জাবির হলে সাংবাদিক নির্যাতন: ১ মাস পার হলেও মেলেনি বিচার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক সাংবাদিককে নির্যাতনের বিচারসহ চার দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) জাবির শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। 

মানববন্ধনে ঢাকা পোস্টের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আলকামা আজাদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন আজকের পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি বেলাল হোসেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে তদন্ত কমিটির দেওয়া রিপোর্টে ভুক্তভোগীর কোনও বক্তব্য সংযুক্ত করা হয়নি। অভিযোগের বিষয়ে কোনও তথ্যও উঠে আসেনি। অভিযুক্তদের বক্তব্য বিস্তারিত উঠে এসেছে কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য সংকোচ করা হয়েছে। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরপেক্ষ তদন্ত করেনি।’

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি রাকিবুল হক রনি বলেন, ‘যখন সাংবাদিককে গেস্টরুমে পেটানো হয় তখন হল প্রশাসন কোথায় ছিল। হল প্রশাসন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের লেজুড়বৃত্তি করে। পাঁচ দিনের মধ্যে নির্যাতনের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। অথচ এক মাস পার হলেও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। আসলে তদন্ত কর্মকর্তারা সাংবাদিকের দোষ খোঁজার চেষ্টা করেছেন। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একে অপরের পরিপূরক হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজনের দোষ আরেকজন ঢাকে। আমরা সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার শাস্তির দাবি জানাই।’

মানববন্ধনে ছাত্র অধিকার পরিষদের জাবি সংসদের নেতা জহির ফয়সাল বলেন, ‘লজ্জার সঙ্গে বলতে হয় বিশ্ববিদ্যারয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্য জাতির বিবেক সাংবাদিকদের মানববন্ধন করতে হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, গণরুম সংস্কৃতি রোধে জিরো টলারেন্স, কিন্তু হল প্রশাসন এই বিষয়ে ভ্রুক্ষেপই করছে না। হলের সিট বণ্টনে প্রশাসনের কোনও ভূমিকা নেই। এই অথর্ব প্রশাসন যদি তাদের দায়িত্ব পালন করতে নাই পারে তাহলে তাদের উচিত পদত্যাগ করা।’

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সামি আল জাহিদ প্রীতম বলেন, ‘হলগুলো চালায় ছাত্রলীগ, প্রশাসন নয়। প্রশাসন শুধু দাফতরিক কাজগুলো করছে। হলের আসন দখলে রেখে ছাত্রলীগ আসন সংকট সৃষ্টি করেছে। আজকের এই মানববন্ধন থেকে আমার দলের পক্ষে আমি বলতে চাই, অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের ধারা অনুযায়ী সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।’

এছাড়াও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ফ্রন্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায়, কালের কণ্ঠের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শুভ আনোয়ার, জাবিসাসের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।

মানববন্ধনে চার দফা দাবি জানানো হয়। এরমধ্যে রয়েছে- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল প্রশাসনের পদত্যাগ করতে হবে, নিরপেক্ষ আচরণ না করায় তদন্ত কমিটির গাফিলতি খতিয়ে দেখা এবং আবাসিক হল সমূহের নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের হাতে নিতে হবে। দাবি মেনে নেওয়া না হলে আগামী রবিবার নতুন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করার ঘোষণা দেন সাংবাদিকরা।

এর আগে, গত ২ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে কর্মরত এক গণমাধ্যমকর্মীকে গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হলটির আট ছাত্রলীগ নেতাকে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে ‘অবাঞ্ছিত’ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা। অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের আসাদ হক ও আরিফ জামান সেজান, ৪৭ তম ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের জিয়াদ মির্জা, দর্শন বিভাগের হাসিবুল হাসান রিশাদ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের রাইহান বিন হাবিব, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মুনতাসির আহমেদ তাহরীম, আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ্ এবং ৪৮ তম ব্যাচের রসায়ন বিভাগের জাহিদ হাসান।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ৩ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। তবে দীর্ঘ সময় পার হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।