কৌশলগত সম্পর্ক আসলে কী?

চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ও চীনের ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্বের সম্পর্ক এখন ‘কৌশলগত’ সম্পর্কে উন্নীত হলো।’ সঙ্গত কারণেই আলোচনায় এখন নতুন শব্দবন্ধ ‘কৌশলগত সম্পর্ক’। কিন্তু, এই কৌশলগত সম্পর্ক বলতে ঠিক কী বুঝিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী?

চীনের প্রেসিডেন্টের আগমণ উপলক্ষে সজ্জিত ঢাকা এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনের কথা হয় বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত ছিলেন এমন কয়েকজন সাবেক রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে। তাদের মধ্যে মুন্সি ফায়েজ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কৌশলগত শব্দটি শুনলেই অনেকে সামরিক বা নিরাপত্তার বিষয় বলে মনে করেন। কিন্তু এখানে ‘কৌশলগত’ শব্দটি আসলে অর্থনৈতিক সম্পর্কে বোঝানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হবে দুই দেশের সরকার। ফলে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপ্তি ও গভীরতা বাড়বে এবং দূরবর্তী সময়কে বিবেচনা করে দুই দেশ কর্মপন্থা ঠিক করবে।’

মুন্সি ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ তিনি একাধারে চীনের প্রেসিডেন্ট, কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি এবং মিলিটারি কমিশনের প্রধান। আগে চীনের কোনও প্রেসিডেন্টের হাতে এত ক্ষমতা ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-চীনের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক আঞ্চলিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

ভারতে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত লিয়াকত আলী চৌধুরী বলেন, ‘এখানে ‘‘কৌশলগত সম্পর্ক’’ শব্দটি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নয়। ভবিষ্যৎ উন্নয়নের রূপ কী হবে এবং এর জন্য কী ধরনের অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রয়োজন হবে সেটি এই সম্পর্কের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওয়ান বেল্ট-ওয়ান রোড উদ্যোগের সঙ্গে বাংলাদেশ যুক্ত হলো। এখন দুই দেশ এ বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করবে।’

বাংলাদেশ-চীন অর্থনৈতিক সুসম্পর্ক আঞ্চলিক ক্ষেত্রে কোনও নেতিবাচক বার্তা দেবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নেতিবাচক প্রভাব পড়ার মতো সম্পর্ক ঢাকা কখনও করেনি। তাই আঞ্চলিকভাবে প্রতিবেশী দেশগুলো অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একে অপরের বিষয়ে নাক গলাবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের কারণে ঢাকার উন্নতি হলে গোটা অঞ্চল লাভবান হবে। কারণ চীন ও ভারত এখানে নিজেদের স্বার্থে ব্যবসা করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চীন যদি বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন করে বা রাস্তা করে দেয় তবে সেটি ভারতও ব্যবহার করতে পারে। তাই আমি মনে করি না যে, বাংলাদেশ-চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক কারও মাথাব্যথার কারণ হবে।’

শুক্রবার চীনের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রসচিব এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই দেশের অংশীদারিত্বের সম্পর্ক এখন কৌশলগত। চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। তাই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে চীন সহায়তা দিয়ে থাকে।’

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ‘ওয়ান বেল্ট-ওয়ান রোড’ উদ্যোগ নিয়েছেন এবং বাংলাদেশসহ ৩০টির বেশি রাষ্ট্র এ উদ্যোগে যোগ দিয়েছে। প্রস্তাবিত এ রুটের মাধ্যমে এশিয়ার মধ্য দিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা যাবে। আবার সমুদ্রপথে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা সম্ভব হবে।

/এসএসজে/এসএনএইচ/