তুমি নেই, চলে গেলে,
অন্ধকার নয়, দেখি আলো,
চতুর্দিকে বিচ্ছুরিত আলো
জীবনের আলো, মরণের আলো,
শেষ বিকেলের আলো
খেলা করে চোখে মুখে
এই আলোতেই ঘটে বিপদ ভঞ্জন,
মৃত্যু তবে শেষ নয়, শুরু,
আলোতেই হোক তবে অন্তিম উত্থান!
০৭.১১.১৪
জোনাকি
অন্ধকারে আলোর ফুল
পাপড়ি খুলছে, পরক্ষণে বুজিয়ে ফেলছে
যেন আগুনের স্ফুলিঙ্গ
ঘনবদ্ধ পাতার ভিড়ে;
ওরা বলে, জোনাকি,
আমি বলি, স্বপ্ন!
০৭.১১.১৪
নদী
নাও বইছে চাঁদের কিনার বেয়ে
একজন ধরে আছে হাল
অন্যজন বাইছে বইঠা,
একটু পরে তারা নেমে এল ভুঁয়ে
দু’জনে দু’তীর ঘেষে দুই নায়ে
নদী কিন্তু চুপচাপ যেন চিত্রার্পিত,
উত্তরের দিকে বহমান।
০৮.১১.১৪
গুবরে পোকা
গুবরে পোকা, বহু কষ্টে
আঁধার গহ্বর থেকে
পা-টেনে বেরিয়ে এসে
দাঁড়ায় প্রান্তরে, মুখ তুলে
বাতাসের শব্দ শোনে
স্পর্শ পায় রোদ্দুরের;
চতুর্দিকে ঝলমলে দিন,
গুবরে পোকা, আলোর অতিথি তুমি
কবিরও অতিথি!
০৯.১১.১৪
ফড়িং
ফড়িং এসেছে ভুলে
জগতের মাঝে,
মেঘ-রোদ্দুরের তপস্যার ধন
স্নেহধন্যা ফুল ও পাপড়ির
কী আনন্দ, পাতার ওপরে বসে
নাড়ায় শরীর রমণীয় যেন
জয় করে নিল পুরো গ্রহ
মাটি ও মানুষ,
আমি তাকে ভুল করে
ভালোবেসে
দু’হাত বাড়াই!
১০.১১.১৪
নক্ষত্রের চোখ মোছা জল
কুয়াশায় ভিজে যায় পথিকের মুখ
আমি বলি, নক্ষত্রের চোখ মোছা জল,
ধানের ক্ষেতের শীর্ষ ছুঁয়ে
কুয়াশার আস্তরণ জমে ওঠে,
স্রোতের মাথায় কুয়াশার ধোঁয়া
যেন কেউ শ্বাস ফেলছে অবিরল,
ঘোর ছায়া মেদুরতা স্মৃতি ভারাতুর,
আমি বলি, এই শীতে মানুষের প্রসব বেদনা!
১০.১১.১৪
লাশ
লাশ নামানো হচ্ছে গোরে
ঠিক সেই মুহূর্তে একটি প্রজাপতি
কোত্থেকে, ঝোপঝাড় ডিঙিয়ে উড়ে
এসে বসল লাশের বুকের ওপর,
প্রজাপতিটি নাড়াচ্ছে পাখনা;
আনন্দে না বেদনায়
কে বলবে!
১১.১১.১৪
শিশু
খোঁড়া হচ্ছিল কবর,
দৃশ্যটি দেখে শিশু জিজ্ঞাসা করে,
-আব্বা কী হচ্ছে ওখানে?
-কবর খোঁড়া হচ্ছে।
-কেন?
-তোমার দাদাকে মাটি দেয়া হবে।
-কেন?
-স্বর্গে যাবেন তাই।
-স্বর্গে গেলে কী হবে?
-পাপপূণ্যের বিচার হবে।
-আব্বা, আমি স্বর্গে যাব কবে?
-বৃদ্ধ হলে।
চিন্তায় পড়ে গেল শিশু।
হঠাৎ সে বলে উঠল কাঁদো কাঁদো স্বরে,
-আব্বা আমি স্বর্গে যাব না
দাদাও যাবে না
ওদের কবর খোঁড়া বন্ধ করতে বলো!
হতভম্ব পিতা শিশুটির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল!
১১.১১.১৪
অশেষ
দুই দিন কথা হবে
তিন দিন দেখা মিলবে
তারপর সবকিছু হাওয়া
দু’টি চোখ ঝুলে রইবে দিগন্তের কোণে
কিছু কথা বৃষ্টি হয়ে ঝরবে অকারণে,
সমস্ত অস্তিত্ব তবু হবে না বিলীন
টিকে থাকবে তোমার-আমার প্রিয় অনুষঙ্গ, একটি দিন!
১৪.১১.১৪
জীবন
অলিখিত কাহিনি একটাই,
কে যে লিখে রেখে যাবে,
লেখক নিজেই মৃত পড়ে আছে!
১৪.১১.১৪
নির্বাপণ
সে উৎসাহ মরে গেছে,
মরা-ইঁদুরের লেজ ধরে
শৈশবের বন্ধুদের তাড়া করে ফেরা
সেই সব প্রজাপতিদের পিছে-পিছে
গাছ-আগাছার ভিড়ে ছুটে চলা
দিন শেষে আঁধার ঘনিয়ে এলে
মন ভাঙা রঙ মেখে ঘরের দাওয়ায় উঠে আসা
দিন তো ফুরিয়ে যায় দিনের নিয়মে
রাত্রি তবে কারোই নিয়তি নয় শেষতক
আমি কিন্তু মরিনি এখনো।
১৯.১১.১৪
পাতিহাঁস
পাতিহাঁস, ঠোঁটে জল কাঁদা শ্যাওলা মাখা ঘ্রাণ
হেলেদুলে হেঁটে চলে
উঠোনের এক কোণ থেকে অন্য কোণে
রূপকথা ভেঙে উঠে আসা বন্দিদের সঙ্গে
মনে হয়, পৃথিবীর প্রতিটি স্পর্শের
স্বাদ পেয়ে গেছে
সারা হল তার অমরত্ব স্থান!
২১.১১.১৪
পুঁটিমাছ
পুঁটিমাছ বড়শি গাঁথা হয়
যত্রতত্র জালে ধরা পড়ে, অতি সহজ শিকার
সর্বদাই প্রাণ মৃত্যু সাথে নিয়ে ঘোরে
তবু তার সস্ত্রস্ত ও ভীত
শরীরের দুধ সাদা রঙ,
মাঝে মাঝে ঝলসে ওঠে সূর্যের আলোয়!
২১.১১.১৪
.........................................................
ঈদ সংখ্যার সূচিপত্র দেখতে ক্লিক করুন :