চবিতে ‘সেকেলে’ পদ্ধতিতে ভর্তি, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ করতে অনলাইনে স্টুডেন্ট ইনফরমেশন ফরম (এস‌আই‌এফ) পদ্ধতি চালু করে আইসিটি সেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর কমিটির সিদ্ধান্তে এই পদ্ধতি চালু করা হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া সম্পন্নের পরও সেকেলে পদ্ধতিতেই ভর্তি হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের তথ্যমতে, এস‌আই‌এফ পদ্ধতিতে আবেদনের ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভর্তিচ্ছুদের রোল নম্বর ও ব্যাংক রশিদ তৈরি হয়ে যাবে। তার সকল তথ্য অনলাইনে সংরক্ষিত থাকায় পরবর্তী সময়ে শুধু ব্যাংক ড্রাফট করে বিভাগে রশিদ জমা করলেই সম্পন্ন হবে ভর্তি কার্যক্রম।

এদিকে ভর্তিচ্ছুরা বলছেন, এই সহজ পদ্ধতিতেই আবেদন করেছেন তারা। কিন্তু বিভাগে ব্যাংক রশিদ জমা দিতে গিয়ে মুখোমুখি হচ্ছেন পুরনো পদ্ধতির। পুনরায় সেকেলে প্রক্রিয়ায় ফরম পূরণ করতে হচ্ছে তাদের। বাড়তি চাওয়া হচ্ছে ছবি ও সত্যায়িত কাগজপত্র, যা এর আগেই প্রাথমিক ভর্তির সময় জমা দিয়ে রেখেছেন তারা।

লোকপ্রশাসন বিভাগের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী সারওয়ার মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক এসআইএফ পূরণ করেছি৷ এখন সেটা বিভাগে জমা দিতে এসে শুনি ছবি লাগবে, ট্রান্সক্রিপ্টের সত্যায়িত ফটোকপি লাগবে। এগুলো নিয়ে সারাদিন ছুটাছুটি করেছি। গতকাল সকালে বিভাগে ব্যাংকস্লিপ ও এসআইএফ জমা দিয়ে আজও টাকা জমা দিতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয় অনর্থক এসআইএফ না করালেই পারতো। এতে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি আমাদের ভোগান্তি আরও বেড়েছে।’

গণিত বিভাগের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার কনা বলেন, ‘আমার সকল মূল কাগজপত্র, এসবের দুই সেট ফটোকপি ও নয় কপি ছবি প্রাথমিক ভর্তির সময় জমা দিয়েছি। এখন আবার বিভাগ এসব ডকুমেন্ট চেয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টায় লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিয়েছি। এরপর ব্যাংক স্লিপের কপিও আবার বিভাগে জমা দিতে বলেছে। তিন দিন ধরে ছোটাছুটি করেও ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে পারিনি।’

রাজশাহী থেকে মেয়েকে ভর্তি করাতে নিয়ে এসেছিলেন এক স্কুলশিক্ষক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘আমরা অনলাইনে যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করেই এসেছি। এখানে এসে দেখলাম তা ছিল অনর্থক। আবারও ফরম পূরণ করতে হচ্ছে। বিভাগ থেকে ছবি ও সত্যায়িত কাগজপত্র চেয়েছে, যেগুলো এখন আমাদের কাছে নেই। আজ ব্যাংক স্লিপ না আসায় টাকা জমা দিতে পারিনি। বাধ্য হয়ে মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রামে থাকতে হচ্ছে।’

আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যতটুকু শুনলাম, এস‌আই‌এফের তথ্যগুলো পুরনো পদ্ধতিতে শুধু কপি করা হচ্ছে। এতে অন্যান্য কোনও সুবিধা নেই। আমরা যেহেতু স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে গেছি, একই ধরনের তথ্য কপি করাটা অপ্রয়োজনীয়। এতে প্রচুর সময়ও নষ্ট হচ্ছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস‌এম মনিরুল হাসান এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

অ্যাকাডেমিক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার এস‌এম আকবর হোছাইন বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে এই পদ্ধতির সাথে পরিচিত করিয়েছি ঠিকই, কিন্তু বিভাগগুলো এতে এখনও অভ্যস্ত হতে পারেনি। তবে সব বিভাগ এটা নিচ্ছে না, কোনও কোনও বিভাগ নিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বিভাগ হার্ডকপি নিচ্ছে হয়তো সংরক্ষণ করতে চায়। আর বিভাগ চাইলে ছবি নিতে পারবে। আমাদের কিছু সমস্যা আছে, সেটা অতিক্রম করে ফেলবো।’