X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

নিখিল কৃষ্ণ মজুমদারের সাক্ষাৎকার

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : বরুণ কুমার বিশ্বাস
০৩ মে ২০২৪, ০০:০০আপডেট : ০৩ মে ২০২৪, ০০:০০

বাংলাদেশের লোকবাদ্যযন্ত্রের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহুকালের পুরোনো। শুধু লোক গানে ব্যবহার নয়, বরং বাদ্যযন্ত্র কেন্দ্রিক নানান সংস্কারও প্রচলিত রয়েছে আমাদের দেশে। সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তি ও প্রকৌশলের যেমন উন্নয়ন হচ্ছে, একইসাথে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নানান লোকবাদ্যযন্ত্র। ফলে একতারা, দোতারা, বাঁশি, সারিন্দা, সরোদ, ডুগডুগি, শিঙ্গা, খঞ্জনি, প্রেমজুরি, ঢোল, খোল, খমকসহ অন্যান্য লোকবাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার ও চর্চা কমে যাচ্ছে দিন দিন। ব্যবহার কমার কারণে বাদ্যযন্ত্রগুলোর উৎপাদনও কমেছে। কালের বিবর্তনে বহু বাদ্যযন্ত্রবাদক নিজেদের পেশা বদলে ফেলেছেন। এমন নির্মম বাস্তবতার মধ্যেও হাতেগোনা অল্প কিছু মানুষ লোকবাদ্যযন্ত্রকে ঘিরে স্বপ্ন দেখেন এবং স্বপ্ন দেখান। তেমনই একজন ব্যক্তিত্ব নিখিল কৃষ্ণ মজুমদার, তাঁর একান্ত চেষ্টাতেই তিনি গড়ে তুলেছে ‘মুরলী লোকসংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার হোচলা গ্রামে কেন্দ্রটি অবস্থিত।
‘মুরলী লোকসংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র’ নিয়ে এবং কীভাবে তিনি লোকবাদ্যযন্ত্র নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠলেন সেসব নিয়ে কথা বলেছেন নিখিল কৃষ্ণ মজুমদার।


