মঙ্গলবার রাতে র্যাবের সরবরাহকৃত ২৬২ নিখোঁজ ব্যক্তির নামের তালিকায় ২৬১তম নামটি জিলানী ওরফে আবু জান্দাল। সে সিরিয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হয়েছে। আইএস -এর পত্রিকা দাবিক এর দাবি, সে (জিলানী) আবু জান্দাল আল বাঙালি। জিলানীর বাবা কর্নেল মশিউর বিডিআর বিদ্রোহের সময় নিহত হন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
রাজধানীর গুলশান হামলায় জড়িত সন্দেহে এক তরুণীসহ চারজনের ছবি প্রকাশের প্রায় ১০ ঘণ্টা পর ২৬২ জন নিখোঁজের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে র্যাব, যেখানে জিলানীর নাম উল্লেখ আছে।ওই তালিকায় সারাদেশের নিখোঁজ ব্যক্তিদের ছবি, ঠিকানা ও সাধারণ ডায়েরির (জিডি) কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বুধবার মধ্যরাতে র্যাবের ফেসবুক অফিসিয়াল পেজে এই তালিকাটি প্রকাশ করা হয়। এই তালিকার ২৬১ নম্বরে থাকা জিলানী ইতোমধ্যে সিরিয়ায় নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করেন এমন একটি গবেষকদল কিছুদিন আগে জিলানীকে চিহ্নিত করতে পারেন। সেখানে দাবি করা হয়, জিলানী মিলিটারি ইন্সটিটিউশন অব সায়েন্স অ্যাণ্ড টেকনোলজিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থী ছিল।
জঙ্গি সংগঠন ‘ইসলামিক স্টেট’ (আইএস)-এর হয়ে যুদ্ধ করতে ইতোমধ্যে সিরিয়া ও ইরাকে গেছেন ১৩ বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে ডেসকোর কর্মকর্তা, এমআইএসটির সাবেক ছাত্র, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার এবং চিকিৎসকও রয়েছেন। বাংলাদেশে আইএস নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ করতে গিয়ে গতবছর একটি গোয়েন্দা সংস্থা এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে।
জিলানীর বাল্যবন্ধু নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি তাকে শৈশব থেকেই চিনতেন। কারণ তাদের উভয়ের বাবা সেনাবাহিনীতে ছিলেন।
দাবিকের ১৪৩৭ রজব এর ১৪তম ইস্যুতে দাবি করা হয়, জিলানী বাংলাদেশ সেনা কর্মকর্তার সন্তান যিনি ‘বিডিআর বিদ্রোহের’ সময় নিহত হয়েছেন। সেই প্রবন্ধে বলা হচ্ছে, ‘জিলানী তার তরুণ বয়সের শেষ সময়ে আসল ইসলামি ডাক পান, যখন তিনি শায়েখ আনোয়ার আল আওলাকির বক্তৃতা শুনতেন। যখন সিরিয়ায় খালিফা ঘোষণা দেওয়া হয়, সেই শুরুর সময়েই জিলানী তাওহিদ ও খলিফার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করতে শুরু করে। দাবিকের মতে, জিলানী যখন দেশ ছাড়তে চায়, তখন সে মধ্যপ্রাচ্যে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কনফারেন্সের নাম করে যাওয়ার পথ নিশ্চিত করতে চেয়ে বাধার সম্মুখীন হয়। কারণ, কলেজের ‘পাপের পরিবেশের’ কথা বলে সে ইতোমধ্যেই কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। সে পরবর্তীতে একটি রেফারেন্স লেটার ও অর্থ সংগ্রহ করতে সমর্থ হন এবং সিরিয়ার পথে যাত্রা করেন।
র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ এরই মধ্যে গণমাধ্যমকে বলেন, নিখোঁজদের অনেকেই জঙ্গিগোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। সূত্র বলছে, বাংলাদেশ থেকে যারা ইরাক ও সিরিয়া গেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ডেসকোর কর্মকর্তা সোহান, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার নজিবুল্লাহ আনসারী, এমআইএসটি-র সাবেক ছাত্র জিলানী। তা ছাড়া খিলগাঁওয়ের একজন চিকিৎসক সপরিবারে সিরিয়ায় পাড়ি জমান। যারা অধিকাংশ তুরস্ক হয়ে সিরিয়া ও ইরাকে যান।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর জানা যায়, হামলাকারীরা দীর্ঘদিন ধরে পরিবার থেকে বাইরে গিয়ে নিখোঁজ ছিল। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে পরিবারকে জানাতে অনুরোধ করে র্যাব ও পুলিশ। এই অনুরোধের পর সারাদেশে বিভিন্ন পরিবার তাদের নিখোঁজ সদস্যদের কথা উল্লেখ করে স্থানীয় থানায় জিডি করে।
/এপিএইচ/