বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর, হল প্রভোস্টসহ সব কর্মকর্তা পদত্যাগ করায় বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিকসহ অন্যান্য সব কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। কবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে এবং পাঠদান শুরু হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্টার থাকলেও সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় তিনি পুরোপুরি হাত গুটিয়ে বসে আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের গুলিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদকে হত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরীফুল ইসলামসহ পুরো প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ করে। এরপর উপাচার্য অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ পদত্যাগ করলে একে একে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৯ জন কর্মকর্তাই পদত্যাগ করেন। এর মধ্যে রয়েছেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক বিজয় মোহন চাকি, পরিবহন পুলের পরিচালক ড. কামরুজ্জামান, পরিচালক গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক গাজী মাযহারুল আনোয়ার, প্রভোস্ট মীর তামান্না সিদ্দিকা, তিন হলের সব কো-প্রভোস্ট, তিন সহকারী প্রক্টর সাইফুল ইসলাম, ড. সাজ্জাদ হোসেন পাটোয়ারী, ছাত্র পরামর্শক সৈয়দ আনোয়ারুল আজীম, সব হলের কো-প্রভোস্ট, ট্রেজারার অধ্যাপক মজিব উদ্দিন আহাম্মেদ। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়টি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে।
আবু সাঈদ ছিলেন বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। পুলিশ তাকে জনসমক্ষে গুলি করে হত্যা করার পর ছাত্র আন্দোলনের ঢেউ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে এ আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারত চলে যান শেখ হাসিনা।
আন্দোলনের সময় আবু সাঈদ পুলিশের অস্ত্রের সামনে দুই হাত প্রশস্ত করে বুক চেতিয়ে বলেন, ‘গুলি কর।’ মুহূর্তেই তাকে একাধিক গুলি করে পুলিশ। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনিমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হল খুলেছে। তবে ক্লাস হয় না। কবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হবে কেউ বলতে পারে না। চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন পার করছি আমরা।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েদের একমাত্র হলে প্রভোস্ট, কো-প্রভোস্ট না থাকায় আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছি।’
অপর এক শিক্ষার্থী আহসান হাবিব বলেন, ‘ছেলেদের দুটি হলে প্রভোস্ট, কো-প্রভোস্ট নেই। অভিভাবকহীনভাবে হল চলছে। কবে ক্লাস শুরু হবে কেউ বলতে পারছেন না।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য না থাকলে চলবে না। সব কাজ ওনাকে ছাড়া হবে না। উপ-উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে আগেই। ফলে দায়িত্ব পালনের মতো কেউ নেই।’
এ বিষয়ে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘উপাচার্য ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় অচল। প্রশাসনিক নির্দেশনা তিনি ছাড়া আর কারও দেওয়ার এখতিয়ার নেই। এখন আমাদের যত দ্রুত সম্ভব উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া পাওয়া যায়নি।