বরুণ কুমার বিশ্বাস :
 কীভাবে আপনি লোকবাদ্যযন্ত্রের জগতে প্রবেশ করলেন?
নিখিল কৃষ্ণ মজুমদার : আমার বাদ্যযন্ত্র জীবনের শুরু আমার বাবার হাত ধরে। আমার বাবা কীর্তন গান করতেন। কীর্তনের গুরুত্বপূর্ণ বাদ্যযন্ত্র হলো মন্দিরা এবং শ্রীখোল। এই খোল এবং করতাল বা মন্দিরা বাজানোর মাধ্যমে আমার বাদ্যযন্ত্র বাজানো জীবনের শুরু। আজিদ কাকা ছিলেন আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তিনি আমার প্রথম ওস্তাদজীর অর্থাৎ ওসমান শেখের বাবা, তার পরামর্শেই ১৯৭০ সালে আমাদের বাড়ির কৃষিকাজ শুরু হয়। এর আগে আমাদের কখনো কখনো তিনবেলা ভাত খাওয়া সম্ভব হতো না। আমার ওস্তাদজি ওসমান দাদার সাথে থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত কৃষিকাজ করতাম তারপর স্কুলে চলে যেতাম। রাতে যখন ওসমান দাদা আমাদের বাড়িতে খেতে আসতেন তখন তিনি একটা বাঁশি বাজাতে বাজাতে আসতেন। সেইঅর্থে সেটা কোনো স্কেলের বাঁশি ছিল না। খুব সাধারণ একটা বাঁশি। ওটাতে তিনি রূপবান পালার ‘ও দাইমা কীসের বাদ্য বাজে গো' গানটা বাজাতেন। সেই প্রথম আমার কানে বাঁশির সুর আসে। সেইথেকে আমি বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি। ওসমান দাদার কাছে আমি প্রথম বললাম, আমাকে একটা বাঁশি বানিয়ে দিও। তিনি লোহার বালতির হাতলকে আগুনে পুড়িয়ে পিটিয়ে সোজা করে তার মাথা চিকন করে তারপর গ্রামের সাধারণ বাঁশকে ছিদ্র করে দিলেন, আর সেটাই হয়ে গেলো বাঁশি। তারপর মেলা থেকে ৫ টাকা দামের একটা বাঁশি কিনে দিয়েছিলেন। সেই আমার পথচলা শুরু। বাড়িতেই খোল, মন্দিরা আর বাঁশি বাজাতাম। সে সময়ে আমাদের বাড়িতে একটা রেডিও ছিল। সেই রেডিওতে যখন আব্দুল আলীমের গান বাজতো বাবা তখন আমাকে ডাকতেন। আমি লক্ষ্য করতাম গান শুরুর আগে প্রথম দোতারার টোকা হয় তারপর বাঁশির সুর। দোতারার সাথে বাঁশির যে কম্বিনেশন সেটা আমাকে বেশ আকৃষ্ট করতো। সেই সময়ে আমার কাছে বাঁশি ছিল কিন্তু দোতারা তখনো নেই। মনে মনে দোতারা আছে কিন্তু তা কিনে দেওয়ারও কেউ নেই। মেট্রিক পরীক্ষার আগে আমার স্কুলের পণ্ডিত স্যার আমাকে একটা স্কুলে প্রোগ্রাম করার জন্য নিয়ে যান। আমাদের পাশের এলাকা মোল্লারহাটের একজন দুঃস্থ তবলাবাদকের বাড়ি নিলাম হয়ে গিয়েছিল, তাকে কিছু সহযোগিতা করার জন্য আমাদের প্রোগ্রাম করতে নিয়ে যান। আমরা তার বাড়িটা ছাড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন স্কুলে প্রোগ্রাম করে টাকা তুলতাম। এরকম একটা জায়গায় অনুষ্ঠান করতে যাওয়ার পর আমাদের একটা বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করার জন্য নিয়ে যান। সেখানে দেখি,  একজন বুড়ো দাদু বসে দোতারা বাজাচ্ছেন। আর তারপাশে একটা ভাঙা দোতারা পড়ে ছিল। আমি তার কাছে ওটা চাইতেই উনি আমাকে ওটা নিয়ে যেতে বললেন। আমার সে যে কী আনন্দ,  তা বলে প্রকাশ করা যাবে না। ওটার শুধু খোলটা ছিল, চামড়া ছিল না। আমি ভেবেছিলাম মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে তারপর দোতারাটার চামড়া ছাওয়াব। পণ্ডিত স্যারের ছেলে আমার ক্লাসমেট ছিল, নাম বরুণ চক্রবর্তী, সে আমার সাথে ওই অনুষ্ঠানে তবলা বাজিয়েছিল। মেট্রিক পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে, দুটো পরীক্ষা বাকি থাকতেই বরুণ একদিন আমার মায়ের কাছ আসে। এসে বলে যে, নিখিল দোতারাটা দিতে বলেছে, ওটা ছাওয়াব। মা তাকে চিনতো বলে ওটা দিয়ে দেয়। দোতারাটা নিয়ে সে তার বাড়ি চলে যায়। প্রতিদিন আমি পরীক্ষা দিয়ে এসে দেখি দোতারাটা ঠিকঠাক আছে কিনা, সেদিন দেখি নেই। মায়ের কাছে বিস্তারিত শুনে আমার ভীষণ মন খারাপ হয়। ১৯৭৭ সালের পরীক্ষায় ফেল করলাম। পরে ১৯৭৮ সালে মেট্রিক পরীক্ষায় পাশ করলাম। সেই বছরই আমাদের বাড়িতে বাবা জ্বালিনি হিসেবে একটা কাঁঠাল গাছ কেটে রেখেছিলেন। সেইখান থেকে কাঠ নিয়ে আমি প্রথম দোতারা বানাই। আমার তেমন যন্ত্রপাতিও ছিল না, দোতারা কীভাবে বানায় তাও জানা ছিল না। তারপরেও যতটুকু পেরেছিলাম দোতারার রূপ দিয়েছিলাম। আব্দুল আলীমের গান শুনে শুনে সেই দোতারায় সুর বাঁধা শিখি। মূলত কোন তারে কী সুর বাজে সেটা বুঝে বুঝেই সুর বাঁধা শিখি। আমার বাবাও আমাকে সহযোগিতা করেছিলেন। এইভাবে একসময় দোতারায় সুর বাঁধা পুরোপুরি শিখে ফেললাম। তবে এখন বুঝতে পারি আমার সেই দোতারাটা তেমন মানের কোনো দোতারা ছিল না। কিছুদিন পরে আমাদের বাড়ির একটা ব্রিটিশ আমলের আম গাছ বাবা বিক্রি করে দেন। গাছ কাটার সময় আমি ব্যাপারীদের কাছে একটুকরো কাঠ চাই, ব্যাপারীরা আমার কাছে জানতে চান আমি কাঠ দিয়ে কী করব। আমি দোতারা বানাবো শুনে একজন জিজ্ঞেস করলেন, তুমি দোতরা বাজাতে পারো? আমি বললাম, হ্যাঁ। সাথে সাথে একজন বললেন, তুমি আমাদের একটু বাজিয়ে শোনাও দেখি। আমি সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে ঘর থেকে আমার দোতারাটা নিয়ে এসে বাজিয়ে শোনালাম। ব্যাপারীরা বললেন, এই গাছের মালিক এখানে নেই, তুমি যদি এই গাছ থেকে দোতারার জন্য একটুকরো কাঠ নাও তবে মালিকের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। তোমার যেখান থেকে খুশি কাঠ নিতে পারো। পরে আমার প্রথম দোতারাটা ৫০ টাকায় বিক্রি করে দিলাম। বিক্রি করে সেই টাকায় চামড়া, তার, শিরীষ কাগজ কিনেছিলাম। সেই কাঠ দিয়ে যে দোতারাটা বানালাম তাতে পাখি ভালো বানাতে পারিনি। পরে এই দোতরাটাও বিক্রি করে দেই। তারপরের দোতারাটা বেশ সুন্দর করে বানাতে পেরেছিলাম। এভাবে ধীরে ধীরে বাঁশি ও দোতারার সাথে তথা লোকবাদ্যযন্ত্রের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যাই।

