মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্যের অভিযোগ জাবির ডিনের বিরুদ্ধে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আইন ও বিচার বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী কাওসার আহমেদ রেজাউল অভিযোগ করে বলেছেন, ‘আমরা যারা মাদ্রাসা থেকে এসেছি, ক্লাসে আমাদের নানাভাবে হেনস্তা করা হয়। ক্লাসে কোনও প্রশ্ন করলে উত্তর তো দেওয়াই হয় না বরং উল্টো প্রশ্ন করে বলা হয়, তুমি কি মাদ্রাসা থেকে এসেছো? দাড়ি-টুপি পরে আছো! মাদ্রাসাছাত্র হলে কি আমার প্রশ্ন করার অধিকার নেই?’

রবিবার (১১ জুলাই) আইন বিভাগের ডিন তাপস কুমার দাস ও সহযোগী অধ্যাপক সুপ্রভাত পালের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে এ বক্তব্য দেন তিনি।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা আইন অনুষদের ডিন তাপস কুমার দাস ও সহযোগী অধ্যাপক সুপ্রভাত পালের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন, ফলাফল পরিবর্তন, কোটা আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ আরও অনেক অভিযোগ করেন।

মানববন্ধনে ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আলী আহসান মর্তুজা বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আমি আন্দোলনে অংশ নিই। ২২ জুলাই পুলিশের গুলির মুখে আমরা আত্মসমর্পণ করি। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য আইনি সুপারিশ সেল গঠন করা হয়। আইন অনুষদের ডিন ও বিভাগের চেয়ারম্যান তাপস কুমার সেই সেলের সদস্য। তাপস স্যারকে জানানো হলে তিনি বলেন, আমি নাকি হিজবুত তাহরিরের লোক, আমি নাকি দুষ্কৃতকারী। যেখানে অন্য বিভাগের শিক্ষকরা আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে নিচ্ছেন সেখানে আমার ডিপার্টমেন্টের স্যার এসব বলেন!’

৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরশাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ডিপার্টমেন্টের ভাই-বন্ধুদের পুলিশ ধরে নিচ্ছে। আর ডিন হিসেবে তার কাছে সহযোগিতা চাওয়া হলে তিনি বলেন, হল বন্ধ, ভার্সিটি বন্ধ তাহলে তোমরা ক্যাম্পাসে কী করো? এসব বলে আমাদের চার্জ করতেছিলেন। আমরা অনেকেই আশপাশের এলাকাগুলোতে ভাড়া থাকতাম। তিনি কি এসব বলে শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করতে পারেন?’

আরশাদুল আরও বলেন, ‘রাহী আটক হওয়ার পর এক সিনিয়র ভাই তাপস স্যারকে আটক শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে আনার জন্য বললে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। তিনি ওই ভাইকে বলেন, তোমার বাড়ি কোথায়? আটক হওয়া ছাত্রের বাড়ি কোথায়? তুমি তাকে কীভাবে চেনো? সে যে শিবির না, নৈরাজ্যকারী না তুমি তা কীভাবে জানো? আরেক শিক্ষার্থী সৃজন পুলিশের গুলিতে আহত হলে তার বাবা কল দিয়ে সহযোগিতা চাইলে তিনি সৃজনের বাবার সঙ্গেও বাজে আচরণ করেন। বলেন, আপনার ছেলের কত বড় সাহস সে ছাত্রলীগের বিপক্ষে কথা বলে। এটা একজন টিচারের আচরণের মধ্যেই পড়ে না। আমরা তার পদত্যাগ চাই।’

সহযোগী অধ্যাপক সুপ্রভাত পালের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তোলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সুহার্ত্য দৌলা অনিক বলেন, ‘গত ২৭ জুন আমার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। আমি তাড়াহুড়ো করে ক্লাসে আসি এবং দ্বিতীয় সারির একটি বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিতে শুরু করি। তাড়াহুড়োয় আমার ফোনটা রাখতে মনে ছিল না। পরীক্ষার একদম শেষপর্যায়ে আমার ফোনটা বেজে উঠলে তিনি বলেন, আমি নকল করছি। আমি নকল করিনি বললে তিনি আমাকে সবার সামনে থাপ্পড় মারেন। আমার ফোন নেওয়ার পর দেড় মাস পার হলেও এখনও তিনি ফোন ফেরত দেননি।’

এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লামিয়া আক্তার বলেন, ‘অনিক সেকেন্ড বেঞ্চে ছিল। স্যারদের সামনে থেকে নকল করা সম্ভব ছিল না। তারপরেও তিনি ওর গায়ে হাত তোলেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি এটা করতে পারেন না।’

বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে নম্বর কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনে শিক্ষার্থী জামিয়াতুন নাহু বলেন, ‘শিক্ষকরা খাতা মূল্যায়নের সময় পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে থাকেন। যে সকল শিক্ষার্থী তেলবাজির মাধ্যমে তাদের মন জুগিয়ে চলেন তারা সুনজরে থাকেন। এর প্রভাব রেজাল্টে দেখতে পাই।’

একই অভিযোগ তোলেন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাশরুর রহমান। তিনি বলেন, ‘যে সকল অভিযোগ শিক্ষার্থীরা তুলেছে তা খুবই পুরোনো। কিন্তু এত দিন আমরা বলতে পারিনি। ছাত্রলীগ দিয়ে, সাবেক সরকারের অঙ্গসংগঠন দিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখা হয়েছিল। কতিপয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্দিষ্ট কিছু প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য অনার্স ও মাস্টার্সের শেষের দিকে আমাদের সিজিপিএ কমিয়ে দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুপ্রভাত পাল তাপস কুমারের বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়র। অনেক যোগ্যপ্রার্থী থাকার পরেও তাপস কুমার তাকে নিয়োগ দেন। তারপর সুপ্রভাত পালের বর্তমান স্ত্রী এবং তৎকালীন গার্লফ্রেন্ড বনশ্রী রানিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বনশ্রী রানির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাতিল হওয়া এক নিয়োগে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।’

শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে আইন অনুষদের ডিন তাপস কুমার দাস ও সহযোগী অধ্যাপক সুপ্রভাত পালকে ফোন করা হলেও তাদের কোনও সাড়া মেলেনি।