গুলশান আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও শোলাকিয়ায় হামলার পর জড়িত তরুণদের নিখোঁজ থাকার বিষয়টি সামনে আসে। এর পরই যখন নানাভাবে নিখোঁজ তরুণদের নাম ও ছবি প্রকাশ করা হচ্ছে, ঠিক তখনই ফেসবুকে জঙ্গিপাতাগুলোয় এদের নিয়ে কোনও কথা না বলার পরামর্শ প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া ব্লগ, অনলাইন ব্যবহারে সতর্ক থাকার পরামর্শও দিচ্ছে আনসার আল ইসলাম। পাশাপাশি তাদের ফেসবুক পেজে সম্মেলন করে নানা বিষয়ে প্রশ্ন-উত্তর পর্বও পরিচালনা করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা মনিটরিংয়ের কথা বললেও এ ধরনের কোনও কার্যক্রমই থামানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
তাদের পাতায় আওয়ামী লীগ বিরোধী প্রচারণাও চলছে দেদারসে। একটি পোস্টে লেখা, তাগুত যত বেশি জনগণকে চেপে ধরবে আমাদের দাওয়াহ ততো সহজে জনগণের কাছে তুলে ধরা যাবে... কেননা এদেশের জনগণের ৯৫ শতাংশ যে কোনও মূল্যে আওয়ামী লীগের পতন চায়... তাই, আবারও বলছি, হাসিনার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমকে নস্যাৎ করতে চূড়ান্ত নিরাপত্তা নেওয়ার পাশাপাশি আম-ভাবে এই কার্যক্রমের ফলে সাধারণের ওপর আসন্ন জুলুম ও নিপীড়নের বাস্তবতা সহজ ও বিশদাকারে তুলে ধরা জরুরি... যার যার অবস্থান থেকে... এবং এর জন্য এখনই সর্বোৎকৃষ্ট সময়।
তারা মনে করে, এখন জিহাদ প্রাসঙ্গিক। আল-কায়েদা প্রাসঙ্গিক। হারবি হত্যা প্রাসঙ্গিক... সাধারণের আগ্রহ যখন তুঙ্গে, সে সময় যদি আপনি তাদের খোরাক না মেটাতে পারেন তাহলে আর কবে? তাই এখনই এ বিষয়কে সামনে রেখে আমাদের বুকলেট, লিফলেট, আম-বয়ান, ভিডিও, পোস্টারিং (নিরাপত্তা বজায় রেখে)– ইত্যাদি যা যা সম্ভব সবই করা উচিৎ।
অনলাইনে ঘোষণা দিয়ে সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ‘সালাউদ্দিনের ঘোড়া’ পেজ থেকে সরাসরি আইএসের বিষয়ে প্রশ্নত্তোর পর্ব আয়োজন করা হয়। মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ সেখানে পাকিস্তান বা আফগিন্তানে যাওয়ার পথ জানতে চায়। কেউ কেউ ‘মুজাহিদ ভাই এবং জিহাদি কাজের জন্য সাহায্য করতে চাই’ বলে উল্লেখ করলে এগুলো ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’, ‘পরে জানানো হবে’ উত্তর দেওয়া হয়।
অনলাইন ব্যবহারে কেন সতর্ক হতে হবে তাদের, কীভাবে তাদের নিজেদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে হবে তা নিয়ে নানা পোস্টে ছেয়ে গেছে পাতা। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গুলশান হামলার পর পেজটিতে বেশি পোস্ট দেওয়া হয়েছে।
তারা এত নিরাপদে দেশবিরোধী পোস্ট কিভাবে দিয়ে যাচ্ছে এবং এগুলো ঠেকাতে করণীয় জানতে চাইলে জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণা করা নির্ঝর মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ধরনের প্রচারণা বন্ধ করার প্রথম পদক্ষেপ হলো- এ ধরনের সব পেজ, প্রোফাইল এবং সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটগুলো সুনির্দিষ্ট মনিটরিং মেকানিজমের আওতায় আনা। এগুলো নিয়মিত বন্ধ করা হলেও আবার চালু হয়ে যায় এবং অনেক সাধারণ মানুষ, যারা জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে, তারা লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় নিয়ে শাস্তি প্রদান জরুরি। জঙ্গিদের নির্দিষ্ট কিছু ট্যাগ এবং কি-ওয়ার্ড আছে। সেগুলো কোথায় ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটা নজরদারি করা গেলে এই কাজটা অনেকাংশে সহজ হয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে যথেষ্ট মনিটরিং আছে উল্লেখ করে পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা সতর্ক। দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
/এজে/