নিজের গড়া প্রতিষ্ঠানের সামনে বরুণ কুমার বিশ্বাস : বাংলাদেশ বেতারে কীভাবে যন্ত্রশিল্পী হিসেবে প্রবেশ করলেন সেই বিষয়ে যদি কিছু বলেন।
নিখিল কৃষ্ণ মজুমদার : আমি সেসময় মোটামুটি বাঁশিই বাজাই। আমাদের গ্রামের একজন গানের ওস্তাদ তাঁর নাম শেখ শামসুর রহমান, তিনি তখন বাংলাদেশ বেতারে পল্লীগীতি গাইতেন, তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজানোর জন্য আমাকে নিয়ে যেতেন। ১৯৮২ সালের দিকে আমার ক্ল্যাসিকালে গুরুদেব ওস্তাদ শেখ আলী আহম্মদের কাছে চলে যাই। ওনার বাড়ি বাগেরহাট হলেও থাকতেন খুলনায়। ওনার কাছে যাওয়ার মাধ্যম ছিলেন ওস্তাদ রাশেদ উদ্দিন তালুকদার। শুধু ক্ল্যাসিকাল জানা ছিল না বলে আমি বেতারে সুযোগ পেয়েও যাইনি। যখন শিখতে পারব তখন যাব, এমন একটা পণ করেছিলাম। পরে ১৯৮৫ সালের দিকে আমার ওস্তাদই আমাকে নিয়ে গেলেন, তিনি বেতারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলেছিলেন যে, এই ছেলেটা তুখোড় ছেলে, দুই-তিনটা ইনস্ট্রুমেন্ট বাজাতে পারে। বেতারে যাওয়ার পর প্রথম অডিশন দিলাম শ্রীখোলে। তারপর বাঁশিতে অডিশন দিলাম, তারপর দিলাম দোতারায়। আমি তিনটাতেই পাশ করলাম। এই পরীক্ষা হয়েছিল ১৯৮৫ সালের ১৬ জুলাই। পরদিন অর্থাৎ ১৯৮৫ সালের ১৭ জুলাই প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বেতারে জমা দেওয়ার পর আমাকে জানানো হলো যে, আজ থেকে ক্যাজুয়াল বেসিসে বাংলাদেশ বেতারে চাকরি শুরু হলো। তখন মাসিক ৫০০ টাকা চুক্তিতে সেই চাকরিতে যোগ দিলাম। পরে ১৯৯০ সালে আমাকে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ বেতারের খুলনা কেন্দ্রেই নিয়োগ প্রদান করা হয়।

