এক বছরেও সাংবাদিকের ওপর হামলার বিচার করেনি বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) অভ্যন্তরেই হামলার শিকার হয়েছিলেন দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের তৎকালীন বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি শামস জেবিন। তবে এক বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত কাউকেই বিচারের আওতায় আনা হয়নি।

হামলায় আহত শামস জেবিন (গত বছরের ছবি)

শামস জেবিন জানান, বশেমুরবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির অপর এক সদস্যের বহিষ্কারের প্রতিবাদ জানানোর জেরে পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েরই কয়েকজন শিক্ষার্থী তার ওপর হামলা করেছিলো। ওইসময় হামলাকারীরা বলেছিলো, তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছে শামস জেবিনকে তুলে নিয়ে যেতে। পরবর্তীতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় ওই দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন আব্দুর রহিম খানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং পাঁচ দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু একমাসেও উক্ত তদন্ত কমিটি কোনো রিপোর্ট প্রদান না করায় ২০ অক্টোবর পুনরায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট উক্ত তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন রফিকুন্নেসা আলী এবং সদস্য সচিব ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. নূরউদ্দিন আহমেদ।

তবে এরপর এক বছর পার হলেও বিচারের বিষয়টি তদন্ত কমিটিতেই থেমে আছে। হামলার শিকার শামস জেবিন জানান, তিনি তদন্ত কমিটির নিকট তার বক্তব্য প্রদান করেছেন এবং মূল হামলাকারীদের পরিচয়ও জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. নূরউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন অফিসে রয়েছে। শৃঙ্খলা বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন চাওয়া হলেই আমি প্রতিবেদনটি উপাচার্যের নিকট প্রদান করবো এবং শৃঙ্খলা বোর্ড প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’

এ বিষয়ে সাবেক উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) প্রফেসর ড. শাহজাহান বলেন, ‘রুটিন দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের একের পর এক সমস্যা সামনে আসায় এবং এরপরই ছুটি শুরু হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হয়নি।’

এদিকে দীর্ঘ এক বছরেও হামলার ঘটনার বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বশেমুরবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা। একুশে টিভি অনলাইনের বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি মাইনউদ্দিন পরান বলেন, ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যখন ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে বহিষ্কার করা হলো, তখন বশেমুরবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির বেশ কয়েকজন সদস্য তার পাশে দাঁড়িয়েছিলো যাদের মধ্যে শামস জেবিন ছিলেন অন্যতম। আর এ কারণেই তার ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো হামলার ১ বছর পার হলেও এখনও সেই চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, যা বিচারহীনতার সংস্কৃতিরই নামান্তর। আমরা চাই হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক এবং ক্যাম্পাসে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।’

প্রসঙ্গত, স্বৈরাচারী আচরণ এবং দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৯ এর ৩০ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন বশেমুরবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন।