চৈত্রের রোদ ছুটে আসে ফাগুন মাসে

ভাবনার বৃত্ত 

কথার পেছনে কথা পড়ে থাক চোখের সমুখে চোখ
না-বলা ভাষায় আলোকিত হোক পুরানো অন্তর্লোক
হারিয়ে যাবার দিনগুলো ফের ফেরারি পথিক হোক
পথের ধুলাতে মুছে যাক সবই যাতনার যত শোক
আকাশের বাণী আকাশেই থাক জল-দেবীদের মতো
প্রণয়ের প্রতি পানশালা হোক অবিরাম অনুগত
নদীর নাচনে সমাধিত হোক বন্য কথার স্রোতও
হারানো পথের সন্ধানই হোক আজ সময়ের ব্রত

কবে যে কখন কবিতার ডালে ফুটেছিল রাঙাফুল
সেসব জেনে কি সান্ত্বনা পায় হৃদয়ের ভাঙাকূল
তুমি আর আমি হয়ে দূরগামী করেছি যতটা ভুল
তারচে অধিক দিতে হলো হায় ভ্রান্তির সে মাশুল

কথার পেছনে কথাগুলো থাক শোনাও নতুন বার্তা
আমিহীন তুমি কনোদিনই কি গো কবিতা হতে পারতা?


উপভোগ  

জীবনের অণুগল্পগুলো যখন পালক মেলে উড়ে যেতে চায়। চেনা মানুষের অচেনা ছায়ায় রামধনু করে খেলা। প্রতারক-বেলা জানায় রাতের আহ্বান। তখন আমার ভেতরের ঈর্ষাগুলো হয়ে ওঠে আদিম প্রহর। অস্তিত্বের সমস্ত সত্তায় জেগে ওঠে এক পৃথিবী নাশক মরুঝড়। একান্ত নির্জনে কেঁপে ওঠে ঠোঁট। রক্তরঙ ছবি আঁকে চিত্রপটে। অতঃপর ঈর্ষার উত্তাপ নেভাবার জন্য বন্য প্রাণিদের মতো অবিরত হাঁটি। হাঁটতে হাঁটতে পথটাকে বুকে নিয়ে হকিন্সের আকাশের দিকে অবাক তাকিয়ে থাকি। অতঃপর স্থির চোখে উপভোগ করি দেবতালয়ের ব্রান্ডির উৎসব।


ইদানীং             

ইদানীং খুব অল্পতে দুচোখ ভরে যায় জলে। ভোরের শিশিরকণা আনমনা বালিকার মতো দেয়ালের পাশে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে। দরখাস্ত দাখিলের আগেই বাতিল হয়ে যায় চাহিত ছুটির আবেদন। সকালের নির্মেদ রোদেরা ক্রোধের উত্তাপে নাই করে দেয় নদীদের নান্দনিক নাচ। কবে এক মেঘনার সাথে কথা হয়েছিল; প্রতিশ্রুতি ছিল শালবন রাঙাবার। সেইসব ক্রাশ হয়ে গেছে ইট ভাঙাবার যন্ত্র-কলে। কৈবর্ত নারীরাও কৌশলে ছেড়ে গেছে পুঁই-পালঙের গ্রাম। খেয়া পারাপারের নদীও কেন যেন হঠাৎ শুকিয়ে গেছে। এখন নির্জন কামরায় বসে একা একা লিখি সময়ের অচল আখ্যান। মনের অজান্তে বুকে হাত রেখে অনুভব করি অচেনা স্পন্দন।


জীবনের খেরোখাতা

জীবনের খাতা খুলে দেখি তাতে পাতা নাই
আতা গাছে পাতা আছে তবু তাতে আতা নাই
সময়ের সাতপাকে কোনো ফাঁদ পাতা নাই
তবু ফাঁদে পড়ে দেখি কারো কাঁধ পাতা নাই
নিজ পায়ে ভর দিয়ে সাদামাটা চলি তাও
মাঝপথে নিভে যায় প্রায় দিপাবলি টাও
কে আমার আমি কার এই নিয়ে ভাবি ফাও
মন বলে কোনো ছলে যেথা খুশি যাবে যাও
কোনোদিকে যাওয়া আর কোনোদিনই হয় না
দেখি নাতো জোটবাঁধা শালিক আর ময়না
কত ছবি কত কবি কত শত রাঙা সই
শেষ রাতে পাতে পড়ে থাকে কিছু ভাঙা বই
রাত শেষে আসে দিন ঝরা পাতা হাসে ওই
ফেলে আসা দিনগুলো হারিয়ে যে গেল কই!


ঠিক তখন

ঠিক তখন একঝাঁক দাঁড়কাক অবাধ্য সংগীত গাইতে গাইতে উড়ে যায় অবাক বিশ্বের দিকে, আমার ভাবনাগুলো অতঃপর ফিকে হয়ে আসে, চৈত্রের রোদ ছুটে আসে ফাগুন মাসে। ঠিক তখন একপাল মহাকাল ধূলি উড়িয়ে হেঁটে যেতে থাকে দূর কোনো মৃত মৃত্তিকার অভিমুখে, আমার ভাবনাগুলো থমকে দাঁড়ায় আচানক দুখে। ঠিক তখন হাতফোনে গর্জে ওঠে গরজের কণ্ঠ, সওদাপাতির সহস্র শব্দ দ্রুতবেগে ছুটে আসে, আমার ভাবনাগুলো নিমজ্জিত হয় নিষ্ঠুর উপহাসে। ঠিক তখন চারদিকে তরঙ্গ ছড়িয়ে মাথার উপর দিয়ে ছুটে যায় কতিপয় মহুয়ার মিগ, আমার ভাবনাগুলো ভিক্ষুকের বেশে আমারি কাছে মাগে ভিখ। ঠিক তখন সিগারেটের উদ্গীরিত ধোঁয়াগুলো রহস্যের চক্রাবর্তে উড়তে উড়তে শূন্য হয়ে যায়, আমার ভাবনাগুলো আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় দানিয়ুবের স্রোতধারায়। আমি যখন রবি ঠাকুরের অমিত আর লাবণ্যকে নিয়ে ভাবছিলাম ঠিক তখন...