বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, রাজমিস্ত্রীর কাজে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী

সপ্তদশ শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে মহামারিতে সেলফ কোয়ারান্টিনে গিয়ে নাকি অপটিকস, ক্যালকুলাস, মহাকর্ষ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন। এবারের করোনা মহামারিতে বিশ্ব যখন স্থবির, সেসময় ঘরে বসে অনেকেই নিজেকে সময় দিচ্ছেন, নিজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন। কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে সময়টাকে কাজে লাগিয়েছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। করোনাকালে তিনি করেছেন রাজমিস্ত্রীর কাজ। আর এতে ব্যবহারিক কাজের অভিজ্ঞতা অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে বলেই দাবি এই শিক্ষার্থীর।

আবু সাঈদ জানান, করোনায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর থেকে সময় কাটছিলো না তার। এক পর্যায়ে ফ্রিল্যান্সিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। এ উদ্দেশ্যে একটি ল্যাপটপ কিনে কাজও শুরু করেছিলেন। কিন্তু ব্যাটে-বলে মিলছিলো না। এমন সময় ঢাকার আশুলিয়ায় একটি বাড়ি বানানোর পরিকল্পনার কথা শোনেন তার এক আত্মীয়ের মুখে। কালক্ষেপণ না করে সেখানে যুক্ত হয়ে যান তিনি।

এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘যেহেতু আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করছি, সেকারণে বাড়ির কাজে শ্রমিক এবং প্রকৌশলীর কাছ থেকে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা অর্জন হবে সেই উদ্দেশ্যেই সেখানে যুক্ত হয়েছিলাম। হয়েছেও তাই, আমি সয়েল টেস্ট থেকে পাইলিংসহ অনেককিছুই শিখেছি সেখানে। পাইলিংয়ে কোন পাথর ব্যবহার হয়, কতটুকু জায়গায় রড কত টন লাগে, সিমেন্ট কত ব্যাগ লাগে, বালি কতটুকু- এগুলোর অভিজ্ঞতা হয়েছে। এমনকি এগুলো আমি নিজেই কেনাকাটা করেছি।’ এ ধরনের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে বেশ কাজে দেবে বলেই মনে করেন আবু সাঈদ।

তার এই ব্যবহারিক কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের সময়কাল ছিল ছয়মাস। শ্রমিকদের যেকোনও কাজের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া, কাজ শেষে একই টঙে বসে চা খেতে খেতে পরিবারের খোঁজ নেওয়াসহ একজন প্রকৌশলীর বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন আবু সাঈদ। তিনি বলেন, 'ক্লাসে বসে যা শিখি আমরা যদি তা বাস্তব পরিবেশে প্রয়োগ করতে করতে শিখে যাই তবেই সেটা কাজে দেবে। এছাড়া পড়াশোনার পাশাপাশি বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন ক্যারিয়ারে বেশ কাজে দেয় বলেই জানি।

গত বছর ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় ওই বছর ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দফায় দফায় তা বাড়িয়ে সর্বশেষ নির্দেশনায় আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। গেল বাজেট অধিবেশনে শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও নির্দেশনা আসেনি।