বিশ্ব আবহাওয়া দিবসে শিক্ষার্থীরা

দূষণমুক্ত নির্মল পরিবেশ চায় নতুন প্রজন্ম

আজ বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) পালিত হচ্ছে বিশ্ব আবহাওয়া দিবস। ‘প্রজন্মান্তরে আবহাওয়া, জলবায়ু ও পানির ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য সামনে রেখে উদযাপিত হচ্ছে দিবসটি। দিবসটিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা নিজেদের সচেতনতার বিষয়ের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাজধানীর আবহাওয়া পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। এ ছাড়া সারা দেশেই পরিবেশ সুন্দর রাখতে নানা অবহেলা হচ্ছে। এসব অবহেলাকে ইতিবাচক করে পরিবেশ উন্নত করতে শিক্ষার্থীরাই ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী।

শফিউজ্জামান শাহীন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শফিউজ্জামান শাহীন বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন হবে, এটা স্বাভাবিক বিষয়। মানুষ সৃষ্টির আগেও পৃথিবীতে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়েছিল এবং ভবিষ্যতে হবে। তবে অব্যবস্থাপনার কারণে আবহাওয়ার পরিবর্তন বেশি হচ্ছে। ঢাকার কথা চিন্তা করলে দেখা যায়, এখানকার আবহাওয়ায় প্রচুর পরিমাণে সূক্ষ্ম ধূলিকণা আর গ্রিনহাউস গ্যাস রয়েছে।

শফিউজ্জামান বলেন, ঢাকায় যে পরিমাণে কনস্ট্রাকশনের কাজ হচ্ছে, তার সবই খোলা পরিবেশে। রাস্তার কাজগুলো দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে। এগুলো ডাস্ট তৈরির মূল কারণ।

শাহীন মনে করেন, এই সমস্যাগুলো সমাধানে বিদেশিদের মতো খোলা জায়গাগুলোয় ঘাস-জাতীয় গাছ লাগানো, কনস্ট্রাকশনের কাজে ব্যবহারের জন্য সফট পার্টিকেলগুলো ঢেকে রাখা, ফিটনেস-বিহীন গাড়ি ব্যবহার বন্ধ করা, ময়লা রিসাইক্লিং করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া যেতে পারে।

মো. সৌরভ

জাবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সৌরভের ভাষ্য, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে পরিবেশের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে তাপমাত্রা। এসব কিছু জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। ফলে আবহাওয়া অস্বাভাবিক আচরণ করছে। এর প্রভাব পড়ছে জনজীবনে।

তিনি বলেন, ষড়ঋতুর এই দেশে পুরো বছরে মাত্র চারটি ঋতু পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা আমাদের মতো কোস্টাল রিজিওনের (উপকূলীয় অঞ্চল) দেশের জন্য অশনিসংকেত। এ জন্য আমাদের উচিত পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হওয়া।

পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হাবিবুর হাসানের অভিযোগ, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পরিবেশ বিধ্বংসী কলকারখানা ও বৃক্ষ নিধন। এর প্রভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। যেমন শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষার মতো ঋতুগুলো দীর্ঘতর হচ্ছে। মানুষ নির্মল বাতাস পাচ্ছে না। পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে মানুষের কাজকর্মের প্যাটার্ন। এর সমাধান একটিই, আমাদের আগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা।

খালেদ জুবায়ের শাবাব

ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী খালেদ জুবায়ের শাবাব বলেন, যত্রতত্র ময়লা ফেলা, অপরিকল্পিত নির্মাণসহ আরও অনেক পদ্ধতিতেই আমরা পরিবেশ দূষিত করছি। আমাদের উচিত এসব ব্যাপারে সচেতন হওয়া। শিক্ষার্থীদের ভূমিকা এখানে মুখ্য। সচেতনতা বৃদ্ধিতে তারা যেমন ভূমিকা রাখতে পারবে, তেমনি এসব কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের বিরত রাখতে হবে।

শাবাব বলেন, শিক্ষার্থীদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য চিন্তা করা উচিত, যাতে তাদের আমরা একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ উপহার দিতে পারি। এমন কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের বিরত রাখা উচিত, যা আমাদের আবহাওয়া ও পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।

নোমান বিন হারুন

বিরূপ আবহাওয়ার প্রভাব পড়ে শিক্ষার্থীদের ওপর উল্লেখ করে আইন ও বিচার বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নোমান বিন হারুন বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনাচরণ অনেকটাই নির্ভরশীল। আমরা আবহাওয়ার পরিবর্তনের এক সংকটকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। গ্রীষ্মকালে দিনের বেলায় অত্যধিক গরম ও রাতের বেলায় হঠাৎ শীত। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছি; ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। আমাদের পড়াশোনা ও কার্যক্রমেও তার প্রভাব পড়ছে। এখন সবাই অনেক বেশি অসহনশীল আচরণ করে। পরমতসহিষ্ণুতার প্রভাব কমে গেছে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ দিতে না পারার হার বেড়েই চলেছে।

পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খালিদুর রহমান বলেন, আমরা যে পরিবেশে এখন বেঁচে আছি তা ক্রমেই খারাপ দিকে যাচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে মানুষ নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। তবে আমাদের উচিত পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা। এর জন্য যতটুকু সম্ভব পরিবেশদূষণ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।

রাহাত চোধুরি

পরিবেশ রক্ষায় শিক্ষার্থীদের দায়দায়িত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীরা চাইলে সমাজের প্রতি স্তরে সচেতনতার বীজ বুনতে পারে। আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য নিরাপদ পরিবেশ কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ, তা একমাত্র শিক্ষার্থীরাই ভালোভাবে জানতে পারে, বলেন ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহাত চৌধুরী।

তিনি উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষার্থীরা মানুষকে কীভাবে পরিবেশ নিরাপদ রাখা যায় ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যায়, এ সম্পর্কে মানুষকে শিক্ষা দিতে পারে। আমাদের উচিত বনায়নের পরিমাণ বাড়ানো, যাতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন একটি সুস্থ-সবল পরিবেশে বেড়ে ওঠে, এটাই আমাদের বড় চাওয়া।