বরুণ কুমার বিশ্বাস : আপনি তো বাঁশি, দোতারার বাইরেও আরো অনেক বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন সেগুলো সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।
নিখিল কৃষ্ণ মজুমদার : ওস্তাদের কাছেই আমার বাঁশির ক্ল্যাসিকাল ও কর্মাশিয়াল বাজানো শেখা অব্যাহত ছিল। বাংলাদেশ বেতারে যোগ দেওয়ার পর দেখলাম সেখানে একজন ম্যান্ডোলিন বাজায়। পরে সেটা নিয়ে দেখি দোতারার সাথে এর মিল আছে, আর ভীষণ তীক্ষ্ণ ও মিষ্টি সুর। আমারই একজন ওস্তাদ ছিলেন নাম শওকত হোসেন তার মাধ্যমে কোলকাতা থেকে একটা ম্যান্ডোলিন আনলাম। শওকত হোসেন এবং অপূর্ব রায় ওনাদের সহযোগিতায় আমার ম্যান্ডোলিন বাজানো শুরু।
বেতারের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীত বা নজরুলগীতিতে আমার বাঁশি বাজানোর সুযোগ না থাকলে আমার স্যার তানপুরা বাজাতে বলতেন, আমি তানপুরা বাজাতাম। বেতারে আধুনিক গানের সাথে একই গানে একাধিক যন্ত্রের পিচ দিয়েছি। একই গানে বাঁশির পিচ দিয়ে দেওয়ার পর, শুরু হতো বেহালার পিচ। বেহালার পিচ শেষ হতে না হতেই বাঁশি রেখে ম্যান্ডোলিনের পিচ দিয়েছি। আমার বাবার কবিগান শোনার আগ্রহ ছিল, কবিগানের সাথে কাঠিঢোল যেন একে অপরের পরিপূরক। কবিয়াল বিজয় সরকারকে আমি দাদু বলে ডাকতাম। ওনার গানে আমি কাঠিঢোল বাজিয়েছি। কবিয়াল বিজয় সরকারের গানের সাথে কাঠিঢোলের যে মাখামাখি ব্যাপার, বা মিষ্টি সম্পর্ক তা বলে বোঝানোর না। বাংলাদেশ বেতারে বসেই আমার কাঠিঢোল ও ম্যান্ডোলিন শেখা ও প্র্যাকটিস করা। ম্যান্ডোব্যাঞ্জোর ব্যবহার খুব বেশি দিনের নয়, এটি মূলত দোতারার সাউন্ডকে কীভাবে আরো বাড়ানো যায় তারই আধুনিক রূপ। ম্যান্ডোব্যাঞ্জোর ভিতরে একটা পিকাপ লাগানো হয়, তার মাধ্যমেই মূলত সাউন্ড বাড়ানো হয়। দোতারা ও ম্যান্ডোব্যাঞ্জোর পার্থক্য হলো ম্যান্ডোব্যাঞ্জোর চামড়াটা একটু বড়ো, এর আওয়াজটা একটু বড়ো হয়। মোটা-তার এবং চিকন-তার দিয়ে কম্বিনেশন করা হয়। ফ্রেটবোর্ড লম্বা থাকে।
খমকের বিষয়টি শুরু হয় যখন তানভীর মোকাম্মেল সাহেব ‘লালন’ সিনেমা নির্মাণ করেন সে সময়ে, তখন কলকাতা থেকে কার্তিক দাস বাউল ঢাকায় এসেছিলেন। ওনার সাথে আমার থাকার সৌভাগ্য হয়। উনি আমার খমকের গুরু। তখনও খমকের প্রতি সেইভাবে আমার এতো আকর্ষণ তৈরি হয়নি, যতটা আকর্ষণ তৈরি হয় ওনার খমক বাজানো দেখার পর থেকে। তারপর ওনাকে বললাম গুরুদেব আমাকে খমক শিখিয়ে দিন। সেই সময় ওনার গানের সাথে বাঁশি বাজাই। পরে আমার হাতেখড়ি দেওয়ার সময় তিনি কলকাতা থেকে আমার জন্য একটা খমক, একটা রুদ্রাক্ষ, একজোড়া ছোট মন্দিরা তিনি এনে দেন। এই হলো খমক শেখার ইতিকথা। এরপর আমি কলকাতায় গেলে কার্তিক দাস বাউলের সাথে দেখা করি, উনি বাংলাদেশে এলে আমার সাথে দেখা করেন। বাংলাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল সাহেবের ‘নদীর নাম মধুমতি’ সিনেমা ব্যতীত অধিকাংশ সিনেমার ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিকে আমি কাজ করেছি। ঢাক, বাঁশি, দোতারা, ম্যান্ডোলিন, ঢোল, একতারা, হাঁড়ি, খোল, মন্দিরা এসকল বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছি। ওনার সাথে কাজ করার বিষয়টি সম্পূর্ণ অন্যরকম। কখনো টাকা-পয়সার হিসেবে নিয়ে নয়, বরং কতটা ভালো কাজ করতে পারব সেটাই সবসময় চিন্তায় থাকতো। সর্বশেষ কাজ করেছি তাঁর পরিচালিত ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ সিনেমার। এর আগে ‘জীবনঢুলী’-তেও কাজ করেছি।

