গণপরিবহনের ভাড়া কমাতে সরকারের নির্দেশনা নেই

গণপরিবহনজ্বালানি তেলের দাম কমলেও যাত্রীভাড়া কমেনি গণপরিবহনের। এই ভাড়া যেন না কমে সেজন্য একাট্টা হয়ে আছেন পরিবহন মালিকরা। এছাড়া, গণপরিবহনে যাত্রীভাড়া কমাতে সরকারেরও কোনও নির্দশনা নেই। নির্বিকার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং বিআরটিএ। এর সুযোগ পুরোটাই নিচ্ছেন পরিবহন মালিকরা। আগে যেভাবে ভাড়া আদায় করা হতো, এখনও সেভাবেই চলছে। ডিজেলের দাম যে হারে কমেছে, তাতে পরিবহন মালিকরা খুশি নন।তাদের দাবি, প্রয়োজনের তুলনায় সামান্যই কমেছে জ্বালানি তেলের দাম। একারণে যাত্রীভাড়ার ওপর এর কোনও প্রভাব পড়বে না। এর ফলে যাত্রীদের মনে সৃষ্টি হয়েছে চরম অসন্তোষ।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার মধ্যরাত থেকে দাম কমেছে ডিজেল ও কেরোসিনের লিটারপ্রতি ৩ টাকা এবং পেট্রোল ও অকটেন ১০ টাকা। গণপরিবহনের প্রধান জ্বালানি ডিজেল। ডিজেলচালিত বাসগুলো মূলত আন্তঃজেলা রুটে চলাচল করে। রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী টার্মিনাল থেকে এগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে  যায়।
সোমবার সায়েদাবাদ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, কোনও রুটেই যাত্রীভাড়া কমানো হয়নি। কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, চাদপুর, নোয়াখালী রুটে যাত্রীভাড়া আদায় করা হচ্ছে আগের মতোই। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪৫ পয়সা হিসেবে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কুমিল্লা রুটের তিশা পরিবহনের এক চালক বলেন, ভাড়া কমাতে মালিকরা নির্দেশ দেননি। এ কারণে আমরা আগের মতোই ভাড়া আদায় করছি।
নোয়াখালী রুটের যাত্রীসেবা পরিবহনের নেতা দেলোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ডিজেলের মূল্যহ্রাসে কোনও মালিক খুশি নন। তারা আমাদের জানিয়েছেন, অন্তত দশ টাকা কমালে যাত্রীভাড়া কমানো যেত। তিন টাকা মূল্যহ্রাসে ভাড়া কমানোর সম্ভাবনা নেই। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

মহাখালী আন্তঃজেলা টার্মিনালকেন্দ্রিক বাস মালিক সমিতির নেতা আবুল কালাম বলেন, তেলের দাম আরও বেশি কমলে ভালো হতো। ডিজেলের দাম যে তিন টাকা কমেছে, সেটার জন্য যাত্রীভাড়া কমবে বলে মনে হয় না।

‘অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কোম্পানিজ’-এর সভাপতি খন্দকার রফিকুল হুদা কাজল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিগত দিনে তেলের দাম বাড়লে সঙ্গে-সঙ্গে আমরা যাত্রীভাড়া বাড়াতে পারিনি। এজন্য একমাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। এবার সবেমাত্র তেলের দাম কমলো। দেখি সরকার কী বলে? তিনি বলেন, আমাদের দেশের বাস্তবতাটা ভিন্ন। কোনও জিনিসের দাম একবার বাড়লে আর কমতে চায় না। এছাড়া, পরিবহন ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি শুধু তেলের ওপরই নির্ভরশীল নয়। ভাড়া নির্ধারণের সঙ্গে যন্ত্রাংশ, ব্যাংক লোনের বিষয়ও রয়েছে। এখানে তেলের দামের প্রাধান্য বেশি নয়। তিনি বলেন, তেলের দাম কমেছে। কিন্তু বেড়েছে যন্ত্রাংশের দাম। এবার যে পরিমাণ দাম কমানো হয়েছে, সেটাও যথেষ্ট নয়। তারপরও দেখা যাক সরকার কী বলে।

আরও পড়তে পারেন: চরমোনাই পীরের মাহফিলের পোস্টার, হাটহাজারী মাদ্রাসার ব্যানার ও দাওয়াতপত্র মাহফিল স্থগিত করলেন চরমোনাই পীর

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান বলেন, ডিজেলের মূল্য হ্রাসে আমরা খুশি নই। আরও কমাতে হবে। তিনি বলেন, এ অবস্থায় কোনও ট্রাক মালিক পণ্য পরিবহনের ভাড়া কমাতে চাচ্ছেন না।

গণপরিবহনে যাত্রীভাড়া না কমানোয় যাত্রীদের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গুলিস্তান কমপ্লেক্সের সামনে দাঁড়িয়ে যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তেলের দাম বাড়লে বাসভাড়া বাড়াতে সময় লাগে না। মালিকরা নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়িয়ে দেন। এরপর সরকার একের পর এক সভা করে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এবার তেলের দাম কমলেও কোনও বাসেই ভাড়া কমেনি। বরং কনডাক্টররা বলছেন, ভাড়া কমবে না। কোনও মালিক নাকি ভাড়া কমাতে চান না।

হ্রাসকৃত জ্বালানি তেলের সঙ্গে সমন্বয় করে গণপরিবহনের ভাড়া কমানোর দাবিতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

ভাড়া কমানো নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি-বিআরটিএ সোমবার পর্যন্ত কোনও উদ্যোগ নেয়নি। যোগাযোগ করা হলে বিআরটিএ-এর পরিচালক (প্রশাসন) মশিয়ার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তেলের দাম কমায় ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। এ জন্য শিগগিরই ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটির সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি সার্ভিসের বাসগুলো মূলত সিএনজি ব্যবহার করে। এ কারণে ডিজেলের দাম কমলেও সিএনজিচালিত বাসে যাত্রীভাড়ায়ও কোনও প্রভাব পড়ছে না। সোমবার বেলা চারটায় কলাবাগান এলাকায় আসা এটিসিএল বাসের চালক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের বাস তো সিএনজিতে চলে। এ কারণে আমরা আগের মতোই ভাড়া আদায় করছি।

আরও পড়তে পারেন: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় ঢামেকের পুরনো ভবন!

জ্বালানি গ্যাসের দাম বাড়লে গত বছর ১ অক্টোবর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী গণপরিবহনে প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীভাড়া বাড়ে ১০ পয়সা। সে অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হয় বড় বাসে প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা ও মিনিবাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা।

জানা গেছে, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশে জ্বালানির দাম বাড়ে লিটারপ্রতি পেট্রোল ও অকটেন ৫ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিন ৭ টাকা। তখন দাম বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রোল ৯৬ টাকা এবং কেরোসিন ও ডিজেল ৬৮ টাকা।

বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমে ২০১৪ সালে জুনে। তখন বাংলাদেশে জ্বালানির দাম কমানো হয়নি। এজন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ভর্তুকির লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার যুক্তি দেখায় সরকার। সর্বশেষ সোমবার মধ্যরাত থেকে জ্বালানির দাম কমায় সরকার।

/এমএনএইচ/