুমি স্বদেশের।
তোমার সহিষ্ণু প্রজ্ঞা খুব প্রয়োজন ছিল দুঃখিনী বাংলার।

মা, তুমি বালিকা বধূ অবোধ শৈশবে। দুরন্ত কিশোর 
‘খোকা’ তোমার খেলার সঙ্গী থেকে জীবনের দীর্ঘপথ 
পাড়ি দিয়ে বিপুল গৌরবে এসে যেখানে দাঁড়ালে তোমরা দুজন, 
সেখানেই ইতিহাস লিখে দিলো চিরঞ্জীব জীবন-মহিমা।

দেশ আর জনতার অধিকার প্রতিষ্ঠার অসম লড়াইয়ে
কী দুঃখ সয়েছ মাগো দেশপ্রেমী ঋষিপুরুষের সঙ্গী হয়ে!
মানবমুক্তির জন্য উৎসর্গ করেছ তুমি ব্যক্তিগতসুখ কারাগারে
সেই ইতিহাস আজ জাতির মননে অনন্য সম্পদ তিতিক্ষার।

সন্তানেরা বড় হচ্ছে দুঃখের তরঙ্গে ভেসে বিরুদ্ধ বাতাসে
পক্ষিণী মাতার মতো কী যে মমতায় আগলে রেখেছ সংসার!
কী নিষ্ঠুর বিপন্নতা সামাল দিয়েছ নিষ্ঠা, সাহসে, প্রজ্ঞায়।
ছাত্রনেতা থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠা, সে তো প্রেরণা তোমারই।

ভাষা আন্দোলন থেকে সামরিক দুঃশাসন, কারা নির্যাতন
সর্বত্র ছায়ার মতো শক্তি আর উদ্দীপনা যুগিয়ে গিয়েছ; 
সংসারের দায়ভার একাই নিয়েছ কাঁধে, উদ্বিগ্ন করোনি,
বরং দেশের জন্য, জাতির মুক্তির জন্য উদ্বুদ্ধ করেছ!

ছয়দফা থেকে মার্চ একাত্তর অবধি যত উত্তাল তরঙ্গ
সুদক্ষ মাল্লার মতো সামলেছ ঝড়ের নৌকা সহযাত্রী হয়ে;
যুদ্ধধ্বস্ত স্বদেশের বিনির্মাণে রাত্রিদিন জাতির পিতার পাশে 
থেকে যে প্রেরণা যুগিয়েছ, ইতিহাসে অনির্বাণ নক্ষত্রের হরফে। 

একটা জীবনে তুমি লক্ষ-কোটি জীবনের মহিমা দিয়েছ 
জীবনে মরণে বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সঙ্গী একই রক্তস্রোতে ভেসে গেছ।