বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে ধর্ষণ

ধর্ষণে অভিযুক্ত নেতাকে স্থায়ী বহিষ্কার করে সর্বোচ্চ শাস্তি চাইলো ছাত্রলীগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) হলে স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। 

রবিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল। তিনি বলেন, ‘কোনও অপরাধীর ছাত্রলীগে স্থান নেই। ধর্ষকের কোনও পরিচয় নেই। সে কোনও দলের হতে পারে না। আমরা তাকে গতকাল রাতেই সংগঠন থেকে অব্যাহতি দিয়ে কেন্দ্রে সুপারিশ করেছি। পরে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। আমরা তার কঠোর শাস্তি চাই।’

এর আগে শনিবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-দফতর সম্পাদক সাদি মুহাম্মদ আকাশ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানকে স্থায়ী বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক সংগঠনের শৃঙ্খলা ও মর্যাদা পরিপন্থি কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ায় মোস্তাফিজুর রহমানকে (আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, ছাত্রলীগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা) ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো।’

একই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মোস্তাফিজুর রহমানকে শাখা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। 

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, ‘ছাত্রলীগ কোনও ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না। আমরা তাৎক্ষণিক তাকে অব্যাহতি দিয়েছি এবং কেন্দ্রে স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করেছি। কেন্দ্রীয় কমিটি আমাদের সুপারিশ গ্রহণ করে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে। আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।’ 

এদিকে, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতাসহ চার জনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রবিবার বিকালে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া বেগম এ আদেশ দেন।

রিমান্ডে নেওয়া আসামিরা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বহিষ্কৃত শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান সাগর, ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাগর সিদ্দিক ও ৪৫তম ব্যাচের হাসানুজ্জামান। আসামিরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামানের অনুসারী।

ভুক্তভোগীর স্বামী জানান, তাদের বাড়ি আশুলিয়ার জিরানী এলাকায়। তাদের বাসায় ভাড়া থাকতো অভিযুক্ত মামুনুর রশীদ। মোস্তাফিজের সঙ্গে তার পূর্বপরিচয় ছিল। মাঝেমধ্যে মীর মশাররফ হোসেন হলে মোস্তাফিজের কাছে থাকতো মামুন। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে নিয়ে এসে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসে মামুনুর রশীদ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখে মামলার আসামিরা। এরপর তার স্ত্রীকে দিয়ে নিজের রেখে আসা জিনিসপত্র আনতে বলে মামুন। মামুনের জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন ওই নারী। জিনিসপত্র নিয়ে মামুন হলের ওই কক্ষে রেখে আসে। এরপর তার স্বামী অন্যদিক থেকে আসবে বলে ওই নারীকে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। ওই দিন রাতেই আশুলিয়া থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগীর স্বামী। পরে অভিযান চালিয়ে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে ধর্ষণ, ৪ জনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ

আরও পড়ুন: জাবিতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: ৪ জন রিমান্ডে