জাবির ভর্তি পরীক্ষায় শিফট পদ্ধতি, বৈষম্যের শিকার ভর্তিচ্ছুরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) একই ইউনিটে একাধিক শিফটে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকেই বৈষম্যের অভিযোগ করে আসছেন ভর্তিচ্ছুরা। জানা গেছে, এই পদ্ধতিতে এক শিফট থেকে অনেকে মেধা তালিকায় স্থান পাচ্ছেন, কিন্তু অন্য শিফট থেকে সেই হার অনেক কম। শিফট ভিত্তিক প্রশ্নের ধরন সমান না হওয়াকেই বৈষম্যের কারণ বলে মনে করছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অনেকেই। তারা দীর্ঘদিন ধরে এই পদ্ধতি পরিবর্তনের দাবি করে আসছেন। হয়েছে অনেক আন্দোলন। তবে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগ নেই। এ জন্য প্রতি বছরই ভর্তি পরীক্ষায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ভর্তিচ্ছুরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা মোট পাঁচটি ইউনিট এবং একটি ইনস্টিটিউটের অধীনে গত ২২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ২৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। গতবারের মতো এবারও ছাত্র ও ছাত্রীদের আলাদা পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এবার ‘এ’ ইউনিটে ছাত্রদের চার ও ছাত্রীদের দুই শিফটে, ‘সি’ ইউনিটে ছাত্রদের দুই ও ছাত্রীদের তিন শিফটে, ‘ডি’ ইউনিটে ছাত্র ও ছাত্রীদের পৃথক চার শিফটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

২০২৩-২৪ সেশনের বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলে দেখা যায়, গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদ এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজিভুক্ত ‘এ’ ইউনিটে ছাত্রদের ২২৩ আসনের জন্য চার শিফটে পরীক্ষা নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে প্রথম শিফট থেকে ৪৫ জন, দ্বিতীয় শিফট থেকে ৪৮ জন, তৃতীয় শিফট থেকে ১০৫ জন এবং ষষ্ঠ শিফট থেকে মাত্র ২৫ জন মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন। একই ইউনিটে ছাত্রীদের ২২৩ আসনের জন্য দুটি শিফটে পরীক্ষা নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে প্রথম শিফট থেকে ১৮৩ জন মেধাতালিকায় স্থান পেলেও দ্বিতীয় শিফট থেকে পেয়েছে মাত্র ৪০ জন।

জীববিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিটে ছাত্রদের ১৫৫টি আসনের জন্য চার শিফটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় শিফট থেকে ৩২ জন করে, তৃতীয় শিফট থেকে ৪৪ জন এবং চতুর্থ শিফট থেকে ৪৭ ভর্তিচ্ছু মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন। কিন্তু এই ইউনিটে ছাত্রীদের ফলাফলে শিফট ভিত্তিক বৈষম্য চরমে। ১৫৫টি আসনের বিপরীতে প্রথম ও তৃতীয় শিফট থেকে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন ১৪৯ জন। দ্বিতীয় ও চতুর্থ শিফট থেকে স্থান পেয়েছেন মাত্র ছয় জন।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার এ পদ্ধতিতে মেধার সঠিক যাচাই হয় না উল্লেখ করেছেন বিভিন্ন ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা একক প্রশ্নে ভর্তি পরীক্ষা নিতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন।

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে একক প্রশ্নে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও জাবিতে শিফটভিত্তিক হয়। শিফট পদ্ধতির ফলে কোনও শিফটে বেশি, কোনও শিফটে সুযোগ পায় খুবই কম। প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের আশেপাশে থাকা স্কুল-কলেজে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অথর্ব প্রশাসন প্রতিবারই এ পদ্ধতির সংস্কারের কথা বললেও সময় আসলে নীরব থাকে।’

পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রববানী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলসহ বিভিন্ন সময়ে কতৃর্পক্ষকে ভর্তি পরীক্ষার এ পদ্ধতি সংস্কারের কথা বারবার বলা হয়েছে। গত বছর এ নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনও আলোচনাই করেনি। এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে তিনটি পদক্ষেপই যথেষ্ট বলে আমি মনে করি। সেগুলো হলো- ভর্তি পরীক্ষায় ইউনিট কমানো, আবেদন করার ক্ষেত্রে যোগ্যতা বাড়িয়ে দেওয়া এবং নিজেদের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়ানো কিংবা আশপাশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।’

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘একটা সময় বিভাগ ভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়া হতো। বর্তমানে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। শিফট ভিত্তিক এই পদ্ধতিতে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কারণ, একাধিক শিফটে একাধিক প্রশ্ন হওয়ায় মান রক্ষা করা হয় না। আমি একক প্রশ্নে বিভাগ ভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া উচিত মনে করি। এর মাধ্যমে সত্যিকারের মেধাবী বেছে নেওয়া ও বৈষম্য দূর করা সম্ভব।’

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, ‘আমরা আশা করি, আগামী বছর ছয় হাজার আসন বিশিষ্ট পরীক্ষার হল ও ক্লাসরুম হয়ে গেলে সেখানে বড় সংখ্যক ভর্তিচ্ছুর পরীক্ষা নিতে পারবো। তখন শিফট কমে আসবে। আশা করি, আগামী বছর থেকে এ সমস্যাটি আর থাকবে না।’