‘আসামি হাজির’

স্বভাবসুলভ খুনসুটি দিয়ে মেয়র হিসেবে কাটানো একবছর পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে তিনঘণ্টা সময় কাটালেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। কী করতে চান আর এক বছরে কী করেছেন সেসব নিয়ে বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকিতে উপস্থিত হয়েছিলেন বাংলা ট্রিবিউন কার্যালয়েই।​

কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করে তিনি সবার উদ্দেশে বললেন,‘আসামি হাজির’। তাকে ধরার জন্য সবাই প্রস্তুত উল্লেখ করে তিনিই বললেন, ‘আমার কোনও প্রস্তুতি নেই’। 

কিন্তু পরের তিন ঘণ্টা তাকে একেবারেই অপ্রস্তুত মনে হয়নি। পুরো সময়টা তিনি তার কাজের হিসেব দেওয়ার পাশাপাশি নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়েও যে ঢাকা শহরকে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে তৈরি করতে চেয়েছেন সেটা বারবারই বললেন।

বৈঠকির সঞ্চালক মিথিলা ফারজানা মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসী রক্ষা পাবেন কবে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, আমার করণীয় কিছু নেই। মশারাতো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে অনুমতি নেয় না। তাদেরতো পাসপোর্ট দেওয়া লাগে না। আমার এলাকার বাইরে লাগোয়া জায়গাতেও যদি মশার জন্ম হয়, আইনত আমি কিছু করতে পারি না। সরকারি জায়গায় বংশবিস্তার করলে আমি কিছু করতে পারি না।আমার কাছে টাকা থাকলেও আইনত আমি ওখানে টাকা খরচ করতে পারি না। ফলে আমি কবে রাজধানীবাসীকে মশামুক্ত করতে পারবো জানি না।

এসময় সাংবাদিক প্রভাষ আমিন নির্বাচনের আগে মেয়রের সাইকেল চালনার প্রচারণা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, নির্বাচনের পর একবারও ঢাকার রাস্তায় সাইকেল চালিয়েছেন কিনা বা রাস্তায় সাইকেলের জন্য পৃথক লেন আছে কিনা। প্রশ্নকর্তা আরও বলেন, মেয়র তার হাতে ক্ষমতা নেই এবং প্রতিটা অভিযোগে চাইলেই কোনও না কোন কর্তৃপক্ষের দিকে আঙুল তুলতে পারেন। কিন্তু জনগণ আপনাকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে জানে, আর কোনও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জনগণের বোঝাপড়া নেই।

আরও পড়তে পারেন:

তিন বছর পর ভিন্ন ঢাকা দেখবেন: আনিসুল হক

এর উত্তরে মেয়র বলেন, দেখার চোখ বদলাতে হবে। আসলেই আমার এসব করার ক্ষমতা নেই। ক্ষমতার বাইরে গিয়ে আমি কাজ করার চেষ্টা করছি। আমার বুদ্ধি কম, সাহস বেশি। মাস্তানি করে রাস্তা ফাঁকা করছি, বিলবোর্ড সরিয়েছি মাস্তানি করেই। আমি আসলেই বাসযোগ্য ঢাকা উপহার দিতে চাই। যদিও আমাদের ঢাকাবাসীর শৃঙ্খলার অভাবের কারণে কাজটি খুব কঠিন।

একইভাবে বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের পাঠানো প্রশ্ন তার সামনে তুলে ধরতে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জুলফিকার রাসেল বলেন, ক্ষমতার বাইরে গিয়ে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি দেওয়ার দরকার কী? উত্তরে স্বভাবসুলভ সাহসী উচ্চারণ মেয়রের: যা করছি ক্ষমতার বাইরে গিয়েই করছি। মেয়রের কাজ ময়লা পরিষ্কার আর রাতে আলোর ব্যবস্থা করা। এর বাইরে কিছুই করণীয় নেই। কিন্তু মানুষের ভোগান্তির কথা ভেবে আমি রাস্তার ইউল্যুপ নিয়েও ভাবছি। তবে রাজধানীতে বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা বিষয়ে পাঠকদের পাঠানো প্রশ্নের উত্তরে মেয়র ঠিক আগের মতোই কোনও দায়িত্ব নেননি নিজের কাঁধে। তিনি বলেন,‘পানি যেন না জমে বলছেন, বৃষ্টি হলে পানি জমে, বৃষ্টির পানি প্রথমে সসার ড্রেন দিয়ে স্ট্রম ড্রেনে এরপর খালে, এরপর তুরাগ নদীতে যায়। আমাদের ১২০০ কিলোমিটার সসার ড্রেন (রাস্তার পাশে ছোট ছোট ছিদ্র) আছে।সেখানে থেকে স্ট্রম ড্রেনে গেলে দায়িত্ব তো আর আমার না। সেখান থেকে যাওয়ার কথা খালে, কিন্তু সে খাল কোথায়? মাস্তানি করে যাচ্ছি, করবো। তাতে কাজ উদ্ধারও হয়।

রাস্তায় রাজনৈতিক ব্যানার লাগালে সিটি করপোরেশনের অনুমতি লাগবে জানিয়ে মেয়র বলেন, অনুমতি নিয়ে ব্যানার লাগাতে হবে। যারা অনুমতি নিচ্ছে তারা নিয়ম মেনে লাগাচ্ছে।

এসময় প্যানেল থেকে প্রশ্ন আসে সরকারি দলের কারও ব্যানারের ক্ষেত্রে এ নিয়ম কার্যকরী হবে কিনা। মেয়র বলেন, গত শুক্রবারই তিনি সরকারি দলের এক নেতার ব্যানার নামিয়ে ফেলতে বলেছেন। তখন এমন অনুমতি বিরোধী দলগুলো পাবে কিনা প্রশ্নে তিনি হেসে বলেন,‘পাচ্ছেতো। যে আসে সেই পায়।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ছাড়াও মিথিলা ফারজানার সঞ্চালনায় বৈঠকিতে উপস্থিত ছিলেন, পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সালেহ উদ্দিন, সিক্স সিজনস হোটেলের পরিচালক কাজী আকিব শামস, স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও স্থপতি খন্দকার আনসার হোসেন, সাংবাদিক ও কলামিস্ট প্রভাষ আমিন, বাংলা ট্রিবিউনের প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদ, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান ও বাংলা ট্রিবিউনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জুলফিকার রাসেল। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে একাত্তর টেলিভিশন।​

/ইউআই/টিএন/

আরও পড়তে পারেন: 

রোয়ানুর আঘাতে উপকূল লণ্ডভণ্ড, নিহত ২০