এ অবস্থায় পর্যটনখাতের উন্নয়নে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সংকট কাটিয়ে উঠতে সুদমুক্ত ঋণ ও ট্যুরিজম টাস্কফোর্স গঠনসহ ১২টি প্রস্তাব বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (টোয়াব)।
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি টোয়াব-এর সভাপতি তৌফিক উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে ১২টি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে। ওই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সরকারিভাবে ২০১৬ সালকে পর্যটনবর্ষ ঘোষণা করা হলেও পর্যটকদের আস্থা না ফেরাতে পারলে লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। এ কারণে পর্যটকদের আস্থা ফেরাতে নিরাপত্তাসহ এ খাতে বিশেষ প্রণোদনার দাবি করেছেন তারা।
এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত ইন-বাউন্ড ট্যুর অপারেটররা (কমপক্ষে পাঁচজন) যাতে আগামী ২-৩ বছর আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলায় সরকারি খরচে সৌজন্যমূলকভাবে অংশ নিতে পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। আর বিদেশি পর্যটকরা যাতে বেশি বেশি আসতে পারেন, সে জন্য তারকা হোটেলগুলোতে ভাড়া হ্রাস করার ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে পর্যটনখাতের এ ব্যবসায় সংগঠনটি।
টোয়াব-এর প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, আগামী ১ ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকাতে ২-৩ দিন ব্যাপী ‘শো-কেস বাংলাদেশ ’আয়োজন করা উচিত। এ অনুষ্ঠানে সব স্টেকহোল্ডার ও বিদেশি কাউন্টারপার্টদের বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে ট্যুরিস্ট জেনারেটিং দেশগুলোয় বাংলাদেশ মিশন ও দূতাবাসগুলোতে নিয়মিতভাবে ব্যবসা, পর্যটন ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত তথ্য হালনাগাদ করার ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে টোয়াব। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড থেকে প্রতি সপ্তাহে একটি হালনাগাদ বিজ্ঞপ্তি ট্যুরিস্ট জেনারেটিং দেশগুলোর বোর্ড, সংবাদমাধ্যম, দূতাবাস ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে পাঠানো হয়।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিহামলায় বিদেশি হত্যাসহ জঙ্গি তৎপরতায় বিপাকে পড়েছেন দেশের ট্যুর অপারেটররা। নুতন করে বিদেশি পর্যটকদের বুকিং কমে গেছে। পুরনো বুকিং থাকলেও অনেক বিদেশি পর্যটক বুকিং বাতিল করেছেন। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে দেশে পর্যটনখাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অব বাংলাদেশ একাধিক বৈঠক করেছে ব্যবসায়ীদের নিয়ে।
গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশি নিহত হন। সেই হামলায় নিহতদের মধ্যে নয়জন ইতালীয়, সাত জাপানি নাগরিক ছিলেন। এই দুই দেশসহ ইউরোপ, যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যটকদের বাংলাদেশে বুকিং বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত বেশি সংখ্যক বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে আসেন। তবে বাংলাদেশে আসার এই সময়ের বুকিংগুলো সম্পন্ন হয় জুন থেকে আগস্ট মাসের মধ্যেই। গত দুই মাসে বুকিংয়ের সংখ্যা খুবই কম।
এ প্রসঙ্গে ‘গ্রীণ বাংলা ট্যুরস’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হালিম খান বলেন, এক কথায় পর্যটনখাতে ধস নেমে এসেছ। এ অবস্থার পরিবর্তন কবে হবে, কীভাবে হবে জানি না। নতুন করে দেশের বাইরে থেকে বুকিং পাচ্ছি না।
ট্যুর অপারেটরস অব বাংলাদেশের পরিচালক তৌফিক রহমান বলেন, ইতালি, জাপান, ইউরোপ, যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যটকদের বুকিং একদমই নেই। এসব ছাড়াও অন্য দেশের পর্যটকদের বিষয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী হামলা শুধু বাংলাদেশের নয়, এই সমস্যা বিশ্বব্যাপী। ফলে, আমাদের পর্যটকদের দৃষ্টি আর্কষণ করতে হবে। নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।
তৌফিক রহমান বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়কে ১০টি প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের ব্যবসায়ীরা অন্যদেশের যেসব ট্যুর অপারটেরদের সঙ্গে ব্যবসা করেন, তাদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে আশ্বস্ত করতে শো-কেস বাংলাদেশ আয়োজন করার প্রস্তাব আমরা দিয়েছি। সরকার সহায়তা করলে এই সংকট কাটানো সম্ভব। দেশের বাইরে আমাদের নিজেদের আরও বেশি করে উপস্থাপন করা জরুরি।
ট্যুর অপারেটরস অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনায় পর্যটনখাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সংকট কাটাতে আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে ১০টি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আশা করছি, সরকার সংকট নিরসনে উদ্যোগী হবে।
ব্যবসায়ীদের সুদমুক্ত ঋণ প্রসঙ্গে জ্যোতির্ময় বর্ম্মণ বলেন, এই সুবিধা প্রদানের সরকারের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। তবে ব্যবসায়ীরা চাইলেই যে কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে পারবেন।
আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান জ্যোতির্ময় বর্ম্মণ।
/সিএ/এবি/
আরও পড়ুন
হাতিটি এখন বাংলাদেশের আতিথেয়তায় থাকুক চায় ভারত
নরসিংদীতে ব্যতিক্রমী ঘুড়ি উৎসব