X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিয় দশ

সৈকত হাবিব
২১ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৪৫আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৪৫

নারায়ণের ঘাট

নারায়ণের ঘাটে গিয়েছি কতদিন
তবু আজও মনে হয়, আমি কি দেখেছি
তোমায় মাঝি, হে নারায়ণ, দেখেছি কি
কোনো জন্মে, তিতাসপাড়ে?

কত কৈশোরসন্ধে ও কুমারীসৃদশ ভোর
গোধূলিবিকেল আর ঘরেফেরা পাখিসন্ধ্যায়
আমি হেঁটেছি, হেঁটে হেঁটে
চলে গেছি তিতাসহিজলছায়া মেখে...

আর অনেক অনেক রাতে সৌরজ্যোৎস্না
মেখেছি তিতাসহাওয়ায় আর গভীর
গভীর শুনেছি দূরগামী দাঁড়িদের
নিশি-জাগার শব্দ, পাখিডানার গান...

তবু, আজ, এই নির্ঘুম, শাহরিক রাতে
মনে হয়, তিতাস দেখিনি আমি কোনোদিন
দেখিনি তিতাসছায়া, সেই নারায়ণ মাঝিকে
কখনো দেখিনি আমি এই জন্মে
দেখেছি কেবল নদীর শব আর রক্ত
আর ধূলিদীর্ণ এক নারায়ণ-মুখ।


আমার সন্তানের প্রতি

আমিও সূর্যের পুত্র, তোমার মতো। তবু তুমি কারো পুত্র নও, আমিও নই পিতা।

সৃষ্টির নিহিত-অর্থে মানুষের নিজের বিধানে আমরা জড়িয়েছি পুত্র ও পিতায়।
বীর্য সেই অমোঘ নিয়তি, আমাদের যা এনেছে টেনে এই রক্তাভ-বন্ধনে।

একদিন আমি ছিলাম শূন্যে, নিঃসম্ভাবনায়। কোনো এক পুরুষের রেতঃপিপাসা
আর কোনো মাতৃসম্ভবা কুমারীর অবুঝ আবেগ আমাকে এনেছে এই নরকে,
অনুরূপ তুমিও।

আমরা রোপণ করেছি এক ভালোবাসা-গাছ, পুত্র ও পিতায়। কিন্তু ঘৃণা কি করব
কোনোদিন? তুমি আমাকে, আমি তোমাকে; কিংবা ঘৃণা এবং প্রেমে, প্রেম এবং
                                                                             ঘৃণায়...

সেদিন কি রাত ছিল, তোমার বীজমুহূর্তে? আমরা কি জেনেছি তুমিই সেই অনাগত?

তবু তুমি আজ অনন্ত অন্ধকার থেকে বিকশিত এক আলোর কুসুম, যেন শস্যদানা থেকে বিস্ফোরিত ব্রহ্মাণ্ড।

জীবনকে কোনোদিন ভালোবাসতে পারিনি, মৃত্যুকেও; বরং হয়তো ঘৃণা করি
                                                              এই মানুষজন্মকেই।

তবু এই যে এসেছি পৃথিবীতে, তুমি আমি
চলো প্রেমে-অপ্রেমে তাকে গ্রহণ করি।


একজন কবির জন্য
(কবি শামসুর রাহমানকে)

একটি ব্যক্তিগত গাড়ি
কখনো স্বপ্ননারীর শাড়ি

পথে হেঁটে যেতে যেতে তার আঁচল
কী কোমল, ঝলমল, হাওয়ায় গীতল

কিন্তু সে কেবলই ওড়ে, দূরে

যদিও মনে হয় এই তো সে
হাওয়ায় তার ঘ্রাণ ভাসে

তবু আমাদের মনোহাত
তাকে পারে না ছুঁতে

কী উষ্ণ, অমল, এই নারীদল,
তবু হায়, তারা দূর, বাড়ি নক্ষত্রপুর

আমৃত্যু এক কবির কাছে একটি গাড়ি
ছিল যেন উজ্জ্বল, বর্ণিল, নক্ষত্রনীল নারী

যুগপৎ এ এক আশ্চর্য ট্র্যাজেডি,
                                 আর বিস্বাদ কমেডি


উপকূলে পাখিহত্যা হচ্ছে

উপকূলে হত্যা হচ্ছে পাখি, আহা পাখি
       দূরের সবুজ-নীল-উন্মূল পাখি
মৃত্যুকে বুকে নিয়ে মিশে যাচ্ছে ইলিশার জলে...

স্বচ্ছ জলবর্ণে রক্তলাল ছোপরেখা আর চিত্রলতার সঙ্গে
                                    উপকূলে পাখিহত্যা হচ্ছে

উপকূলে পাখিহত্যা হচ্ছে
শহরের সুগম্য বন্দুক শীতের বাতাস কেটে
                 ঢুকে যাচ্ছে পাখিদের বুকে

সেই পাখি, আহা সেই পাখি, পাখি, পাখি

কোন পাখি? কোন পাখি? কেবলই রক্ত আর ক্রন্দন
স্বপ্ন আর আবাস আর নিমীলিত আকাশ
আহা, যাচ্ছে সব, মিলেমিশে, ইলিশার জলে
                        উপকূলে, পাখিহত্যা হচ্ছে

উপকূলে পাখিহত্যা হচ্ছে, উপকূলে, পাখি, হত্যা, হচ্ছে
হত্যার গান ছড়িয়ে পড়েছে পাখির রক্ত ও ঘামে

মেঘে মেঘে ছায়া ছায়া হয়ে পাখিদের ডানাগুলো
যেন উড়ন্ত অস্থির মাছ, ডুবসাঁতারে মিশে যাচ্ছে
                                    ইলিশার জলে


এই শহরের পথে পথে ঘুরি

এই শহরের পথে পথে ঘুরি, কথা ফেরি করি
ফেরিঅলাদের দিন এসে গেছে আজ, অন্য
ভূগোল থেকে তারা এসে আমাদের করে যায়
                                           ফেরেববাজ

স্বপ্নও পণ্য আজ
              আমরা স্বপ্নবাণিজ্য করি
            হৃদয়শূন্যের কাছে চাই হৃদয়ের চাবি

মানুষ ভেড়ার পাল, তাদের সঞ্চরণ দেখি
দেখি যন্ত্রকলের দিনে তাদের যন্ত্রপদক্ষেপ

শহরের পথে পথে ঘুরি
               রমণ-বমন-বচনসাধনা করি
বচন কঠিন জিনিস ভাই
               আমি তারে বন্দনা করি
আর নিজেরে রচনা করি
ভাবি, আশ্চর্য এক পণ্য আমি
আমারে কেউ কিনবে কি? কিনবে কি?


অপেক্ষা

অপেক্ষা করছে কেউ, তোমার জন্য, সুবোধ সোনালি মেয়ে

অপেক্ষা করছে কবোষ্ণ রাত্রি, নরম চাঁদ, আলোআঁধারি,
অপেক্ষা করছে ঘুম, জাগরণ, নৈঃশব্দ্য, রতি, স্বপ্ন, স্পর্শ,
উষ্ণ ঠোঁট। দিনে তোমার অপেক্ষা করে ফুটপাথ, কামুক
চোখ, মেয়েদের ঈর্ষান্বিত বোধ। পথ তোমার অপেক্ষা
করে—অপেক্ষা তোমার কর্ম, রোদ্দুর, হাওয়া ও ক্লান্তির।

তুমি অপেক্ষা করো স্বপ্নের সফলতার, মগ্ন পৌরুষের,
গাঢ়তর চোখ আর আলোকিত পুত্রকন্যাদের। চুপি চুপি
গাঢ় রাতে গোপন রক্ত ঝরার বেদনা ও পূর্ণতার আনন্দে
তুমি বিস্মিত, আলোকিত ও উন্মোচিত হও।

গোপন আয়নায় দেখো নিজের চোখের তারার সবুজাভ,
                                        শস্যবতী কম্পন।


মঙ্গলপ্রভু বললেন অমঙ্গল বিষয়ে

মঙ্গলে ভোর হচ্ছে।

ভোরের বিভূতি পড়েছে ছড়িয়ে। চরাচরে নৈঃশব্দের হিমেল সঙ্গীত।...বহুকাল পর
ছিঁড়ে গেল নৈঃশব্দের জাল। কেঁপে উঠল রক্তিম মাটি, গভীর ঘুম থেকে যেন
আচমকা জাগরণ—সরব সব অদৃশ্য প্রাণ। কেঁপে কেঁপে ভেসে এলো গমগমে
শব্দের বাণ—

মঙ্গলপ্রভু বললেন অমঙ্গল বিষয়ে :