লোকবাদ্যযন্ত্রের সংগ্রহ বরুণ কুমার বিশ্বাস : সুর-সংগীত বা বাদ্যযন্ত্রের প্রতি দুর্নিবার এই আকর্ষণ, সে বিষয়ে কি পরিবারের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়েছেন নাকি নিরুৎসাহিত হয়েছেন?
নিখিল কৃষ্ণ মজুমদার : আমাদের ভাইদের মধ্যে আমি একমাত্র মেট্রিক পাশ। আর বাকি সবাই মাস্টার্স পাশ। আমার বাবার পরে মেজদাদা সংসারের হাল ধরেন। তার নীতি ছিল পড়ালেখা না করলে বাড়িতে থাকতে দেওয়া হবে না। লেখাপড়া ঠিকমতো না করলে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হবে। এইসব নিয়ে বহুবার আমার বাঁশি নষ্ট হয়েছে। আমার বাবা কোনোদিন এসব নিয়ে কিছু বলেননি। তবে আমার খুব ইচ্ছা ছিল টেকনিক্যাল লাইনে পড়াশোনা করার। কিন্তু আমার মেজদাদার কথা ছিল জেনারেল লাইনে পড়ো নয়তো নয়। আমার ভেতরে কাজ করতো যে, জেনারেল পড়াশুনা করে অধিকাংশ মানুষ পরীক্ষায় খাতায় যা লেখে তা তারা না বুঝেই লেখে। আর এমন না বুঝে পড়াশোনা আমার ভালো লাগতো না। পরে আমি দেখলাম সপ্তাহের ৬ দিন আমি যা শিখি তারচেয়ে সপ্তাহে ১ দিন যা শিখি সেটাতেই আমার বেশি আনন্দ। জীবনে সেই ১ দিনের শিক্ষাই আমার জীবনে পেশা হিসেবে এসেছে। অর্থাৎ আমার নেশা আমার পেশায় পরিণত হয়েছে।  

