‘গবেষণা খাতে ঢাবির বরাদ্দ সম্মানের নয়’

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে গবেষণা খাতে ১৫ কোটি পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখে বাজেট ঘোষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেট ৯২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। তবে গবেষণা খাতে এমন বরাদ্দ ‘সম্মানের নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন সিনেট সদস্য ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য অধ্যাপক ড. এজেএম শফিউল আলম ভুইয়া। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনে এক আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বরাদ্দ ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে এবং প্রাক্তন গ্র্যাজুয়েট হিসেবে আমার জন্য বিষয়টি খুব বেশি সম্মানের হয় না। এদিকে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করা দরকার। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যদি গবেষণা না করেন, তাহলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে কাঙ্ক্ষিত মানে নিতে পারবো না।

বিশ্ববিদালয়ের গবেষণা ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাবনাও তুলে ধরেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় বছরে দুইটি সেমিস্টারে পরিচালিত হওয়ায় শিক্ষকদের সারা বছর ক্লাস নেওয়া, পরীক্ষার খাতা দেখাসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে তারা গবেষণা করতে পারেন না। এর প্রেক্ষিতে বছরে তিনটি সেমিস্টার চালুর প্রস্তাবনা দেন তিনি।

ইউরোপ, আমেরিকার দৃষ্টান্তও তুলে ধরেন ড. এজেএম শফিউল আলম ভুইয়া। তিনি বলেন, সেখানে চার মাস করে তিন সেমিস্টারে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়। একজন শিক্ষক সর্বোচ্চ দুই সেমিস্টার ক্লাস নেন, বাকি সময় গবেষণা, লেখালেখি, ফিল্ড ওয়ার্কে ব্যয় করেন। নর্থ আমেরিকায় খাতা দেখার কাজ টিচার অ্যাসিন্ট্যান্টরা করে গবেষণার সময় বাড়িয়ে দেন।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকরা যাতে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মানের রির্সাচ সেমিনারে অংশ নিয়ে তাদের প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে পারেন, এর সম্পূর্ণ খরচ বিশ্ববিদ্যালয় বহন করতে পারে। এছাড়াও এমফিল ও পিএইচডি তত্ত্বাবধানের জন্য শিক্ষকদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন তিনি। বলেন, গবেষণার জন্য ১০০ কোটি টাকার তহবিল তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় বৃদ্ধির চেয়ে সরকারের কাছ থেকে তহবিল আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, সরকার যাতে ঢাবিকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে এর জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সরকারকে এ ব্যাপারে প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে।

আগামী বছর থেকে চার ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেন অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ভুইয়া। তিনি বলেন, এতে কলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা এক ধরনের বৈষম্যের শিকার হবে। অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা দুইটি পরীক্ষা দিতে পারলেও কলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা পারবে একবার।

শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য পিএইচডি বাধ্যতামূলক; নিয়মটির কার্যকর হওয়ার সময়সীমা বাড়ানো এবং বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের সুবিধা বৃদ্ধি নিয়েও কথা বলেন অধ্যাপক ড. এজেএম শফিউল আলম ভুইয়া।