খবর

করোনায় আমরা ভীত নই। বরং মোকাবেলা করছি গৃহে অন্তরীণ থেকে। এতে হয়ত কিছুটা বাড়তেও পারে মানসিক চাপ। তাই আসুন, খুলে দেই মনঘরের জানালা। নিজেকে চালিত করি সৃজনশীলতায়। আপনি নিয়মিত লিখছেন, বা এটাই হতে পারে আপনার প্রথম গল্প। লিখুন ফেসবুকে। চটজলদি ৫০০ শব্দের গল্প, বাংলা ট্রিবিউনের জন্য। একইসঙ্গে নমিনেট করুন আপনার পছন্দের আরও ১০ জন লেখককে। সেরা ১০ জন লেখক পাচ্ছেন কাগজ প্রকাশনের বই। আর অবশ্যই হ্যাশট্যাগ দিন #বাংলাট্রিবিউনসাহিত্যnoname

সময় আর কাটে না। সারাদিনের কাজ শেষেও অঢেল সময় এখন। এতটা অবসরও বোধহয় কেউ চায়নি। টিভি, ফেসবুকের টুংটাং, অল্প, স্বল্প, গল্প– কিছুতেই আরাম পাই না। রান্নাবান্নার কিছু এক্সপেরিমেন্টে প্রথম কদিন ভালোই কেটেছে। আঁখিকে ছুটি দিয়ে যদিও একটু বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু অল্প সময়েই আবার কভার ড্রাইভ দিয়ে উতরে গেছি। মেয়েরাও মজে আছে সারাদিন মোবাইল দেখায়, ইউটিউব দেখায়। আগের মতো আর গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে জড়াজড়ি করতে আসে না। মেয়েদের বাবাও ব্যস্ত। ঘরে বসেই অফিস করে। মাঝেমধ্যে রান্নাঘরে উঁকি দেয়, কী রান্না করছ? খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে? চুলা ফ্রি আছে, একটু চা হবে?
চাটুকুর জন্যই হয়তো তার একটু সময় পাই আমি। তা না হলে পুরো সময়টা তার কাজ আর কাজ। বড্ড কাজপাগল মানুষ। একসময় গাদা গাদা ফাইল নিয়ে বাসায় আসত। সারাদিন অফিস করে আবার আসার সময় যখন অফিসটাকে বাসায় তুলে নিয়ে আসত, এত রাগ লাগত! মাঝে-মধ্যে রেগেমেগে তুমুল ঝগড়াও করতাম। কিন্তু যতই আমি গলা উঁচু করতাম,ততই সে নিঃশব্দ হতো।

মেয়েরা একটু একটু বড় হওয়ার পর থেকে আমিও হাল ছেড়েছি। ধরেই নিয়েছি জীবন, স্বপ্নের মতো হয় না। স্বপ্নও জীবনের মতো হয় না। নামেই শুধু স্বপ্নের জীবন কিংবা জীবনের স্বপ্ন। বাকিটা কেবল বাহাস! আক্ষেপ করতে গিয়েও থমকে যাই। কারণ এটাই হয়তো আমার আরাধ্য জীবন। যদি নিজেও জীবনের পরতে পরতে দেখানো সুখের পরশ না চাইতাম তাহলে হয়তো পুরো জীবনটা অন্যরকম হলেও হতে পারত। মেয়েদের স্কুল,কোচিং, হোমওয়ার্ক,নাচের ক্লাস, গানের ক্লাসে ছুটতে ছুটতে দিনের সূর্য ডুবে যেত। কোভিড-১৯ সবকিছু থেকে ছুটি দিয়ে দিল। এমন ভীতিকর নীরস ছুটিকে উপভোগ্য করে তোলার জন্য কত কী আয়োজন করে চলছি প্রতিদিন! আহ! কোভিড-১৯ যদি তা বুঝত!

মাসদুয়েক আগে ছোট ভাই এসেছিল। আসার সময় একটা শপিংব্যাগে করে বাবার বাসায় ফেলে আসা আমার কিছু হীরা-জহরত নিয়ে এসেছিল। পুরনো হলদে হয়ে যাওয়া সাদা কাগজগুলো দেখে আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না এগুলো এখনও আছে! বাসা বদল করতে গিয়ে স্টোর রুম থেকে নাকি কাপড়ের ব্যাগটা পেয়েছিল মা। দশ বছর আগের সঞ্চয়গুলো ছোট ভাইয়ের হাত থেকে নিয়ে হালকা চোখ বুলিয়ে রেখে দিয়েছিলাম সেদিন সময়ের অভাবে। এই কোয়ারেন্টাইন দিনে একদিন ধুলাবালি মুছে হীরা-জহরত হাতে নিয়ে বসি। হলুদ খামগুলো খুলি। হলদে হয়ে আসা সাদা কাগজের চিঠির শব্দগুলো একটুও মলিন হয়নি। বন্ধুদের চিঠি, খালার চিঠি, বড় চাচার চিঠি, মেজ মামার চিঠি আর হিমাদ্রির চিঠি। হিমাদ্রি প্রতি সপ্তাহে চিঠি লিখত। স্বপ্নের কথায় ঠাসা চিঠিগুলো পড়তে পড়তে ভাবতাম হিমাদ্রির স্বপ্নের আকাশে আমি গাঙচিল হব। কিন্তু মুহূর্তেই আবার মোহ কেটে যেত। বিজ্ঞানের ছাত্র হিমাদ্রি ছবি আঁকত দারুণ। হাতের কাছে যে কাগজই পেত, তাতেই কিছু না কিছু আঁকত। বিজ্ঞানে ওর তেমন আগ্রহ ছিল না। খুব খেয়ালি ছিল। পৃথিবীর মানুষদের মতো না। এমন পাগলা কিসিমের মানুষের বন্ধুত্ব,প্রেমের আলাপ-প্রলাপ ভালো লাগলেও কেন জানি ভবিষ্যৎ ভাবনায় কখনোই আশাবাদী হতে পারিনি।

টিভিতে প্রতিদিন মৃত্যুর খবর দেখি আর ভয়ে আঁতকে উঠি। এরপর কে? এরপর কার পালা? গতকাল দুপুরে দেশে কোভিড-১৯ পজিটিভের নতুন তালিকায় হালিশহরের হিমাদ্রি মজুমদারের নামটা শুনে কেঁপে উঠলাম। অনেকক্ষণ এই চ্যানেল,ওই চ্যানেল করেও আর কোনো তথ্য বের করতে পারলাম না। খুব অসহায় লাগছিল। আমি ঠিক শুনছি তো! হিমাদ্রিই কী! হিমাদ্রির পুরো নাম তো হিমাদ্রি লুব্ধক ছিল! কলেজে অনেকেই ওকে লুব্ধক নামেও ডাকত!