জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রক্টরের পদত্যাগ

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান। একইসঙ্গে নতুন প্রক্টরের দায়িত্ব পেয়েছেন পরিসংখ্যান ও উপাত্তবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলমগীর কবীর। 

সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বিষয়টি জানানো হয়েছে। অফিস আদেশ থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানের লিখিত অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে প্রক্টরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ও উপাত্তবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবীরকে আজ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি প্রচলিত নিয়মে সুবিধাদি ভোগ করবেন।

২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পান আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান। তিন বছর ১০ মাস পর ২০২২ সালের নভেম্বরে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাঁচ বছরের বেশি দায়িত্ব পালনের সময়ে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সমালোচিত হন। 

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে হলসংলগ্ন জঙ্গলে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে জড়িত ও সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে, নিপীড়কদের সহায়তাকারী হিসেবে অভিযুক্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলমের অপরাধ তদন্ত এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রশাসনিক পদ থেকে তাদের অব্যাহতিসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলন করতে থাকেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’।

নিজেদের দাবির পক্ষে ১১ মার্চ অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। তিন দিন অবরোধের পর গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ওই আলোচনায় উপাচার্য আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করেন ১৭ মার্চের মধ্যে প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলম পদত্যাগ করবেন। যদি পদত্যাগ না করেন, তাহলে ১৮ মার্চ তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে পদত্যাগ করলেন প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান।

আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বিভিন্ন সময়ে নানা অপরাধ ধামাচাপা দিয়ে অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। সেইসঙ্গে তার দায়িত্ব তিনি যথাযথভাবে পালন করেননি।

এদিকে, প্রক্টরের পদত্যাগে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, ‌‘প্রক্টরের পদত্যাগ প্রমাণ করলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও ধর্ষকের সহায়তাকারীর স্থান নেই। আমরা অপরাধীদের তদন্তের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি, যাতে আগামীতে কোনও প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা কেউ এরকম দুঃসাহস করতে সাহস না দেখায়।’

নবনিযুক্ত প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবীর বলেন, ‘আমি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’