টুঙ্গিপাড়া : ১৬ আগস্ট ১৯৭৫

এক.
মৃত্যুর কোনো নাম নাম নেই, অথচ কোনো কোনো মৃত্যু ডেকে আনে অধিক জীবন।

দুই.
হেলিকপ্টারটি মাটি স্পর্শ করার আগেই লাফিয়ে পড়ল সৈন্যরা। কড়াপাহারায় নামানো হলো কফিন; কফিনভর্তি বাংলাদেশ—পিতা, তোমার লাশ। রজো, ইদ্রিস, আক্কেল, আতিয়ারসহ আরও কয়েকজন তোমাকে নিয়ে এলো তোমার বাবা-মার কবরের পাশে; যেখানে ইমাম গাজী ও মান্নান শেখকে দিয়ে খুঁড়ে রাখা হয়েছিল মাটি। কফিন বাড়িতে নামানোর পর শুধু একজন চিৎকার করে কেঁদেছিলেন—খোকারে তোরা মারলি কেন, ওরে ফিরাইয়া দে... তিনি তোমার চাচি। বাকিরা নিশ্চুপ, চারদিকে বিস্ময় আর বোবা আতঙ্ক। সৈন্যরা কফিনসহ লাশ মাটিতে পুঁতে রাখতে চাইল। সাহস করে হাজী আবুল কাসেম দাফনের কথা বললেন, তারা পনেরো মিনিট সময় দিলো। আয়ুব মিস্ত্রিকে দিয়ে খোলানো হলো কফিন। তোমার পরনে ছিলো রক্তাক্ত পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি, বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা ছিলো বিশাল বুক। রজো মোল্যা ও মুকিত ফকির তৈয়বের দোকান থেকে আনল ৫৭০ সাবান। টিউবওয়েলের পানি গরম করে তোমাকে গোসল করানো হলো। সাহেরা খাতুন হাসপাতাল থেকে আক্কেল আলী নিয়ে এলো কাপড়। তোমার দেওয়া রিলিফের কাপড় হলো কাফন। তিন সারিতে কিছু লোককে দাঁড় করিয়ে জানাজা পড়ালেন মৌলভী আবুল হালিম শেখ। তারপর কবর দেওয়া হলো তোমাকে।
সৈন্যরা এসব তদারকি করে ফিরে গেল ঢাকায়।

তিন.
সেই থেকে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলজুড়ে উড়ে বেড়ায় লাল চরিত্রের অজস্র পাখি।
ঐসব পাখিরা একই সাথে পাথর ও ডানাওয়ালা আগুন।