সম্পর্ক ।। হাসান আজিজুল হক

nonameবেঙ্গালোর থেকে কলকাতায় আসছি। আমাদের একই কামরায় আমার মুখোমুখি একজন বাঙালি ভদ্রলোক। ট্রেনটা যখন ছাড়বে তখন একটি ষোল-সতের বছরের মেয়ে আর এই পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ বছরের এক মহিলা উঠে এলেন। মহিলা বেশ সুন্দরী আর মেয়ে তো অপূর্ব সুন্দরী। ভেতরে ঢুকে মেয়েটি তার বাবার কাছে এসে বললো, ‘বাবা আমি তাহলে যাই।’বাবা বললেন, ‘সাবধানে যেও।’

তারপর স্ত্রী আর মেয়ে দুজনেই সামনে এগিয়ে গেল। মেয়েটি ট্রেন থেকে নেমে প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে জানালায় টোকা দিয়ে আরেকবার বিদায় নিল। মা বললেন, ‘দ্যাখো, জানালায় তোমার মেয়ে।’ তারপর তিনি সেই যে গেলেন আর তার দেখা নেই। হাওড়া পর্যন্ত প্রায় কুড়ি-বাইশ ঘণ্টার পথ ওই মহিলাকে আর দেখতে পেলাম না। তিনি হয়তো পাশেই কোথাও ছিলেন। আর এই ভদ্রলোক একাই বসে রইলেন। নানা ধরনের গল্প-গুজব হলো তাঁর সাথে। ট্রেন যখন হাওড়ায় এসে থামবে তার কিছু আগে ভদ্রমহিলা তার পাশে এসে বসলেন।

আমি বললাম, ‘আপনি এঁর ঘর করেন, ঘর সামলান, তা উনি এতক্ষণ ধরে এখানে কিভাবে আছেন আপনি দেখবেন না?’

আমার কথায় একটু হাসলেন মহিলা। বললেন, ‘না না—আমি সবই দেখছি।’

হাওড়া স্টেশনে যখন নেমে গেলাম প্লাটফর্মে প্রচণ্ড ভিড়। আমি প্রায় বাইরে চলে এসেছি, তখন দেখি ভদ্রমহিলা আমার পাশেই দাঁড়িয়ে। আমার দিকে একটু ফিরে বললেন, ‘আমি সত্যিই ওর ঘর করি না।’ পুনর্মুদ্রণ