পঞ্চাশে অচিন সোনার দেশ

অচিন মানুষ

মাঠের কৃষক, কারখানার শ্রমিক, বন্দরে খালাসি;
অফিসের কেরানি স্কুলের মাস্টার, আত্মীয় আর পড়শি;
সকলের এক আকুতি ও হাহাকার জলের তোলপাড়;
মুষলধারা বৃষ্টি, খোকা ও খুকির দল, বাঁধভাঙা এ ঢল।

‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।’

হিন্দু মা মন্দিরে, মুসলিম মা জায়নামাজে ফরিয়াদ করে—
দুহাত তুলে মিনতি করে, খ্রিষ্টান মায়ে ছোটে গির্জায়;
বৌদ্ধ মায়ে পেগোডায়, আদিবাসী মায়ে প্রকৃতির কাছে,
সকলের এ আকুল চাওয়া, গর্ভে এমন ছেলে দাও—
যে ছেলে দেশমাতৃকার দুঃখ ঘোচাবে, শৃঙ্খলমুক্ত করবে।
জন্মাল অবাক এক শিশু, সোনার জমিনের এ যিশু,
দিন দিন বড় হয়, হয় হিমালয়, দুনিয়া চোখ মেলে—
পৃথিবীর মানচিত্র বদলিয়ে অচিন দেশের নাম লেখালে।


হৃদয়ে রক্তক্ষরণ থামে না

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ থামে না, চর্যাপদের কবি থেকে
বিদ্রোহী কৈবর্ত্যের, ফকির সন্যাস ফরায়েজী
আন্দোলনের, তিতুমীরের বাঁশেরকেল্লার, ক্ষুদিরামের,
চট্রলার সূর্যসেন ও প্রীতিলতার; সুভাস বসুর, রবিঠাকুরের
ছুড়ে ফেলা নাইট, নজরুলের বিদ্রোহ, ললন ফকিরের
জীবন লালন, সব সাহসের একত্রিত উচ্চারণ জনকের নাম।


ধ্বংসস্তূপে জীবনের গান

অচিন দেশের ‘লোকে বলে বলেরে ঘরবাড়ি ভালা না আমার।’
ধ্বংসস্তূপের পরে জমিনে এ মাথা ও মাথা শরণার্থী ভিড়ে;
কাজহীন মানুষ খালি দুটো হাত, পারাপার সাঁকো সেতু পুল
ও মাঠ সকলই ধ্বংস। অফিস আদালত চারদিকে হাহাকার—
অশনি আহাজারি ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে, তীব্র ঝড়ে—
গাহিলেন স্বর্গ থেকে আনা, গিলগামেশের সুরে, ধ্বংসস্তূপের
পরে জীবনের এ গান, ‘নাও ছাড়িয়ে দে, পাল উড়াইয়া দে’—
এই নাওয়ে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিষ্টান আদিবাসী সকলে।