ডিএনসিসি-ডিএসসিসিতে ১৬ ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত হলেও নির্দেশনা নেই

ডিএনসিসি-ডিএসসিসিএকমাসেরও বেশি সময় আগে ঢাকার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অধীনে আনতে সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু এ সংক্রান্ত আর কোনও তৎপরতা এখনও শুরু হয়নি। লিখিত নির্দেশনাও পায়নি সিটি করপোরেশন দুটি। ফলে ইউনিয়নগুলোকে নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।  সরকারের এ সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর হবে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।
 উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) ৯ মে’র সভায় পার্শ্ববর্তী ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে যে ৮টি ইউনিয়ন যুক্ত হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, বেরাইদ, ভাটারা, বাড্ডা, সাতাঁরকুল, হরিরামপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও ডুমনি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যুক্ত হচ্ছে- শ্যামপুর, মাতুয়াইল, ডেমরা, দনিয়া, নাসিরাবাদ, সারুলিয়া, দক্ষিণগাঁও ও মান্ডা।

ইউনিয়নগুলো যুক্ত হওয়ার পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আয়তন দ্বিগুণ হয়ে যাবে। ১২৯ বর্গকিলোমিটার থেকে বেড়ে ২৭০ বর্গকিলোমিটার হবে রাজধানী শহরের আয়তন। এছাড়া ইউনিয়নগুলোর যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও দেখভাল করবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

জানা গেছে, নিকারের সিদ্ধান্তের পর সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ইউনিয়নগুলোর উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। কিন্তু সরকার থেকে কোনও লিখিত নির্দেশ না পাওয়ায় এগুতে পারছেন না তারা।

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মো. বিলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা এখনও মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত কোনও চিঠি পাইনি। চিঠি পাওয়ার পর ইউনিয়নগুলো সম্পর্কে করণীয় নির্ধারণে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসব।

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (ইউনিয়ন পরিষদ) মো. মাহবুবুর রহমান সোমবার দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নিকারের সিদ্ধান্তের পর ইউনিয়নগুলোর সীমানা নির্ধারণ করবে ঢাকা জেলা প্রশাসন। তারা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে জানালে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে।

আলোচিত ইউনিয়ন পরিষদগুলোর তদারক করে ঢাকা জেলা প্রশাসনের অধীন তেজগাঁও উন্নয়ন সার্কেল। এই সার্কেলের কর্মকর্তা (সিও) শেখ মো. কামাল সোমবার বিকালে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নিকারের সভায় সিদ্ধান্ত হলেও ইউনিয়নগুলো হস্তান্তর বিষয়ে কোনও গেজেট হয়নি। এখনও সীমানা নির্ধারণও হয়নি। তবে শিগগিরই এসব কার্যক্রম শুরু হবে।

জানা গেছে, নগরীর পার্শ্ববর্তী হলেও একটা ইউনিয়নও পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেনি। প্রতিটি ইউনিয়নেই রয়েছে ঘিঞ্জি ও ঘনবসতি। মামলাজনিত কারণে বেশ কয়েক বছর এসব ইউনিয়নে নির্বাচন হয়নি। স্থানীয় সংসদ সদস্যরাই এগুলোর উন্নয়ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন। জনপ্রতিনিধি সেজে নানা সুবিধা ভোগ করছেন চেয়ারম্যান-মেম্বাররা। ইউনিয়নগুলোতে নাগরিক সেবা একেবারেই নেই বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, দীর্ঘদিন ধরে যেসব চক্র উন্নয়ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করে ফায়দা লুটে আসছিলেন, তারাই এখন অত্যন্ত গোপনে ইউনিয়নগুলোকে সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা করছেন। তাদের ছত্রছায়ায় সুবিধাভোগীদের দিয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করে দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

আরও পড়তে পারেন: আড়ালেই থেকে যাচ্ছে ‘ক্রসফায়ারে’র মূল গল্প

/এমএসএম/এমএনএইচ/