চতুর্দশপদী ও অন্যান্য

জন্মাষ্টমী—১

আলো এসো কালো যাও ভোর জন্মাষ্টমী
তোমারে ডাকিছে দ্যাখো তোমার জননী

রাধিকাও ডাকে আজ বিরহদিবসে
সে প্রেম ফিরিয়ে দাও কলির কলসে

হা কৃষ্ণ.. হা কৃষ্ণ, শোনো, যেনো কে ডাকছে
কবিতায় সাধনায় ভজনে মজেছে

..সহস্র মীরার জন্ম। কৃষ্ণপ্রেম। আলো।
ঘুম থেকে উঠে তাকে প্রেমফোঁটা দিও

মীরার ভজনে যদি ঘুম না ভাঙিও
সহস্র মীরার দ্রোহে এবার আসিও

জননীরাধিকামীরা নরক আন্ধারে
আলো হও আলো ঢালো নিখিল দুয়ারে

পাখিগুলি মরে গেছে বিগত প্রহরে
ডানা দাও। নখ দাও। খিদেটি, জঠরে...


জন্মাষ্টমী—২

তামাম নগরে জল তাধিনা বিস্ময়
করে পথ জ্বলে পথ নচিকেতাভয়

নদীটা রহস্যময় নদী মহাকাল
ভূমিটার ক্ষয় হয় নৌকা বেসামাল

জলে পথ জ্বলে পথ ছোবল নিশ্চয়
নাইয়া তবুও তুমি করিও সঞ্চয়...

প্রতিটা কামড় দাও বেঁচে থাকো তুমি
দাঁত জিভ খসে যদি বেয়াধি নিয়তি

প্রবল প্রবহমান নদীটা আয়াসে
লহরি লহরি ভাঙে তোমারে ভাসায়ে

দোহাই নাইয়া তুমি ধূমল দোহদে
হারিওনা পথটুকু অতীব সহজে

বেনোজল ঢোকে যদি বেগানা নিগম
করিও আলোর গন্ধে নসিবে ভ্রমণ!


আন্ধার জগৎ

টিকটিক মধ্যগতি; খরস্রোতা পিছে
পলি, বালি এ-ফুরসতে থিতিয়ে পড়েছে
নদী ও জীবনঘড়ি দৃশ্যে প্যারালাল
উর্বর সংসার গড়ে শ্লথ অন্তরাল

মোহনা কতটা বাকি? সে সংশয়ে আজ
পাখিটার ওড়া দেখি স্রোত বিপরীতে
খসে পড়ে পালক যে, আমার দেহতে
আমি যাই কবি যায় সময়ে বিরাজ
দুহাতে জড়িয়ে শুধু শূন্যতা নিজেরই;
মানুষের একমাত্র সেই তো আপন
যায় না কোথাও ছেড়ে গাছের মতন
শেকড় যে জনমেরও জনম গভীরে।

নভপথ... নভপথ.. নভঃ জ্যোতিঃপথ
আলো…আলো…ভেতরে তা আন্ধার জগৎ।


বিদায়চতুর্দশী

এ বড় কঠিন প্রিয় বিদায়বেদনা
কাটানো মুহূর্ত সব সিম্ফনি গড়েছে
বিধুর বাঁশিরও সুরে বাজে সেইক্ষণ
যেইক্ষণে পড়ে থাকে রাধিকার মন

বিস্তৃত জীবন দেখি, দেখি এ জগৎ
সম্পর্ক মুছে না কভু, রুপান্তরকামী
অপার বিস্ময় চোখে; দৃশ্য চেতনায়..
শুঁয়োপোকার বিদায়ে প্রজাপতি পাই,

অথচ এখন সেই বিচ্ছেদ সময়
অথচ এখন সেই চোখ অশ্রুময়
চারিদিকে আয়োজন ভরা সমাবেশে
তবুও, তবুও কাঁপে বুক, সে আবেশে

ডুবে যায়...ডুবে যায়...স্মৃতি যায় ডুবে
বাঁধন...বাঁধন...ছিঁড়ে হৃদির অতলে..


সর্বনাশ সুর...

ফজরে আজান ভাসে নবীর ফরজে।
শিশিরফরাশ পাতা, ফুলেল সুবাস..
প্রথম আলোয় দেখি ফ্লাওয়ারভাস
হাতে নিয়ে বসে আছ, অপ্সরার সাজে।

পরাহ্নে প্রেয়সী তুমি পারিজাত ফুল।
তোমার দোপাট্টা যেনো পারাবত পাখা
চোখের ভেতর তবু অনন্তটি রাখা
বাতাসে তোমার ওড়ে বনলতাচুল।

গোধূলি যখন এলো, বিষণ্ন বাতাস
বয়ে যায় চারিদিকে, তোমার চোখেতে
শূন্যতার ঘূর্ণিঝড়, আমি ঘূর্ণিপাকে;
অন্ধকার নেমে আসে, অস্থির আকাশ।

এখন কালোর মাঝে দুটি হাত দূর...
মধ্যরাত। জেগে উঠি। সর্বনাশ সুর।