ইমাম নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা উপাচার্যের পাশে ছাত্রলীগ, বিক্ষোভ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের

ইমাম নিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। দীর্ঘদিন নতুন নিয়োগ বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগের বোর্ড বসার কথা। তবে নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের একাংশ সকালে উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি করেন।

পরে শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতৃবৃন্দ নিয়োগ চালু রাখার দাবিতে সেখানে প্রবেশ করলে উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাগবিতণ্ডা হয়। এ সময় শিক্ষকরা উপাচার্যের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে উপাচার্যের দাবি, তিনি কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন।

জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম পদে নিয়োগ বোর্ড বসার কথা ছিল। সকাল সাড়ে ৯টায় এ নিয়োগ বোর্ড বাতিলসহ ১২ দফা দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতি। পরে তারা তাদের দাবি নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে অবস্থান করেন। এ সময় তারা উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ বোর্ড বন্ধ রাখার দাবি জানান। একইসঙ্গে কোনোভাবেই বোর্ড করতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন।

এরই মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরামের একাংশ উপাচার্যের কার্যালয়ে দেখা করতে আসেন। তারা উপাচার্যকে নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত দাবি করে নিয়োগ বোর্ড স্থগিতের দাবি জানান। এ সময় তারা দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু চেয়ারে অধ্যাপক নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত অন্যকোনও নিয়োগ দেওয়া যবে না, বিভাগের প্লানিং কমিটির সুপারিশ মোতাবেক বিশেষজ্ঞ সদস্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ শুরু করা যাবে না এবং অভিযোগ ওঠা দুর্নীতির তদন্ত দ্রুত শেষ করতে হবে।

এদিকে, শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে এসে উপাচার্যের পক্ষে শাপলা ফোরাম সমর্থিত শিক্ষকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। এ সময় উভয়পক্ষকে উত্তেজিত হয়ে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করতে শোনা গেছে। তখন প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত হয়ে ঘটনা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। অন্তত একঘণ্টা ধরে নিয়োগ বোর্ডের পক্ষে-বিপক্ষে বাগবিতণ্ডা শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পরে শাপলা ফোরামের শিক্ষকরা নিয়োগ বোর্ড বন্ধের দাবি জানিয়ে উপাচার্যের কার্যালয় থেকে বের হয়ে প্রধান ফটক সংলগ্ন মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে মানববন্ধন করেন।

এদিকে, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বাধার মুখে দুপুর পর্যন্ত নিয়োগ বোর্ড শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তারা নিয়োগ প্রার্থীদেরকে প্রশাসন ভবন থেকে বের করে দেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি টিপু সুলতান বলেন, উপাচার্যের নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ সুরাহা হয়নি। এর মধ্যে তিনি আবারও নিয়োগ দিতে চাচ্ছেন। আমরা কোনোভাবেই এই নিয়োগ বোর্ড হতে দেবো না। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, উপাচার্যের নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মান চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ জন্য আমরা চাই, ইইউজিসির তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব নিয়োগ বন্ধ থাকুক।

তবে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পক্ষ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। তবে ছাত্রলীগ সবসময়ই সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ও ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখতে ভূমিকা পালন করবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম দাবি করেন, আমি কোনও ধরনের নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে কখনও জড়িত নই। ইউজিসি এসব অভিযোগের সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা পায়নি। সততার সঙ্গে এগুলো ফেস (মোকাবিলা) করতে চাই।

তবে জল্পনা কল্পনা শেষে প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত (বিকাল সাড়ে ৩টায়) পুনরায় উপাচার্যের বাসভবনে নিয়োগ বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।