বন্ধ ক্যাম্পাসে হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে চুরি, জানতেন না হল সুপার

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হলের গণরুমে চুরির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল(১৫ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার জিয়াউর রহমান হলের গণরুমের আবাসিক শিক্ষার্থীরা হলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে গেলে এই চুরির ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।

received_452361402393940

এ বিষয়ে ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ বলেন, ‘গতকাল আমরা হলের গণরুমে গিয়ে দেখি আমাদের অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে গেছে। এর আগে করোনায় ক্যাম্পাস বন্ধ হলে হল সিলগালা করার মাত্র ১ ঘন্টা পরে আসলেও হলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। হল প্রশাসন বলেছিল হল সিলগালা করা হয়েছে, এখন আর কিছুই করা সম্ভব না। এরপর করোনার প্রাদুর্ভাব কমলে কিছু বন্ধু হলে আসে এবং ট্রাঙ্ক, টেবিলের ড্রয়ার ভাঙ্গা দেখতে পায় ও বাকিদের জানায়। আজ যখন আমরা ক্যাম্পাসে আসি এবং হলে ঢুকি তখন দেখি নিজের বেডের উপরে তোষক, লেপ আর বালিশ ছাড়া কিছুই নেই। লাগেজ, ব্যাগ, বই, জামা জুতা থেকে রেকর্ডের সরঞ্জাম, মাইক্রোফোনসহ শখের সব কিছুই খোয়া গেছে। এমনকি ড্রয়ারের মধ্যে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ডও চুরি হয়ে গেছে।’

জিয়াউর রহমান হলের গণরুমের আবাসিক এই শিক্ষার্থী আরও জানান, ক্যাম্পাস বন্ধের আগে নিজে রান্না করে খাওয়ার জন্য হাঁড়ি-কড়াইসহ রান্নার সামগ্রী কিনেছিলেন, হলে গিয়ে কিছুই পাননি। 

received_3310588975676309

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে হাবিপ্রবির জিয়াউর রহমান হলের পূর্বদিকে কাঁচের রুম নামে একটি গণরুম আছে। যেখানে হাবিপ্রবির ১৯ ব্যাচের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা থাকতেন। করোনা মহামারির সময় হল সিলগালা করার পর গণরুমের প্রধান ফটকে তালা লাগানো হয়। কিন্তু সিলগালা করার কিছুক্ষণ পরে হলে গেলেও শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে দেয়নি হল প্রশাসন। এদিকে করোনা মহামারির ছুটি বাড়তে থাকায় শিক্ষার্থীরা হল প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে গণরুম থেকে নিজের জিনিসপত্র আনতে গিয়ে দেখে সব কিছু লণ্ডভণ্ড অবস্থায় পড়ে আছে। হলের মধ্যে থাকা সব ট্রাংক ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে আছে এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্রও হারিয়ে গেছে। হলের মধ্যে সংঘটিত এমন পুকুর চুরির ঘটনায় গণরুমে থাকা সব শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। হলে নিরাপত্তাকর্মী থাকা অবস্থায় কীভাবে এই পুকুর চুরির ঘটনা ঘটলো তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। এতে হলের নিরাপত্তাকর্মীদের অবহেলাকেই দুষছেন সবাই।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হলের (ডরমেটরি-২) হল সুপার অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এই মাত্র অভিযোগটি শুনলাম। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি আগামী রবিবার হলে গিয়ে সরেজমিন ঘুরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেব। তবে মুঠোফোনের মাধ্যমে যতটুকু জানতে পেরেছি বিগত সাত মাসে বিভিন্ন শিক্ষার্থী বিভিন্ন সময় তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র নিতে হলে এসেছিলেন। তাছাড়া গণরুমে একসাথে অনেক শিক্ষার্থী থাকায় আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয় কোন জিনিস কোন শিক্ষার্থীর। তবে বিগত সাত মাসে যারা হলে প্রবেশ করেছে তাদের সকলের ডকুমেন্ট আমাদের কাছে আছে। আজকের পর থেকে গণরুমে আপাতত সকল শিক্ষার্থী প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘কোনও শিক্ষার্থী হলে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের মোট ৫ মিনিট সময় দেওয়া হতো। এছাড়া আমাদের হলের অফিসারসহ একজন নিরাপত্তাকর্মী শিক্ষার্থীর সাথে রুমের ভেতরে প্রবেশ করতেন। আবার সাম্প্রতিক সময়ে অনেক শিক্ষার্থী মেসে উঠেছে। একজন শিক্ষার্থীর নাম করে অন্য শিক্ষার্থী এখান থেকে জিনিসপত্র নিয়ে গেলেও যেতে পারে। তবে আপাতত নির্দিষ্ট করে কোনও কিছুই বলতে পারছি না তদন্ত ছাড়া। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’