করোনায় আমরা ভীত নই। বরং মোকাবেলা করছি গৃহে অন্তরীণ থেকে। এতে হয়ত কিছুটা বাড়তেও পারে মানসিক চাপ। তাই আসুন, খুলে দেই মনঘরের জানালা। নিজেকে চালিত করি সৃজনশীলতায়। আপনি নিয়মিত লিখছেন, বা এটাই হতে পারে আপনার প্রথম গল্প। লিখুন ফেসবুকে। চটজলদি ৫০০ শব্দের গল্প, বাংলা ট্রিবিউনের জন্য। একইসঙ্গে নমিনেট করুন আপনার পছন্দের আরও ১০ জন লেখককে। সেরা ১০ জন লেখক পাচ্ছেন কাগজ প্রকাশনের বই। আর অবশ্যই হ্যাশট্যাগ দিন #বাংলাট্রিবিউনসাহিত্য
আমরা ঘুম সংক্রান্ত একটি সংখ্যা করতে যাচ্ছি। অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানানো যাচ্ছে যে, এই সংখ্যার জন্য আমরা আপনাকে মনোনীত করেছি। আপনি আমাদের মনোনীত লেখকদের ভাগ্যবান একজন।
আমি নিজেকে সত্যিই ভাগ্যবান একজন লেখক মনে করে সম্পাদক সাহেবের কাছে বিষয় জানতে চাইলে মোবাইলের মাইক্রোফোন থেকে রিপ্লে আসে—আপনাকে ঘুম সংক্রান্ত একটি দীর্ঘ কবিতা লিখতে হবে।
কবিতার বিষয়-আশয় শুনে প্রথমে আমি আশ্চর্য না হয়ে পারিনি। লেখা পাঠানোর অদ্ভুত সময়সীমা বেঁধে দেয়ার কথা শুনে এই আশ্চর্যতার পরিসীমা বেড়ে গিয়ে আরও দ্বিগুণ হয়।
—ঠিক চৌদ্দ দিনের মধ্যেই লেখা ই-মেইল করতে হবে। একদিনও অতিরিক্ত সময় দেয়া হবে না। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
শুনতে শুনতেই কলটা কেটে যাবার পর আমি আবার কোনো এক বেগানা ঘোরে হারিয়ে যাই।
আমার ঘুম সংক্রান্ত ভালো ধারণা না থাকায় লিখতে সমস্যা হচ্ছিল। ধারণার ঘাটতি কাটানোর উদ্দেশ্যে ঘুমতত্ত্বের ওপর অনেক বইটই পড়ি। সবশেষে পড়ি উইল সেলফের দ্য নভেল ইজ ডেড। তারপর আজ লিখি—কাল লিখি করে করে কবিতাটা লিখতে বিলম্ব হচ্ছিল। এবং কোনো কবিতা লিখতে গিয়ে কখনো এতটা বিব্রত হয়েছিলাম কিনা তাও মনে পড়ছে না।
যা হোক এরপর অনেকবার লিখতে গিয়েছি কবিতাটা। অনেকবার লিখতে গিয়ে ফিরে এসেছি নিজের ভেতর থেকে—ফিরে এসেছি বাংলা একাডেমির নিরিবিলি ফুটপাতের জ্যোৎস্না থেকে— ফিরে এসেছি ডাকসুতে জম্পেস রংচায়ের অর্বাক থেকে। তবু লিখতে পারিনি।
কিন্তু আমি মনে-প্রাণে চাইছিলাম যে ঘুম সংক্রান্ত আমার নামেও একটা কবিতা থাকুক। পাঠক জানুক—কতটা অন্ধকার পরিভ্রমণ শেষে ঘুমের সাক্ষাৎ পায় একজন কবি। কতটা সংগমহীনতার সংগীত সাধনা করলে হারিয়ে যাওয়া যায় ঘুমের নৈঃশব্দ্যে।
মৃত্যু দিনের মতো কবিতা লেখার কোনো নির্ধারিত দিন তারিখ থাকে না। আসমানি অহির মতো কোত্থেকে যেন ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে কবিতার পালক—কেউ জানে না। এমনকি স্বয়ং কবিও না। তবু এই দুর্লভ পালকের প্রণয়ে বুঁদ হয়ে থাকি। তবু আমার সমূহ হাহাকার তাকিয়ে থাকে তার আগমনী পথের অভিমুখে অপেক্ষার মর্মরি তুলে।
সেই ঘোর থেকে কোনো এক অনির্ধারিত দিনে যেই কবিতাটা লেখার কথা ভাবি অমনি হাসপাতাল থেকে খবর আসে—কোনো এক অদ্ভুত শ্বাসকষ্টের ভেতর আপনার মা ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমরা তার ঘুমের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য হাসপাতাল যেতে চাইলে ডাক্তার বারণ করেন। আমরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ি নিজেদের ভেতর। সেই ঘুম থেকে মা আর ফিরে আসেননি।
মা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর থেকে সাংবাদিক, পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক কর্মী ও সামরিক সেনাদের মতো আমিও ঘুমোতে পারিনি। আমারও আর আগের মতো ঘুমোতে ইচ্ছে করে না এখন। মজনুর ভাই মানে মুগ্ধতা.কম-এর সম্পাদক সাহেব জোর তাগাদা দিলে কবিতাটা লেখার প্রণোদনাবোধ করতে থাকি শূন্যতার ভেতর। আবার কোনো এক অনির্ধারিত দিনের খাতা খুলে লিখতে শুরু করি।
এই রিক্ত-ক্লেদাক্ত জীবনের পাখা আমার, হে ঘুম—গহিন ঘুম, তুলে নাও চুমুতে তোমার…
দু-এক লাইন লিখতেই আমারও কেমন যেন অদ্ভুত শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। বেগানা ঘুমের ঘোরে চোখ নিস্তেজ হয়ে আসে। মনে হতে থাকে আমিও যেন তলিয়ে যাচ্ছি কোনো এক ঘুমের অতলে। কেবল ঘুমানোর আগে হাসনাইন হীরা ভাইয়ের সঙ্গে আজিজ মার্কেটে খুব রংচা খেতে ইচ্ছে করছিল—পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রটা খুব ঘুরে দেখতে ইচ্ছে করছিল—শেষ না করা কবিতাটা খুব লিখতে ইচ্ছে করছিল।
এবং আমি প্রবলভাবে চাইছিলাম—ঘুম সংক্রান্ত আমার নামেও একটা কবিতা থাকুক…একটা কবিতা থাকুক…