ঢাবির বাংলা বিভাগে হিজাব বিতর্ক: ভুক্তভোগীর ৩ দাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে হিজাব-নিকাব পরা নিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন বিভাগটির ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীর নাম তাহমিনা আক্তার তামান্না। এ ঘটনায় কাউকে দায়ী না করে সিস্টেমের বিচার চেয়ে ৩টি দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ দাবি জানান।

দাবিগুলো হলো—

১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা ও ভাইভার সময় সনাতনী পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের চেহারা দেখে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করতে হবে।

২। বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করার আগে নারী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ও ভাইভায় নারী শিক্ষিকার মাধ্যমে শনাক্ত করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৩। নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘটিত প্রতিটি নিপীড়ন ও হেনস্তার যথাযথ তদন্ত-সাপেক্ষে সব নিপীড়কদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিড়ম্বনার ঘটনা সম্পর্কে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষা শুরুর পর স্যার খাতা সই করার সময় আমাকে মুখ খুলতে বললে আমি দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে ছিলাম। স্যার বলেছেন, ‘বসো, বসে মুখ খুলো, চেক করতে হবে তো আমার।’ 

তামান্না বলেন, আমি নিকাব খুলতে অসম্মতি জানালে স্যার অ্যাটেন্ডেন্স শিটটা নিয়ে আমার খাতা সাইন না করে দিয়ে দেন। বলেন, ‘ঠিক আছে রাখো তোমারটা, একটু পর সাইন করছি।’ একটু পর চেয়ারম্যান স্যার উঠে আসেন। আমার পিছে ম্যাম এসে দাঁড়ান। তারপর আমাকে ম্যাম বলেন, ‘কী ব্যাপার কোনও সমস্যা? স্যারকে সাইন করাতে দাও নাই কেন? কোনও সমস্যা? মুখ দেখাবে না?’ আমি চুপ করে থাকলে ম্যাম বলেন তাকে দেখাতে। আমি একপাশ ফিরে ম্যামকে দেখাই। পরে ম্যাম সাইন করেন। পাশাপাশি বলেছিলেন সবসময় তো নারী টিচার থাকবেন না। তখন চেয়ারম্যান স্যার বলেন, ‘ওকে জিজ্ঞেস করেন তো ও ভাইভাতে কী করবে?’ তখন ম্যাম আমাকে বলেন, ‘ভাইভাতে কী করবে? মুখ খুলবে না?’ আমি মাথা নিচু করে না বলি। তখন ম্যাম বলেন, ‘ভাইভা বোর্ডে তো মহিলা টিচার নাও থাকতে পারেন তখন? পরে চেয়ারম্যান স্যার বলেন, ওর জন্য কী অন্য টিচাররা সব ভাইভা বোর্ড থেকে বের হয়ে যাবে? ও মুখ খুলবে না তাই চলে যাবে বের হয়ে? দেশটা যে কী হচ্ছে, নরক হয়ে গেছে দেশটা।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমার আসলে শিক্ষকদের নিয়ে কিছু বলার নেই। কারণ উনারা বারবারই নিয়মের কথা বলেন। আর এটা সত্যিই যে নিয়মের মধ্যেই আসল ঝামেলা। আমি চাই নিয়ম পরিবর্তন হোক। আমার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। কোনও শিক্ষকের কিছু হোক সেটা চাই না। কারণ তাদের হাতে কিছু নেই। আমি চাই পরীক্ষার নিয়ম পরিবর্তন করা হোক। না হয় পরের পরীক্ষায়ও এটা ফেইস করা লাগবে, ভাইভাতেও। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নয়, কথা বলা উচিত সিস্টেমটা নিয়ে।

এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা তো নিয়মের বাইরে যেতে পারবো না। আমি ওকে সেরকম কিছুই বলিনি। আমি শুধু বলেছি ভাইভাতে তুমি কী করবে? তোমার জন্য কী শিক্ষকরা বের হয়ে যাবে? এটা বলে আমি চলে আসি এবং আমাদের একজন নারী শিক্ষক মেয়েটির খাতায় সই করেন।