কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধরের অভিযোগ

বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের ডাকাডাকিকে কেন্দ্র করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ ঘটেছে। এতে এক ছাত্রলীগ কর্মী আহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৪১৬ নম্বর কক্ষে এই ঘটনা ঘটে।

হামলার শিকার ছাত্রলীগ কর্মী তৌহিদ আহমেদ নাট্যকলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুর অনুসারী।

জানা গেছে, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য ডাকাডাকি করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদের সঙ্গে তৌহিদের বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে মাসুদসহ ১০-১৫ জন জুনিয়র শিক্ষার্থী মিলে দলবেঁধে তৌহিদের রুমের দরজা ভেঙে ঢোকেন। এরপর লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন। এতে তৌহিদের মাথা ফেটে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় হল প্রশাসন ও তৌহিদের সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তার মাথায় তিনটি সেলাই লেগেছে।

কবি-নজরুল-২

সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ বলেন, ‘আমার নামে হলে কোনও কক্ষ বরাদ্দ না থাকায় বিভাগের বড়ভাই রিপনের কক্ষে অবস্থান করছিলাম। ভোরে হলের তুষার ভাই আমার রুমে এসে ঘুম থেকে তুলে চড়-থাপ্পর মারতে থাকে এবং আমাকে কক্ষ থেকে বের করে দেয়।’

তার দাবি, বের হয়ে আসার সময় দর্শন বিভাগের প্রান্ত ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের উৎসের সঙ্গে দেখা হলে তাদের ঘটনাটি জানান। পরে তাকে নিয়ে অনুষ্ঠান শেষে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য তৌহিদের কক্ষে যান তারা। এরপর তৌহিদ কক্ষের দরজা বন্ধ করে তাদের আটকে দেয়। পরে মাসুমের বন্ধুদের ফোনে জানালে তারা এসে দরজা ভেঙে সবাইকে উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিব বলেন, ‘হামলাকারীরা ছাত্রলীগের কেউ না, এরা দুষ্কৃতকারী। এমন হামলা আমরা মেনে নেবো না। প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’

বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ মাসুম হাওলাদার বলেন, ‘ঘটনার পর পরই আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তৌহিদ যে কক্ষে অবস্থান করছিল সেই কক্ষের দরজার একটা অংশ ভাঙা এবং মেঝেতে রক্ত পড়ে থাকতে দেখি।প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায় জানতে পারি, ১০-১৫ জন লাথি দিয়ে দরজাটি ভেঙেছে। প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নষ্ট করে তারা সবচেয়ে বড় অপরাধ করেছে।’

এদিকে এই ঘটনার তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধানকে সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদারকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতরের পরিচালক ড. তুপন কুমার সরকার, প্রাধ্যক্ষ কাউন্সিলের সদস্য সচিব ও বঙ্গমাতা হলের প্রাধ্যক্ষ নুসরাত শারমিন তানিয়া এবং বঙ্গবন্ধু হলের হাউজ টিউটর রাকিবুল ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ‘আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তদন্ত শেষে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘বিজয় দিবসে যেখানে সারাদেশের বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ, সেখানে আমার ক্যাম্পাসে এ ঘটনা দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’