আবদেল কাদের এল-জানাবির কবিতা

ইরাকের কবি আবদেল কাদের এল-জানাবির জন্ম ১৯৪৪ সালে বাগদাদ নগরীতে। প্রবাস জীবনে তিনি ভিয়েনা ও লন্ডনে বসবাসের পর প্যারিসে থিতু হন। ওখান থেকে প্রকাশ করেন, পরাবাস্তববাদী ধারায় পর্যালোচনা মূলক পুস্তক ‘লে ডেজির লিবাখতাখ’, যা আরব-বিশ্বের নানা দেশে নিষিদ্ধ হয়। কবিতা ও প্রবন্ধ ছাড়া কবি এল-জানাবি তর্জমাকার হিসাবেও প্রসিদ্ধ। পেশায় সাংবাদিক এই কবি ‘আরাপোয়েটিকা’ নামে একটি ম্যাগাজিনও সম্পাদনা করেন।


একটি নৌকা—যা প্রতিটি সমুদ্রকে করে তোলে অধীর

সুখের সন্ধানে মেতেছিলাম আমরা গুটিকতক শিশু
সুখও নানা সূত্রে তালাশ করছিল আমাদের
আমাদের অবস্থান ছিল বিশ্ব-জগতের বিপরীতে
আলোহীন একটি পৃথিবী
গড়িয়ে পড়া ঢালের পরিসরহীন একটি পাহাড়
কিংবদন্তীর স্বর্ণমৃগ আমরা
দুর্বৃত্তরা কিছুতেই পায় না যার নাগাল;

আমরা হচ্ছি সম্মিলিত কণ্ঠস্বর
এবং কবিতা
প্রভাত
এবং আলোজ্বলা দীপাবলি
আমাদের মস্তক
এবং ক্রীড়া প্রদর্শনের পূর্বে ব্যাপক অনুশীলন
আমরা, শ্রমজীবীর হাতে ধরা সাদা দাস্তানায় মোড়া পিস্তল
তবে গুলিটি ততক্ষণে ভেদ করে গেছে হৃৎপিণ্ড
ঘুরপাক খাচ্ছে শব্দে গড়া বাক্যরাজির সুশৃঙ্খল সরণীতে।

ঘূর্ণিবাত্যার শনশন শব্দে কাঁপিয়ে দিচ্ছি
সমস্ত কিছু আমরা
নিষ্পত্তি করি অভিযোগরাজির
যাতে ইতিহাস হিসাব নিকেশ করতে পারে
আমাদের অপ্রত্যাশিতভাবে শব হয়ে যাওয়া সম্পর্কে
এবং বর্ষণে সিক্ত করতে পারে আমাদের গোরস্তান।


মানুষের ভাসমান হওয়ার মুহূর্ত

প্রবাহিত হবে কিন্তু নদী
যারা নয় দৃশ্যমান—তাদের নিয়েও যাবে বয়ে
সকল বৈপরীত্যে ও অনুপস্থিতি
ভেসে যাবে সকলই—যাবে বয়ে নিরবধি,
জলের নীল থাবায় আঁকড়ে ধরে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে
সমস্ত পৃথিবী—বয়ে যাবে বিশ্ব,
ভেসে যাবে ক্লান্তি—হাই তোলা শক্তসুঠাম দেহ
চূর্ণিত হবে জল ঘূর্ণিতে নিঃস্ব,
ভেসে যাবে প্লাবিত পৃথিবীর প্রাণহীন শব—
সব কিছু ভাসবে ফের,
পড়ে থাকবে আর্দ্র ডাঙা—স্যাঁতসেঁতে মৃত্তিকা শব্দহীন নীরব,
সুতরাং অত্যাচারীর গবাদিপশু যেন মেটাতে পারে তৃষ্ণা
মৌনতায় ভরে উঠবে চরাচর—
প্রকৃতিতে আর বাজবে না বাতাসের রুদ্রবীণা।