সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ময়লার স্তূপ এখন 'উন্মুক্ত লাইব্রেরি'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে বেশকিছু ভাসমান খাবারের দোকান ছিল। করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেগুলো তুলে দেয়। এরপর জায়গাটি ধীরে ধীরে পরিণত হয় ময়লার স্তূপে। এ কারণে দুর্গন্ধে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়তেন। এখন বদলে গেছে জায়গাটা। প্রবেশপথে চোখে পড়ে সুশোভিত ‘উন্মুক্ত লাইব্রেরি’। আগামীকাল (১৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে সকাল-রাত খোলা থাকবে এটি।

ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলোতে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত পার্কে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত লাইব্রেরি দেখা যায়। সেই ভাবনা থেকে নিজ অর্থায়নে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উদ্যোগটি নিয়েছেন ডাকসুর সাবেক সদস্য ও ছাত্রলীগের সমাজসেবা বিষয়ক উপ-সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোতে পাবলিক পার্কে উন্মুক্ত লাইব্রেরি রয়েছে। আমার মনে হয়েছে, আমাদের দেশেও এ ধরনের লাইব্রেরি শুরু হওয়া দরকার। আমার ছোটবেলার স্বপ্ন, বাংলাদেশের প্রতিটি পার্কে উন্মুক্ত জায়গায় মানুষ চাইলে বই পড়তে পারবে।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বেছে নেওয়া প্রসঙ্গে সৈকতের কথা, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক জায়গা,এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৭ মার্চের ঐতিহ্য। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পাশে জায়গাটি। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গার মাঝখানটা কেন অবহেলিত থাকবে? সেই ভাবনা থেকে আমার এই উদ্যোগ।’

উন্মুক্ত লাইব্রেরিতে থাকবে বইদান বাক্স, কেউ চাইলে সেখানে বই রেখে যেতে কিংবা নিতে পারবে। তাই সবার কাছে বই দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সৈকত। তার দৃষ্টিতে, ‘মানুষের চিন্তা-চেতনা ও মননের উন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত দেশ কখনও পুরোপুরি উন্নত হয় না। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সমান্তরালে নৈতিক চিন্তা-চেতনারও উন্নয়ন প্রয়োজন। বই হলো চিন্তার উন্নয়ন বা বিকাশের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। বই যত সহজলভ্য হবে, এর বিকাশও তত দ্রুত হবে। কেউ যদি এখানে এসে এক পৃষ্ঠাও বই পড়েন তাহলেও কিন্তু তিনি উপকৃত হবেন। না পড়ে শুধু বই খুলে দেখলেও তিনি উপকৃত হবেন।’

উন্মুক্ত লাইব্রেরির ভাবনা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চান সৈকত, ‘অনেকের কাছে এটি একটি ছোট উদ্যোগ মনে হতে পারে। আমার কাছে এটি অনেক বড় কিছুর শুরু। আমার হাতে হোক বা যে কারও হাতেই হোক, দেশের সব জেলায় উন্মুক্ত লাইব্রেরির প্রচলন শুরু হোক। আমি মনে করি, এর চেয়ে বড় সমাজসেবা হতে পারে না।’

করোনাকালে টানা ১১৬ দিন ভাসমান মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের রিয়েল লাইফ খেতাব পান তিনি।