গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী ৫ জঙ্গির সাথে গত মঙ্গলবার কল্যাণপুরের অভিযানে নিহত জঙ্গিদের কোনও না কোনও যোগাযোগ ছিল বলে মনে করছেন জঙ্গিবাদ গবেষকরা। তারা বলছেন, উভয় ক্ষেত্রে প্রকাশিত ছবি বিশ্লেষণেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও এসব ছবির মিলগুলো ধরিয়ে দিতে অনেকেই সচেষ্ট রয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই ছবিগুলো তদন্তের স্বার্থে বিশ্লেষণ করছেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।
গুলশানের হামলার পর দায় স্বীকার করে সাইট ইন্টিলিজেন্সের মাধ্যমে হামলাকারীদের একজন নিরবাস ইসলামের যে ছবিটি দেখানো হয়, সেখানে নীল কাপড়ের ওপর আইএস -এর একটি পতাকা দিয়ে কালো পাঞ্জাবি ও স্কার্ফ পরিহিত হাসি মুখে নিরবাস একে -২২ রাইফেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এদিকে মঙ্গলবার কল্যাণপুরের বাসার জানালায় যে আইএস এর পতাকা ঝুলানোর ছবি পুলিশ প্রকাশ করেছে, তার একপাশে ঝুলে আছে সেই একই রঙের নীল কাপড় (একই পুরুত্বেরও মনে হয় ছবি থেকে), যেটা ছবি তোলার সময় পতাকার ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে হাজির করা হয়েছিল নিরবাসসহ ৫ জঙ্গির ছবিতে। তার মানে দাঁড়ায় এরা কোনও না কোনোভাবে একই সাথে ছিল এবং ছবি তোলার ক্ষেত্রে একই ব্যাকগ্রাউন্ড ও পোশাকই ব্যবহার করা হতো বলে দাবি বিশ্লেষকদের।
জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণা করেন এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কল্যাণপুরের ছবিটা দেখেই চমকে উঠেছিলাম। তারপর মিলিয়ে দেখলাম এদের যোগাযোগ না থেকে যায়-ই না। এদের সাথে আইএস এর যোগাযোগ হয়েছে এবং এরা এখানে ছবি তুলে নেটওয়ার্কে পাঠানোর ব্যবস্থা করতো।
এদিকে জঙ্গিবাদ ও তাদের অনলাইন অ্যাক্টিভিটিজ নিয়ে গবেষণা করছেন নির্ঝর মজুমদার, তিনি মঙ্গলবার ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর ফেসবুকে লিখেছেন, গত কাল নিহত হওয়া জঙ্গিদের ছবি দাবিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিলো। শুরুতে সেটা শুধু মাত্র একটা পর্যবেক্ষণ হলেও এখন বিষয়টাতে আমি নিশ্চিত।
এবিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সাথে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, গতকাল নিহত হওয়া জঙ্গিরা এবং এর আগে নিহত হওয়া জঙ্গিরা পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল এবং এদের সাথে আইসিসের যোগাযোগ ছিল। গতকাল কল্যাণপুরে নিহত হওয়া জঙ্গিরা এবং গুলশানের হলি আর্টিজানে নিহত হওয়া জঙ্গিরা কোনও না কোনোভাবে পরস্পরের সম্পৃক্ততায় ছিল।
ওপরের ছবিটি বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, বাম পাশের ছবিটি জঙ্গি নিবরাসের, যেটি আইসিসের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল গুলশানের হামলার পর। ডান পাশের ছবিটি কল্যাণপুরের, প্রকাশ করেছে পুলিশ। দুই ছবিতেই আইসিসের পতাকার শেড হিসেবে একই রকমের নীল কাপড়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। এমনকি সবকয়টি ছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ড (দেয়ালের রঙ) মিলে যাচ্ছে। সেটাও মিলিয়ে দেখা দরকার।
এদিকে কবে নাগাদ বাসায় উঠেছিল এরা, সেটা জানলেও এই হিসাব মেলানো সম্ভব হতো বলে মনে করছেন এই গবেষকদল। পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলছেন, কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের ‘তাজ মঞ্জিল’ নামে ৫৩ নম্বর বাড়িটির পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাট গত ২০ জুন ভাড়া নেয় অভিযুক্ত জঙ্গিরা। কিন্তু একাধিক সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, ঈদের পর এই মেসটি ভাড়া নেয় এই জঙ্গিরা।
নির্ঝর মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গুলশানের ঘটনায় আইসিসের প্রধান নিউজ এজেন্সি আমাক, আইসিসের ম্যাগাজিন দাবিকে প্রকাশিত ছবি ও কল্যাণপুরের ঘটনায় প্রকাশিত ছবিগুলোর মধ্যে উপকরণগত প্রচুর মিল লক্ষণীয়। পূর্বে প্রকাশিত ছবিগুলোতে জঙ্গিদের ব্যবহৃত পোশাক, মাথার স্কার্ফ, পেছনের পতাকার ব্যাক গ্রাউন্ডে যে মিল লক্ষ্য করা যায়, তাতে এটা অনুমান করা অমূলক নয় যে, এদের সাথে পূর্বের ঘটনাগুলোতে নিহত ও জড়িত জঙ্গিদের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ছিল। পূর্বের ঘটনাগুলোর সাথে কল্যাণপুরের জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা কতদূর রয়েছে, সেগুলো খোঁজার জন্য এই বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করছি।
এপিএইচ/
আরও পড়ুন:
কল্যাণপুরে নিহত তিন জঙ্গির পরিচয় নিশ্চিত করেছে পরিবার
কল্যাণপুরে গ্রেফতার হাসান হোসনি দালান হামলায়ও জড়িত