বরুণ কুমার বিশ্বাস : বাংলাদেশের লোকবাদ্যযন্ত্র নিয়ে আপনার ভাবনা যদি আমাদেরকে একটু বলেন
নিখিল কৃষ্ণ মজুমদার : বাংলাদেশ হলো গানের দেশ। আমাদের লোকবাদ্যযন্ত্রগুলো সেই পুরোনো ধাঁতেরই রয়ে গেছে। এসকল বাদ্যযন্ত্রকে মোডিফাই করা বা আধুনিকায়ন করার বিষয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ আমার চোখে পড়েনি। একসময় আমার মধ্যে ইচ্ছা জাগে যে, আমাদের দেশের লোকবাদ্যযন্ত্রকে একটু সংস্কার করি। সেই থেকে দোতারার গঠন ও সুরের মাধুর্য আনায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমি কর্মজীবনে লক্ষ্য করি যে, বেতারে দোতারা আছে কিন্তু সেই দোতারায় সি-শার্পের উপরে আর সুর বাঁধা যায় না। সি-শার্পে বাঁধলেও মাঝেসাঝে তার ছিঁড়ে যায়। আবার দোতারা দেখতেও যে ভালো লাগার বিষয় আছে সেটাও ওগুলোতে নেই।  অর্থাৎ শ্রী কম আবার বাজানোর সময় যে আওয়াজ হয় সেটাও ভালো হয় না। এরপর আমার মাথায় আসে যে, লোকবাদ্যযন্ত্রগুলোকে সংস্কার করার চেষ্টা করি। লোকবাদ্যন্ত্রগুলোর মাপগত, সুরগত এবং দর্শনগত পরিবর্তন আনার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। একতারা, দোতারা এবং খমক নিয়ে বিভিন্নরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাচ্ছি। গমকের একতারার বিষয়ে আমরা সফলতা পেয়েছি। ঢাকায় ও ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডুতে বেশ বড়ো আয়োজন হয়েছিল, সেখানে অনেক সাধুরা এসেছিলেন এবং আমাদের একতারার প্রশংসা করেছিলেন। আবার আমাকে আমার গুরুদেব যে খমক দিয়েছিলেন সেই খমকের থেকে ভালো সাউন্ডের খমক তৈরি করতে পারি কিনা এমন উদ্দেশ্য নিয়ে আমি পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করি। আমি আমকাঠ, কাঁঠালকাঠ, মেহগনিকাঠ, সুন্দরীকাঠ, নিমকাঠসহ বিভিন্ন কাঠের দোতারা বানিয়েছি। এগুলোর মধ্যে নিমকাঠের দোতারায় সবচেয়ে ভালো সাউন্ড হয়। তবে বয়স্ক সারি কাঁঠালকাঠেও ভালো দোতারা হয়। ঢাকা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের মানুষের ধারণা দোতারা পাতলা হলে ভালো বাজবে। আর আমার চিন্তাচেতনা হলো দোতারা সারি কাঠের হবে, পাতলা হবে তার ভেতরেও ওয়েট থাকতে হবে। ওয়েট না থাকলে সুরের রেশ লম্বা হয় না। ওয়েট না থাকলে সেই সুর মাইক্রোফোনে ভালো নেয় না। পাতলা দোতারায় বড় আওয়াজ হলেও মাইক্রোফোনের সামনে যথাযথ আওয়াজ পাওয়া যায় না। আমি কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন দেশ থেকে ফোন পাই, তারা বলেন আমাদের দোতারার সাথে আপনার দোতারার সাউন্ড মিলছে না কেন? আমি তাদের বলি, আমি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে গবেষণা যাচ্ছি। আর কেউ তো এই গবেষণা করেনি তারা একটা গৎবাঁধা ফরমেটের বাইরে যায় না। তারা মিল থেকে কাঠ কিনে দোতারা বানিয়ে বিক্রি করে। তারা দোতারা বাজায় না, ফলে তারা আর ফরমেটের বাইরে আসতে পারেনি। শুধু দোতারার অবকাঠামোগত গঠন নয়, এর সাথে ফিটিংসের যন্ত্রাংশ বিভিন্নভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারপরে একটা ফলাফলে উপনীত হতে হয়। আমার কাছে মনে হয়, যে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নিজে সন্তুষ্ট হতে পারি না, সেই বাদ্যযন্ত্রের সুর শ্রোতাদের সন্তুষ্ট করবে কীভাবে!
বাঁশি তৈরির ক্ষেত্রে আমি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উন্নতমানের বাঁশের পোয়া সংগ্রহ করি, সেগুলো আমার নিজস্ব জমিতে রোপণ করি। বাঁশি তৈরির বাঁশের উপযুক্ত বয়স ৩ থেকে ৪ বছর। এই বয়সী পরিণত বাঁশ দিয়েই কেবল ভালো বাঁশি হতে পারে। বাঁশের বয়স ৩ বছরের কম হলে কোনো একসময় বাঁশির আকৃতি বা শেপ নষ্ট হয়ে যাবে। আবার বাঁশের বয়স ৪ বছরের বেশি হলে বাঁশি বানালেও একসময় তা ফেটে যাবে। এরকম নানান তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বহুমাত্রিক চিন্তা সবসময়ই করতে থাকি। আবার এসব তথ্য আমার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে শেয়ার করি যাতে তারাও বিষয়গুলো জেনে অন্যকেও জানাতে পারে।

বরুণ কুমার বিশ্বাস : আমাদের লোকবাদ্যযন্ত্ররের বাইরে কি বিদেশি বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আকর্ষণ আছে?
নিখিল কৃষ্ণ মজুমদার : বাদ্যযন্ত্র মানেই আমার কাছে বিশেষ কিছু। তবে সবসময়ের জন্য আমাদের লোকবাদ্যযন্ত্রগুলো আমাকে বেশি আকর্ষণ করে। আমি মনে করি, যেভাবে বিদেশি বাদ্যযন্ত্রগুলো সময়ের সাথে সাথে আধুনিকায়ন হচ্ছে, ঠিক একই লোকবাদ্যযন্ত্ররেরও আধুনিকায়ন জরুরি। যাতে অদূর ভবিষ্যতে এই লোকবাদ্যযন্ত্রগুলো যেন হারিয়ে না যায়। বরং কালের সাক্ষী হয়ে এই সকল বাদ্যযন্ত্র আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হয়ে বীরদর্পে যেন টিকে থাকে।

