ইশরাতকে আর্টিজানে নামিয়ে বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন ড্রাইভার রাজু

ঝুম বৃষ্টির মধ্যে গুলশানের ১১৬ নম্বর সড়কে গাড়ি যখন ঢুকছে তখন বেলা দশটা। আশপাশ দেখে বোঝার উপায় নেই মাত্র এক কিলোমিটার দূরে গত শুক্রবার কী ভয়ানক হত্যাযজ্ঞ ঘটে গেছে। বাংলাদেশ তার ইতিহাসের বেদনাদায়ক অধ্যায়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে।
ইশরাতের বাসার দরজাদু’দিন হলো জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০জন। তাদেরই একজন ইশরাত আখন্দ। তার গুলশানের বাসার পথে এসব ভাবতে ভাবতে পৌঁছে যাই ওয়েসিসে। সেখানে গত তিনবছর ধরে বাস করছেন শিল্পী ইশরাত আখন্দ।

বাসার দারোয়ানদের অনুরোধ করে লিফটের চারে গিয়ে থমকে যায় চোখ। আটকে যায় ইশরাতের বাসার দরজায়। ডোরভিউয়ের ঠিক নিচে লেখা: পিস অ্যান্ড গ্রেস টু বি দিস প্লেস। এ ফ্রেজের হুবহু বাংলা কী হবে চোখ কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ভাবতেই স্তব্ধ চারপাশ: ‘এখানে শান্তি ও কল্যাণ বিরাজ করে’।
ইশরাত রোজ বাইরে থেকে ঘরে ফিরতেন শান্তির টানে, কল্যাণের আহ্বানে। সেই ইশরাতকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো।
ইশরাতের বন্ধুরা জানান, ও নিয়মিত ‘আই অ্যামহ্যাপি টুডে’ বলে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিতো। কোন আইডিয়া, স্থান, কোন ইমেজকে নিয়ে আইঅ্যামহ্যাপিটুডে হ্যাশট্যাগকে বাঁচিয়ে রাখতে বন্ধুদের উদ্যোগ: এখন থেকে রোজ তারা এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করবেন। আমাদের বন্ধু কারোর ক্ষতি করেননি। তিনি পরিস্থিতির শিকার। তাকে আমরা, তার কাজকে আমরা ধরে রাখতে চাই নানাভাবে।
IMGরবিবার সকালে ইশরাতের বাসার কেয়ারটেকার ফয়সাল বলেন, শুক্রবার রাতে ম্যাডাম বাসায় ফেরেননি। শনিবার সকালে আমাকে কল দিয়েছেন ম্যাডামের ড্রাইভার রাজু। রাজুই প্রথম জানায় ম্যাডামকে সে ওখানে নামিয়ে দিয়ে এসেছে, যেখানে গোলাগুলি হয়েছে।আমি সঙ্গে সঙ্গে ম্যাডামের ফোনে কল দিয়েছি, কিন্তু কোনও জবাব আসেনি। রাজু কী ম্যাডামকে নামিয়ে দিয়ে চলে এসেছিল জানতে চাইলে ফয়সাল বলেন, একই প্রশ্ন আমি করেছিলাম। সে বলেছে ম্যাডাম তাকে বলেছিল দিয়ে চলে যেতে। কাজ শেষ হলে কল দেবে তখন নিয়ে যেতে। এরপর তো এসব ঘটনা ঘটেই গেল।
ইশরাতের বাসায় কাজ করতেন যিনি তিনি হঠাৎই শুনলেন তার মালিককে কে বা কারা মেরে ফেলেছে, তার চাকরি নেই। শনিবার এসে ঘুরে গেছেন। রবিবারও আশেপাশে ঘুরছেন বৃষ্টির মধ্যে। তিনি বলেন, ম্যাডামের ঘর টিপটপ। সারাঘরে কত ছবি। সব ছবির তিনি নিজে যত্ন নিতেন। কী নামী মানুষ। দাঁত থাকতে আমরা দাঁতের মর্যাদা বুঝি না। উনি খুব অন্যরকম ছিলেন।
ইশরাত আখন্দের এমন প্রস্থানে তার সঙ্গীত বন্ধু শান্তনু বিশ্বাস ফেসবুকে লেখেন এভাবে,‘ইশরাত, আমি কি জানতাম, শাড়ির সাদা জমিনটা এমন লাল হয়ে উঠবে? কেন
বাইরে খেতে যাও, এতো ভাল রান্না করো? কেন গেলে বাইরে যেখানে কিছুক্ষণ পর ঈশ্বরের নাম নিয়ে মাতাল হয়ে উঠবে রক্তভূক উচ্ছৃঙ্খল অন্ধকার। তোমাকে হারিয়ে ফেলার অগাধ কষ্ট আমার গলা পর্যন্ত উঠে আসছে, আমি কিছুতেই কিছু করতে পারছি না। তুমি কি বুঝতে পারছো, অনুভব করছো ইশরাত...?’
এরই মধ্যে কথা হয় তার মামা সাঈফ হাসানের সঙ্গে। মা আর ভাই থাকেন উত্তরা তিন নম্বর সেক্টরে। মামা তখনও জানেন না কখন ভাগ্নির লাশ নিয়ে আসার জন্য ডাক আসবে। তিনি বলেন, আমরা নিজেরা অপেক্ষা করছি। আমাদের সঙ্গে এখনও কেউ যোগাযোগ করেনি।
উল্লেখ্য, গুলশানে জঙ্গি হামলায় নিহত ২০ জনের নাগরিকত্ব ও পরিচয় পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ১৭ জন বিদেশি ও ৩ জন বাংলাদেশি। বিদেশিদের মধ্যে ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি ও একজন ভারতীয়। নিহত ১৩ জনের পরিচয় পাওয়া গেলেও রাত ১০টা পর্যন্ত জাপানি ৭ জনের নাম ঠিকানা জানাতে পারেনি দেশটির দূতাবাস।

আরও পড়ুন: নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক প্রকৌশলী হাসনাত করিম আটক?

/এমএসএম/আপ-এমও/