জাবিতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ

উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনরতরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেনঅনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলগুলো খুলে দিয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিতসহ তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর থেকে মিছিলটি বের করেন আন্দোলনরতরা। মিছিলটি পুরনো প্রশাসনিক ভবন প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনরত বাকি দুটি দাবি হলো– গত ৫ নভেম্বর উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনরতদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার বিচার এবং উপাচার্যের অপসারণ। 

সমাবেশে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ মঞ্চের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চার মাস হতে চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও বিষয়ের সুরাহা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, হল খালি করে দেওয়া হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ সিন্ডিকেট সদস্যদের মতের ভিত্তিতে হল খালি করে দেওয়ার অবৈধ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই এটি প্রত্যাহার করতে হবে।’ আগামী ৩ ডিসেম্বর উপাচার্যের দুর্নীতির খতিয়ান জনসম্মুখে প্রকাশ করার ঘোষণা দেন তিনি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সভাপতি সুস্মিতা মরিয়ম বলেন, ‘উপাচার্য যদি দুর্নীতি না করে থাকেন তাহলে সারাদেশের মানুষের সামনে সেটা প্রমাণ করুন যে তিনি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। দুর্নীতিবাজ উপাচার্যকে রক্ষার জন্য অগণতান্ত্রিকভাবে হল বন্ধ রাখা হয়েছে। এর ফলে পনেরো হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) জাবি শাখার সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ বলেন, ‘আমরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছিলাম। কিন্তু উপাচার্যের মদতে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। এই হামলার পরে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম আর এক মুহূর্তের জন্য উপাচার্য পদে থাকতে পারেন না। তার অপসারণের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হতে পারে।’

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জাবি শাখার মুখপাত্র খান মুনতাসির আরমান বলেন, ‘ফারজানা ইসলামকে ব্যঙ্গ করার জন্য একজন শিক্ষার্থীর নামে মামলা করা হয়েছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা এই প্রশাসন মোকাবিলা করতে পারেনি।’

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সদস্য রাকিবুল হক রনি বলেন, ‘হল খোলার জন্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কিছু শর্ত আরোপ করেছেন। এর মাধ্যমে আন্দোলনকারী ও শিক্ষার্থীদেরকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন।’

সমাবেশে একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

প্রসঙ্গত, দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনের একপর্যায়ে গত ৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় তার বাসভবন ঘেরাও করেন আন্দোলনকারীরা। পরদিন তাদের ওপর হামলা চালান শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে সেদিনই এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের মধ্যেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উপাচার্যের অপসারণ এবং ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন আন্দোলনকারীরা।