করোনায় আমরা ভীত নই। বরং মোকাবেলা করছি গৃহে অন্তরীণ থেকে। এতে হয়ত কিছুটা বাড়তেও পারে মানসিক চাপ। তাই আসুন, খুলে দেই মনঘরের জানালা। নিজেকে চালিত করি সৃজনশীলতায়। আপনি নিয়মিত লিখছেন, বা এটাই হতে পারে আপনার প্রথম গল্প। লিখুন ফেসবুকে। চটজলদি ৫০০ শব্দের গল্প, বাংলা ট্রিবিউনের জন্য। একইসঙ্গে নমিনেট করুন আপনার পছন্দের আরও ১০ জন লেখককে। সেরা ১০ জন লেখক পাচ্ছেন কাগজ প্রকাশনের বই। আর অবশ্যই হ্যাশট্যাগ দিন #বাংলাট্রিবিউনসাহিত্য
ফুলের মতো ফুটফুটে মেয়েটার নাম হয়ে যায় ফুলতি। সে ফোর পাস করে ক্লাস ফাইভে ওঠে। পড়াশুনায় অনেক ভালো। মাস্টারমশাই, সহপাঠী, বন্ধুবান্ধব সবার ভালোবাসায় সে সিক্ত। মন্টুর শরীর দিন দিন ন্যুব্জ হয়ে আসছে। এখন আর ভারী কাজ করতে পারে না। সামান্য আয়-রোজগার যা হয়, তাতে দুজনের দুমুঠো ডাল ভাতের জোগান দেয়া দায়। সংসারের অভাব-অনটন বাড়ছে। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কেটে যায়। সিক্সে ওঠার পর অভাব অনটনে ফুলতির পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়।
পাড়ার চুমকির সঙ্গে ঢাকায় পাড়ি জমায় ফুলতি। কিশোরী বয়সে যখন চিড়িয়াখানা, জাদুঘর ঘুরে বেড়ানো কিংবা স্কুলে সহপাঠীদের সঙ্গে গোল্লাছুট খেলার কথা, অবলা মেয়েটা তখন গার্মেন্টসকর্মী। সামান্য বেতন-ভাতায় খাওয়া থাকাই শক্ত! তবু ওভারটাইম, নাইটবিলের টাকা বাঁচিয়ে বুড়ো বাপের জন্য পাঠায়।
কারখানার কাজে চুন থেকে পান খসলেই চর থাপ্পড় আর গালমন্দ; কমতি নেই কোনো কিছুর। সে ভাবে ‘দুঃখে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার দুঃখ কী?’ সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে ডাল ভাতের মতোই হজম করে সব।
ফুলতি কিছুদিন আগে সাভারের একটি স্বনামধন্য পোশাক কারখানায় নতুন চাকরি নেয়। তার পদবি সুইং অপারেটর। প্রথমদিন ইন্টারভিউয়ের সময় তো সে এক মহাকাণ্ড ঘটেছিল। সিসি ফুটেজে পারফরম্যান্স দেখে ফ্যাক্টরি ম্যানেজার স্বয়ং হাজির। ফুলতির দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়ে বেতনও ধরলেন বেশ ভালো। খুশিতে আত্মহারা ফুলতি মনে মনে ভাবছে ‘বাবা তোমারে আর ভাঙা খড়ের ঝুপড়ি ঘরটাতে থাকতে হইব না। এইবার ছোট ঈদে বাড়িত গিয়া তোমার জন্য বড় একটা চৌচালা টিনের ঘর তুইলা দিমু।’
করোনায় ঢাকা শহর এখন নির্জন। সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত প্রায় সবই বন্ধ। ফুলতিদের কারখানা চলছে। বসের হুমকি, নিয়মিত কাজে না গেলে চাকরি তো যাবে, পাবে না বকেয়া বেতনও। গাড়ি-ঘোড়া সব বন্ধ। প্রতিদিন ফজর হতেই ভাতের বাটি নিয়ে বিরান পথে হেঁটে চলে ফুলতি। সন্ধ্যায় কারখানা ছুটির পর আবার হেঁটেই ফিরতে হয় দীর্ঘ পথ। গত সপ্তাহে হঠাৎ জ্বর, পাতলা পায়খানা আর বমি। সঙ্গে নাকি শুকনো কাঁশি আর গলাব্যথাও। তিন দিন পর বাড়িওয়ালার খোঁজ। অবস্থা দেখে মুহূর্তেই হটলাইনে কল—
‘হ্যালো, স্বাস্থ্য বিভাগ থেইক্যা বলতাছেন?’
‘হ্যাঁ, আপনি কে এবং কোথা থেকে বলছেন?’
‘আমি নাসির তালুকদার সাভার থেইক্যা।’
‘আমার এক ভাড়াইট্যার করোনা উপসর্গ দেখা যাইত্যাছে।’
‘আচ্ছা, আপনার বাসার ঠিকানা বলুন আমাদের লোক পৌঁছে যাবে।’
স্যাম্পল নেয়ার ২৪ ঘণ্টা পর বাড়িওয়ালাকে ফোনে জানিয়েছে, ফুলতির করোনা পজিটিভ!