বরুণ কুমার বিশ্বাস : প্রথম কবে ছাত্রছাত্রীদের বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শেখানো শুরু করলেন?
নিখিল কৃষ্ণ মজুমদার : ১৯৮৬ সালে খুলনা শিল্পকলা এডাডেমিতে পার্টটাইম যন্ত্রশিল্পী হিসেবে পরীক্ষা দেই। সেই পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হই। একজনকেই নিয়োগ দেয়া হবে আর আমিই সেখানে নির্বাচিত হয়েছিলাম। ঠিক সেই সময়ে এক ছেলে আমার কাছে এসে বলে যে, আলী স্যারের কাছে আমি বাঁশি শিখতে গিয়েছিলাম তিনি আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। প্রসঙ্গত বলে রাখি, আমি যখন আলী স্যারের কাছে বাঁশি শিখতে যাই তখন তিনি আমাকে তিনটা শর্ত দিয়েছিলেন। প্রথমটি হলো—গুরুজনদের সম্মান করা। যেটা প্রত্যেক শিল্পীর ভেতরেই থাকে। তোমার ভেতরেও আছে। দ্বিতীয়টি হলো— আমরা অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত অন্য কাউকে বাঁশি শেখাতে পারবে না। তৃতীয়টি হলো— আমাকে কিছু সম্মানী দিতে হবে। আমি তখন তাকে বললাম, আমি আপনার সব শর্তই মানতে পারব তবে তৃতীয়টি ছাড়া। কারণ আমার আপনাকে সম্মানী দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। আমার বাড়ি থেকে কোনো টাকা পয়সা দেবে না। স্যার তখন বললেন, তুমি ক্লাস শুরু করো তবে কিছু না কিছু সম্মানী দিতে হবে। সবাই ১০০ টাকা করে দেবে তুমি ৫০ টাকা করে দিও। আমি বললাম, চেষ্টা করে দেখব। যাইহোক, সেই স্যারই যখন একজনকে শেখানোর বিষয়ে আমার কাছে পাঠালেন তখন সেই ৩টি শর্তের কথা মনে পড়ে গেল। আমি স্যারের সাথে কথা বললাম, তিনি তখন বললেন যে, নিখিল তুমি ছেলেটিকে শেখাতে শুরু করো। তার অনুমতি পেয়েই আমি শেখাতে শুরু করলাম। সেই থেকে গুরুর অনুমতিক্রমে ছাত্রছাত্রীদের বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শেখানো শুরু।

বরুণ কুমার বিশ্বাস : বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে মুরলী লোকসংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?
নিখিল কৃষ্ণ মজুমদার : লোকবাদ্যযন্ত্র বাজাতে শিখলেই কেবল মুরলী বাঁচবে না, কিংবা লোকসংস্কৃতি বাঁচবে না। লোকবাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখার পাশাপাশি সেগুলো যথাযথভাবে বানানোর কলাকৌশলও শেখানোর অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করছি। শুধু মুরলীতে নয় বর্তমানে অনলাইনেও বাজানো শেখানোর পাশাপাশি বানানোও শেখাচ্ছি। উদ্দেশ্য একটাই লোকবাদ্যযন্ত্রের জগৎটা যেন হারিয়ে না যায়। যেনতেনো রকমের বানানো শেখা নয় বরং যথাযথ, মানসম্মত বাদ্যযন্ত্র বানানোর প্রতি জোড় দিয়েছি। যাতে এরাই পরবর্তীকালে আমাদের লোকসংস্কৃতির এই বাদ্যযন্ত্রগুলোকে বাঁচিয়ে রাখে। প্রত্যেকে নিজের বাদ্যযন্ত্র নিজে বানাও, তারপর বাজাও; এইরকম একটা অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

‘আমরা প্রায় সব লোকবাদ্যযন্ত্র নিয়েই কাজ করছি’ বরুণ কুমার বিশ্বাস : মুরলীর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় কবে থেকে?
নিখিল কৃষ্ণ মজুমদার : যেদিন থেকে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে কাজকর্ম করা শুরু করি সেদিন থেকেই মুরলীর যাত্রা শুরু। তবে সেই যাত্রা ছিল অনানুষ্ঠানিক। আনুষ্ঠানিকভাবে পরে শুরু হয়েছে। যেদিন থেকে বাঁশের গায়ে ছিদ্র করে সুর তুলি সেদিন থেকেই মূলত মুরলীর পথচলা শুরু। ১৯৭০ সালের পর থেকেই শুরু হলেও ১৯৭৯ সালের দিক থেকেই এর যাত্রা শুরু। সেসময়ে প্রতি বৃহস্পতিবার আমাদের বাড়ির মন্দিরে আসর বসত। যারা খোল, বাঁশি, মন্দিরা বাজাতেন কিংবা কীর্তন করতেন তাদের উদ্দেশেই মুরলীর সৃষ্টি। বাঁশির আরেক নাম মুরলী, প্রথম দিকে শুধু বাঁশি নিয়ে হলেও এখন আমরা প্রায় সব লোকবাদ্যযন্ত্র নিয়েই কাজ করছি। আমি যখন শিখতে শুরু করি তখন আমার কাজে পর্যাপ্ত যন্ত্র ছিল না, অনুকূল পরিবেশ ছিল না। আমি চাই মুরলীর সুবাদে লোকবাদ্যযন্ত্রে আগ্রহী যে কেউই যেন আগামীতে শেখার মতো পরিবেশ পায়।

বরুণ কুমার বিশ্বাস : আর কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে আপনি সম্পৃক্ত?
নিখিল কৃষ্ণ মজুমদার : খুলনায় অবস্থিত ‘বাংলার বাউল শিক্ষা নিকেতন’ এবং ‘কল্পতরু আসর’ এ দুই জায়গাতেই আমি সম্পৃক্ত। প্রসঙ্গত বলে রাখি, কল্পতরু হলো শুদ্ধ সংগীত চর্চার আসর। অর্থাৎ মুরলী কিংবা বাংলার বাউল শিক্ষা নিকেতনে আমরা শিখলাম কিন্তু মাইক্রোফোনের সামনে প্র্যাকটিস করার সুযোগ পেলাম না, তেমন যেন না হয় সেই ভাবনা থেকে এর সৃষ্টি। অধীত বিদ্যাকে সকলের সামনে পারফর্ম করার প্ল্যাটফর্ম হলো কল্পতরু আসর। মানুষের সামনে গান করা বা বাদ্যযন্ত্র বাজানোর জড়তা কাটানোর উদ্দেশেই শিল্পীদের সুযোগ করে দেয় কল্পতরু আসর। প্রতি শনিবারের সন্ধ্যায় আসর বসে।

বরুণ কুমার বিশ্বাস : মুরলী লোকসংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের সংগ্রহে দুই বাংলার বিখ্যাত লোকশিল্পীদের ছবি কেন বা কী উদ্দেশ্যে রেখেছেন?
নিখিল কৃষ্ণ মজুমদার : যারা দুই বাংলার বাউল গান করতেন, কিন্তু এখন তারা প্রয়াত। আবার বর্তমানে যারা দুই বাংলায় বাউল গান করে যাচ্ছেন, মূলত তাদের ছবিই আমি সংগ্ৰহে রেখেছি। ভবিষ্যতে আরো ছবি সংগ্রহের ইচ্ছে আছে। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন প্রজন্মের সাথে বাংলার লোকগানের শিল্পীদের পরিচয় করিয়ে দিতেই এই প্রয়াস।

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
থানচির দুর্গম পাহাড়ি পাড়ায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে এনেছে বিজিবি
থানচির দুর্গম পাহাড়ি পাড়ায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে এনেছে বিজিবি
কোপা আমেরিকার প্রস্তুতিতে আর্জেন্টিনার দুই ম্যাচ
কোপা আমেরিকার প্রস্তুতিতে আর্জেন্টিনার দুই ম্যাচ
আরেকটু হলে ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যেতো ফাহিমের!
আরেকটু হলে ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যেতো ফাহিমের!
কানাডাজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ‘আর্টসেল’
কানাডাজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ‘আর্টসেল’
সর্বাধিক পঠিত
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব