সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আশার আলো ‘দুর্বার স্কুল’

তানিয়া সুলতানার বয়স ৯ বছর। থাকে কুমিল্লা রেলস্টেশনের পাশের বস্তিতে। স্কুলে পাঠানোর সুযোগ কিংবা আর্থিক সক্ষমতা নেই পরিবারের। তাই বলে সে নিরক্ষর থাকেনি। থামেনি তার পড়াশোনাও। তার জন্যে স্কুলটাই চলে এসেছে রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে। কুমিল্লা রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে উদ্যমী কিছু তরুণের ‘দুর্বার স্কুলে’ তানিয়ার মতো এমন আরও সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা আসছে, শিখছে লেখাপড়া।

unnamed
তারুণ্যের কাছে সমাজের যে প্রত্যাশা তা পূরণে তরুণেরা বিমুখ হয়ে যায়নি তারই একটি উদাহরণ কুমিল্লার ‘দুর্বার ফাউন্ডেশন’ এর এই স্কুল। সামাজিক উন্নয়নমূলক এই সংগঠনটির তত্ত্বাবধানে কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনে পথশিশুদের শেখানো হচ্ছে জাতীয় সংগীত, শপথ, বর্ণমালা, নাচ, গান।
স্বেচ্ছাসেবী তরুণদের দুর্বার স্কুলের দুটি শাখা আছে। একটি লাকসামে আরেকটি কুমিল্লায়। দুই রেলস্টেশনেই তারা পথশিশুদের এই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে থাকেন। দুর্বার ফাউন্ডেশন উদ্যমের গল্প জানালেন সংগঠনটির সদস্য ইব্রাহীম হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখি রেলস্টেশনে অনেক শিশুরাই ভিক্ষা করছে, মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে কিংবা চুরি-ছিনতাইয়ে জড়াচ্ছে। তারা যেন এসব থেকে দূরে থাকে, অপরাধের বিস্তৃতি যেন তাদের মাধ্যমে না ঘটে এবং তারা যেন মূলধারায় যুক্ত হতে পারে সেজন্যেই আমাদের এই উদ্যোগ। কোনও প্রাপ্তির চিন্তা নয়, শুধু সমাজটাকে আর ওদের ভবিষ্যতকে  সুন্দর করার জন্যেই আমরা এখানে আসি।’
দুর্বার স্কুলের শিক্ষক কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের স্নাতকের ছাত্র বেলাল হোসাইন এখানে নিয়মিত আসেন। ছাত্রছাত্রীদের লিখতে-পড়তে শেখান সমাজের জন্য কিছু করার তাগিদ থেকে। তার ভাষায়, ‘এই শিশুরা মানুষের যে মৌলিক চাহিদা সেগুলোই ঠিকমত পায় না। আমরা চাই তাদের সেই সুবিধাগুলো দিতে। আমরা তাদের খাবার দেই, উৎসবে বস্ত্র দেই, মেডিক্যাল ক্যাম্পেরও আয়োজন করি। তারা সঠিক শিক্ষা পেলে আর অপরাধে জড়াবে না।’ কুমিল্লার এই দুর্বার স্কুলে স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা প্রায় ৫০ জন। সবাই তাদের অবসরে সময় দেন এই অবহেলিত শিশুদের। আরিফ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠা করা এই সংগঠনটি ২০১৭ সালে তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ অর্জন করেছিল জয়বাংলা ইয়ুথ এওয়ার্ড।