‘ছিলাম বহুকাল শব্দহীন। হায়, সেই দিন বুঝি এলো ফুরিয়ে। নিকট পৃথিবীও গেছে
কবেই বুড়িয়ে। হে আমার মঙ্গলপ্রাণীরা, আমরা কি ছিলাম না আমাদেরই মতো,
এই গ্রহজন্মের পর, এতোদিন? বুঝি ফুরিয়ে এলো দিন! নিজের মাতৃগ্রহ যারা খুঁড়েছে
এতদিন, ছিঁড়েছে জরায়ু যারা তার, কী এক অমঙ্গলে, তারা আসছে মঙ্গলে। তাদের
থাবায়, এই প্রথম, মহা-ভীত আমি আজ। সবুজ গ্রহ নিঃশেষ, লোলজিব এই
মানুষেরই হাতে। ছিঁড়বে এবার তারা মঙ্গলের বুক। দ্যাখো, কেমন বর্বর যন্ত্রঘর্ঘর
শুরু হয়ে গেছে দিকে দিকে!’
হে আমার সন্তানেরা, তোমাদের কোন পাপে এ অমঙ্গল আজ, এলো মঙ্গলে।’

আবার স্তব্ধ সব, বিষণ্ন তার উজ্জ্বলতা, হননভয়ে কম্পিতা, হিম-চুপচাপ শূন্যতা।


শোনো, ঘোড়া

তোমার হ্রেষাধ্বনি ছিনিয়ে নিয়েছে শোনো, ঘোড়া
সে এখন যন্ত্রে ডাকে, কথা বলে, বলি তাকে যন্ত্রহ্রেষা
আর তোমার খুরধ্বনি, তাকে কী বলি?
তোমার নামের পাশে এখন শক্তি, গতি আর পুঁজি
(যদিও পুরাকালেও ছিল এই সব, সকলই)
তবু, তুমি কই, কোথায় তোমার মুখ, তোমার খুর,
                                          বাবা ঘোড়া!
এই সভ্যতা জানে কেবলই মুখে লাগাম পোড়া
শরীর থেকে অশরীরে কেবলই শেকল, পা বেঁধে রাখা
আর, তুমি যে আজও পৃথিবীতে আছো, তোমার শক্তির
                                ভেতর দিয়েই তা ভুলে থাকা
যদিও তোমার দৃপ্ত খুরধ্বনি
            মানুষকে করেছে বহু বহু দূরগামী
           পৃথিবীকে করেছে এই নতুন পৃথিবী


দুলছে জীবন দোলায়

জীবন দুলছে দোলায় আমাদের
দে দোল, দে দোল

কে দোলে, কে দোলায়?
আমি দুলি, তুমি দোলো
              সে দোলায়।

সে কে, দোলনা?
কথাটা ভুল না।

হেই, দোল না, হে ভাই, দোল না!

জীবন দুলছে দোলায় আমাদের
দে দোল, দে দোল
হে ভাই, দোল না!

দুলে দুলে চলে যাক জীবন আমাদের
জীবন এখন কেবলই এক চিড়িয়া খেলনা...


দেবী ও মানবী

আমার মানবীদেবী তুমি, দেবী ও মানবী

পৃথিবীর ভিড়ের ভিতর থেকে
তুলে নিই যখন তোমাকে
একরত্তি নারী শুধু তুমি
                       মনে হয়
আবার যখন ছুঁই তোমার হৃদয়
          থাকো তুমি দূরনীলিমায়
আমার মানবিক শরীর থেকে দূরে, না-শরীরী

রক্তের ভেতর কী যে স্বপ্ন-স্বপ্ন ঘ্রাণ তোমার
যখন ছুঁতে চাই,
আমিও স্বপ্নে মিলাই

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
ভাঙা হাটের দিন
প্রিয় দশ
দোআঁশে স্বভাব জানি
সর্বশেষ খবর
আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আজ নির্বাচন
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতিআদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আজ নির্বাচন
আলোচিত কিশোরী ইয়াসমিনের মায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু
আলোচিত কিশোরী ইয়াসমিনের মায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু
বদির বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের জিডি
বদির বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের জিডি
ছেলের মৃত্যুর ৪ দিনের মাথায় চলে গেলেন বাবা, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া
ছেলের মৃত্যুর ৪ দিনের মাথায় চলে গেলেন বাবা, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা