জাবির সমাবর্তনের নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা, একে অপরকে দুষছে কর্তৃপক্ষ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রায় সাত বছর পর। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে সমাবর্তনপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জটিলতা ও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বিলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

জানা যায়, গত ২৮ জানুয়ারি থেকে সমাবর্তনের রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে, যা ১০ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টায় শেষ হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। তবে রেজিস্ট্রেশনের শুরু প্রথম দিন থেকেই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। আবেদন করতে গেলে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ইনপুট দিলে ভুল নাম প্রদর্শন, একজনের রেজিস্ট্রেশন নম্বরে আরেকজনের তথ্য প্রদর্শন, শিক্ষার্থীর লিঙ্গ পরিবর্তিত, ফলাফল প্রদর্শন না করা, তথ্য প্রদানে একবার ভুল হলে একই মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল দিয়ে পুনর্বার রেজিস্ট্রেশন করতে না পারার মতো সমস্যাগুলো হচ্ছে।

এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ওয়েবসাইটের সার্ভার ডাউন থাকা, রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার কয়েক দিন পার হলেও ভেরিফিকেশন না হওয়া, পিতা-মাতার নামের বানান ভুল, পেমেন্ট ভেরিফিকেশন না হওয়া, শিক্ষার্থীদের তথ্য হালনাগাদ না হওয়া, একাধিক সনদ উত্তোলনের অপশন না থাকাসহ নানা সমস্যার কথা জানান একাধিক শিক্ষার্থী।

এদিকে এই অব্যবস্থাপনার দরুন হতাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে তারা প্রথম দিন থেকে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়ে আসছেন। তবে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার আর মাত্র দুদিন বাকি থাকলেও একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫তম ব্যাচের সমাবর্তনপ্রত্যাশী এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে লগইন করলে আমার নামের জায়গায় আরেকজন মেয়ে শিক্ষার্থীর তথ্য দেখাচ্ছে। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বিষয়টি সমাধান না হলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে নতুন করে আবার রেজিস্ট্রেশন করতে বলেন। তবে রেজিস্ট্রেশন করার সময় আগে যেই ই-মেইল ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেছি, তা করা যাবে না বলে দেখায় সার্ভারে। পরে আমি নতুন মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মঈনুল রাকীব ক্ষুব্ধ হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, ‘টানা তিন দিন ধরে কনভোকেশনের রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে ব্যর্থ হলাম! অনেকে পেরেছেন, তাতে কী! একজনে ও যদি না পারে, সেটিই হবে কনসার্ন। এত বড় আয়োজনে এই আনাড়ি ব্যবস্থা কেন? টাকা নেওয়ার সময় তো কম নিচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি বিভাগ আছে, সিএসই আছে। কাজটি কারা করছে? এখনও সাইট ডেভেলপ করছে। অথচ নিবন্ধনের তারিখ বাড়াচ্ছে না। আগে ঘোষণা দিলে সমস্যা কী হতো? মানুষকে হয়রানি না করলে বাহাদুরি থাকে না?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাবর্তনের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় জড়িত কর্তৃপক্ষ একে অপরকে দুষছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আবু হাসান বলেন, ‘আমাদের কাছে ইনফরমেশনের কোনও সমস্যা নেই। এখন কেন এই সমস্যা হচ্ছে, এটা যারা রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস ও রেজিস্ট্রেশন কমিটি), তারা বলতে পারবে।’

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. সালাহউদ্দিনের কাছে এই সমস্যার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের কোনও দায়ভার নেই। এ দায়ভার সফটওয়্যার যারা ডেভেলপ করেছে এবং কাজ করছে তাদের।’

সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) পরিচালক অধ্যাপক এম শামীম কায়সার বলেন, ‘এটি ডেভেলপ করছি আমরা। তবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস কখনও চিন্তা করেনি যে আমরা সমাবর্তন পুরোপুরি ডিজিটালাইজেশনে নিয়ে গিয়ে করবো। তাই পরীক্ষা অফিস আমাদের যে ডাটাগুলো প্রোভাইড করেছে, সেগুলোয় কিছু ভুল আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে দেওয়া ডেটাগুলো ডিজিটাল ফরম্যাটে ছিল না। ফলে ডেটাগুলোকে কনভার্ট করে সিস্টেমে দেওয়া হয়েছে। এটা পরীক্ষার সার্টিফিকেট রিলেটেড, তাই সিস্টেম এমনভাবে করা হয়েছে, যেন কোনও ধরনের মিসম্যাচ হলে সে সরাসরি কিছু করতে পারবে না। ফলে অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আপাতত সার্টিফিকেটের জন্য যতটুকু তথ্য প্রয়োজন, ততটুকুই ওয়েবসাইটে চাওয়া হচ্ছে। বাকিটা যেন শিক্ষার্থীরা এডিট করতে পারে, সে অপশন রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বাকি সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করছি।’

শিক্ষার্থীদের যারা অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ঝামেলা এড়াতে চায়, তাদের জন্য পুরনো রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে দুটি বুথ চালু করা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক শামীম।

রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা বাড়ানো হবে কি না, জানতে চাইলে অধ্যাপক এম শামীম কায়সার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে দুই দিন সময় বাড়ানো হয়েছে। তবে আমি উপাচার্য স্যারকে অনুরোধ করেছি যেন আরও দুই দিন সময় বাড়ানো হয়।’

সময় বাড়ানোর বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত সচিব জানান, তিনি সমাবর্তন-সংক্রান্ত মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন।