সাধারণ মানুষের ভাবনা

বাজেট মানে দাম বাড়া দাম কমা

‘কাম করি খাই, বাজেট কি? এরশাদের আমলে ১২ আনায় (৭৫ পয়সা) জুতা কালি করতাম এখন ২০ টাকায় করি। এই হিসাব আমি জানি। বাজেট দিয়ে আমি কী করুম।’ ফুটপাতে বসেই ব্যবসা করেন মুচি বাবু। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘বাজেট নিয়ে আমাদের চিন্তা করলে হবে না। কাম না করলে কেউ ভাত দিবে না। জিনিসপত্রের দামতো বাড়তেই থাকে। এই বাজেট করে লাভ কি?’

বাজেট-নিয়ে-ভাবনায়-শ্রমজীবী-মানুষ

ফুটপাতে বসে তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে মুচিগিরি করছেন। হাতের কাজ রেখে বাজেট বিষয়ে কথা বলার ব্যাপারে তার কোনও আগ্রহ পাওয়া যায়নি।

দেশের খেটে খাওয়া মানুষের ঘামে অর্থনীতি সচল থাকে। তাই বৃহস্পতিবার দুপুরে বাজেট বিষয়ে তাদের কয়েকজনের মতামত ও বক্তব্য নেওয়া হয়। কথোপকথনে তারা বাজেট সম্পর্কে তাদের কোনও আগ্রহ নেই এমনটা জানালেও প্রত্যেকেই অনুধাবন করেন বাজেট হলেই প্রত্যেক বছর নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসহ সব কিছুর দাম বাড়ে। কোনওটা কমার কথা থাকলেও সেটা আর কমে না।

একটি জনকল্যাণ রাষ্ট্রের বাজেট উপস্থাপনার আগে সে দেশের সব নাগরিকের অংশগ্রহণ ও মতামত গ্রহণ করা হয়। বাজেটের আগে বিশদ আলোচনাও হয়। বাংলাদেশেও মানুষের মতামত চাওয়া হয়। তবে এই বেশিরভাগ সময়েই কাগুজে ও লোক দেখানো পর্যায়েই থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর চর্চা তেমন দেখা যায় না।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন শুরু করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এবিষয়ে খেটে খাওয়া ও নিম্নআয়ের মানুষের কয়েকজনের কাছে মতামত ও বক্তব্য জানাতে চাওয়া হয়। তবে কথা বলতে গিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সাধারণ মানুষেরই বাজেট নিয়ে আগ্রহ নেই। তারা জানেনও না আসলে বাজেট কী।  

কারওয়ান বাজারে কাঁচামালের ব্যবসা করেন সবুর। বাজেট নিয়ে তার ভাবনা জানতে চাইতেই তিনি হেসে দেন।

সবুর বলেন, ‘বাজেট নিয়ে ভাই আমরা কি বলব? বড়বড় মাথা কাজ করে। আমরাতো রাস্তায় ব্যবসা করি। এসব আমি কিছু জানি না।’

‘প্রবৃদ্ধি সঞ্চারে নতুন মাত্রা’—এই স্লোগানকে সামনে রেখে নতুন বছরের জন্য ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে সম্ভাব্য ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। বাজেটের এই পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)’র ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ।

রাজধানীতে প্রায় সাড়ে ৪ লাখেরও বেশি রিকশাচালক রয়েছে। যাদের ঘামে দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রয়েছে। সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছেন শাহ আলম (৩৫)। দুই বছর ধরে তিনি রাজধানীতে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।বাজেট বিষয়ে তার কোনও কিছু জানা আছে কিনা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বলেন, ‘এটাতো দাম বাড়ানোর মতলব। এরপরই সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে।’

তিনি বাজেটের কোনও প্রয়োজনীয়তাই দেখছেন না। প্রতিবছর জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে তার ক্ষোভও রয়েছে। অল্প উপার্জন দিয়ে পরিবারের খরচ চালানোটাই তার জন্য কষ্টের বলে জানালেন।

পোশাক কারখানায় কাজ করেন রিতু (২১)। বাগেরহাট থেকে ছয়মাস হলো ঢাকায় আসছেন। ফার্মগেটের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন তিনি। রিতু বলেন, ‘বাজেট সরকার করে। বাজেট সরকারের কাজ। আমরা এ নিয়ে কী বলব? আমি জানি না কিছু।’

রাজধানীতে হেঁটে চা-সিগারেট বিক্রি করে করিম। বাজেট বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিগারেটের দাম বাড়বে জানি। বাজেটে প্রতিবছর সিগারেটের দাম বাড়ে। এবারও বেড়েছে। আরও বাড়বে বলে জানতে পেরেছি।’

বাজেট নিয়ে সাধারণ মানুষের ভাবনা না থাকলেও তাদের বিশ্বাস প্রতিবছর বাজেটের কারণে পণ্যের দাম বাড়ে।

/এআরআর/টিএন/

/আপ: এইচকে/