ভূমি দখল ঠেকাতে চবিতে সীমানা প্রাচীর!

চবির সীমানা প্রাচীর

 

দীর্ঘদীন ধরে চলছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুমি বেদখলের পায়তারা। অব্যহতভাবে ভুমি বেহাত হয়ে যাওয়া ঠেকাতে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে চবির সীমানা প্রাচীর নির্মান হচ্ছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় ভুমি দস্যুরা উঠে পড়ে লেগেছেন। তারা সীমানা প্রাচীর নির্মান ঠেকাতে এরই মধ্যে ষড়যন্ত্রে উঠে পড়ে লেগেছে। এই ষড়যন্ত্রে যোগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তা- কর্মচারী ও সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন জমির স্থানীয় জনগণ।

জানা যায়,  এই কুচক্রি মহলটি জাল দলিল বানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জমি বহিরাগতদের কাছে বিক্রির বাণিজ্য করে আসছিল। যা নিয়ে আদালতে বিভিন্ন সময়ে মামলা মোকাদ্দমা হয়েছে। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন সুযোগের অপব্যবহার করে এই চক্রটি নির্বিচারে ভুমি দখল করে আসছিল। অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন বেহাল অবস্থার হাল ধরেন বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বর্তমান উপাচার্য হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করার পর হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি বেদখল হওয়া রোধে সীমানা প্রাচীর নির্মান প্রকল্প হাতে নেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় পঞ্চাশ বছর পর এই উদ্যোগ সকলের কাছে প্রশংসিত হলেও তা স্থানীয় কিছু ধান্ধাবাজ ও ঐ কুচক্রি মহলের গায়ে আগুন ধরে। কেননা তারা ভাল করেই বুঝতে পেরেছে তাদের এতদিনের অসাধু কর্মকাণ্ডে বজ্রাঘাত হতে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য যে,  ১৯৬৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর প্রকৃত ভুমি ছিল ১৭৫৩ একর কিন্তু বিগত পঞ্চাশ বছওে এসব কুচক্রি মহলের দ্বারা প্রায় ৫০০ একর ভুমি বেহাত হয়ে যায় যার বাজার মূল্যে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। অভিযোগ আছে এসব চবি বেহাত হওয়ার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেট শাখার কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীও জড়িত রয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে সরকারি সম্পত্তি রক্ষার করার নিমিত্তে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যেগ গ্রহণ করা হয়েছে এতে যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন তাতে হালে পানি পাবে না। সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন স্থানীয় জনগনের চলাচলের রাস্তা বন্ধ হবে না বলেও সূত্রটি জানায়। এদিকে ষড়যন্ত্রকারীদের তালিকায় প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকও এই মহলের সাথে জড়িত রয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। এছাড়া চবির এক সাবেক উপাচার্যের নামও শোনা যায় সেই তালিকায়। তার অধীনেও বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি বেহাত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আবু সাঈদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জমিতেই ৬ ফুট উচ্চতার সম্পূর্ণ সীমানা প্রাচীর নির্মান হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কারো ব্যাক্তিগত সম্পত্তি নয় এটি রাষ্ট্রিয় তথা জনগনের সম্পত্তি। এটি কোন মতেই আর বেহাত হতে দেওয়া যাবে না।

চবির সীমানা প্রাচীর

এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বি.এস অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের দ্বারা নির্ধারিত সীমানাতেই প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে। এবং যে সমস্ত জমিতে ভুল বি.এস রয়েছে তা সংশোধনের জন্যে মামলার উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে।

বিগত পাঁচ দশক ধরে এ বিষয়ে চরম অবহেলার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি নিয়ে যে যেমন পেরেছে সেভাবে সুযোগ বুঝে এর অপব্যবহার করেছে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ হলে সেই সুযোগ চিরতরে বন্ধ হতে যাচ্ছে। ভিসি আরও জানান কোনও প্রকার ষড়যন্ত্রই এই প্রকল্পে বাস্তবায়নে সহ্য করা হবে না। আর বর্তমান ভিসির এমন মহতী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র- শিক্ষকসহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই এর সুমিষ্ট ফল ভোগ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিশিষ্ট জনেরা।

/এফএএন/